10-09-16-boilar-blast-pakaging-tongi-26

বয়লার নয়, গ্যাস টেনে আনার বুস্টার মেশিনে বিস্ফোরণের পর গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীর টাম্পাকো ফয়লস কারখানায় অগ্নিকান্ড ঘটে বলে তিতাস কর্মকর্তাদের ধারণা।ওই ঘটনায় তিতাস কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি এখনও প্রতিবেদন না দিলেও কমিটির এক সদস্েযর কথায় একই ধরনের ইংগিত পাওয়া গেছে।গত ১০ সেপ্টেম্বর ওই কারখানায় বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে ছাদের একটি অংশ ধসে পড়লে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অন্তত ৪০ জন।বয়লার বিস্ফোরিত হয়ে ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে বলা হলেও বয়লার পরিদর্শক মো. শরাফত আলী জানিয়েছেন অন্য কথা।কারখানায় বয়লার বসানোর জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় থেকে অনুমোদন নিতে হয়।বয়লার পরিদর্শক মো. শরাফত আলী জানান, টাম্পাকো কারখানায় দুটি বয়লার ও একটি থার্মোফ্লুইড হিটার ছিল। তারা একটি বয়লার ব্যবহার করত।কারখানার দুটি বয়লারই অক্ষত রয়েছে। বয়লারের কারণে নয়, অন্য কোনো কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে।

তিতাস কর্মকর্তারা জানান, টাম্পাকোতো দুটি বয়লার ব্যবহার করা হলেও তাদের কেবল দুই টনের একটি বয়লার ব্যবহারের অনুমোদন ছিল। কর্তৃপক্ষকে না জানিয়েই ১.২ টনের আরেকটি বয়লার বসিয়েছিল তারা।তিতাসের টঙ্গী বিপণন অঞ্চলের ব্যবস্থাপক অজিত চন্দ্র দেব সাংবাদিকদের বলেন, গ্যাসের চাপ কম থাকলে অনেক কারখানায় বুস্টার পাম্প মেশিন বসিয়ে গ্যাস টেনে নেওয়া হয়, যদিও তা অবৈধ। বুস্টার বিস্ফোরিত হয়ে ওই কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি,বলেন তিনি।অজিত চন্দ্র জানান, ওই কারখানায় বয়লার ও জেনারেটরের জন্য প্রতি ঘণ্টায় ১২ হাজার ঘনফুট গ্যাস ব্যবহারের অনুমোদন ছিল।

কিন্তু একাধিক বয়লার এবং থার্মোফ্লুইড হিটারের জন্য দরকার ছিল অতিরিক্ত গ্যাস। সেজন্যই কারখানায় অবৈধভাবে বুস্টার পাম্প বসানো হয়েছিল বলে তিতাস কর্মকর্তাদের ধারণা।দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে তিতাস কর্তৃপক্ষ যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, তার একজন সদস্যও ওই কারখানায় বুস্টার মেশিন ছিল বলে ধারণা করার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন।তবে তদন্ত শেষ না হওয়ায় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি তিনি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিতাসের ঢাকা মেট্রো উত্তরের বিপণন শাখার মহাব্যবস্থাপক রানা আকবর হায়দারী বলেন, তদন্ত কাজ চলছে। প্রতিবেদনেই সব বলা হবে।

ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটির প্রধান উপ পরিচালক (অপারেশেন ও অর্থ) বদিউজ্জামান বলেন, আমরা বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলছি। তদন্ত শেষ না হলে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।তিতাস কর্মকর্তাদের সন্দেহের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে টাম্পাকো কারখানার সহকারী প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) মো. নয়ন উদ্দিন বলেন, আমার জানা মতে কারখানায় কোনো বুস্টার মেশিন ছিল না।

তিনি বলেন, ঈদের ছুটি হয়ে যাওয়ায় বিসিক শিল্প এলাকার অন্য কারখানাগুলো তখন বন্ধ ছিল। কেবল টাম্পাকোতে রাতে কাজ চলছিল। ভোরের দিকে টাম্পাকোর বয়লারও বন্ধ ছিল।গ্যাসের চাপ বেড়ে পাইপ বিস্ফোরিত হয়ে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করছেন নয়ন।কারখানার প্রোডাকশন অফিসার হাবিবুর রহমান বলেন, তাদের কাজে ইথাইল এসিটেটসহ বিভিন্ন ধরনের ‘অ্যাডহেসিভ’ ব্যবহার করতে হত। বাইরে থেকে আগুন না পেলে সেসব রাসায়নিকে আগুন ধরার কথা নয়।কারখানার সঙ্গে থাকা তিতাসের গ্যাস সাবস্টেশনের পাইপ বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।হাবিবুর রহমান বলেন, ভোরে সাবস্টেশনের পাইপ লিক হয়ে গ্যাস বের হচ্ছে বলে আমরা খবর পাই। কিন্তু তিতাসের লোক আসার আগেই দুর্ঘটনা ঘটে যায়।টাম্পাকোতে অগ্নিকান্ডেহতাহতের ঘটনায় কারখানার মালিক সিলেট বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মো. মকবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে।দুর্ঘটনার পেছনে কর্তৃপক্ষের অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথাও গাজীপুরের পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।