টঙ্গীর ট্যাম্পাকো কারখানার উদ্ধার কাজে অংশ নিয়েছে সেনাবাহিনী॥ ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ রানা প্লাজার চেয়ে বেশী ॥ দু’মাস সময় লাগার সম্ভাবনা ॥ মৃতের সংখ্যা ৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে, ॥

gazipur-3-12-september-2016-followup-tongi-fire-2গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক শিল্প নগরীতে ট্যাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানায় উদ্ধার কাজ সোমবার সকাল হতে শুরু করেছে সেনাবাহিনীর স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের সদস্যরা। ঝুকির মধ্য দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে সেনা সদস্যদের। রানা প্লাজার চেয়ে বেশী একারখানার ধ্বংসাবশেষ অপসারণের পুরো কাজ শেষ করতে দুই মাস সময় লাগার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। এদিকে সেনা সদস্যরা কারখানার ধ্বংসাবশেষ থেকে আরো একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩২ জনে দাঁড়িয়েছে।

টঙ্গী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, টঙ্গীর বিসিক নগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত শনিবার ভোরে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টির বেশী ইউনিটের কর্মীরা টানা চেষ্টা চালিয়ে রবিবার সকালে নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সোমবার দুপুর পর্যন্ত কাজ করছিল তারা। ফলে হতাহতদের খোঁজে কারখানার ভিতরে এখনো তল্লাশি চালাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ভয়াবহ এ ঘটনায় ওই কারখানার বিশাল ভবনের অধিকাংশই ধ্বসে পড়ে বিশাল ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। ধ্বসে পড়ার পর ৫ তলা ভবনের অবশিষ্টাংশেও ফাটল দেখা দিয়ে ঝুকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় আগুনে দগ্ধ হয়ে এবং ভেঙে পড়া কাঠামোর নিচে চাপা পড়ে রবিবার সকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। এছাড়াও আহত হয় অর্ধশতাধিক। নিখোঁজ রয়েছে বেশ কয়েকজন। কারখানার ধ্বংস স্তুপে আরো লাশ বা জীবিত অবস্থায় কেউ আটকা থাকতে পারে বলে আশংকা করছেন নিখোঁজদের স্বজন ও স্থানীয়রা। এ পরিস্থিতিতে সোমবার সকালে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে একটি দল টঙ্গী টঙ্গীর ওই ট্যাম্পাকো ফয়েলস প্যাকেজিং কারখানায় উদ্ধার কাজ শুরু করে। উদ্ধার কাজে তাদের সহায়তা করছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা। এর আগে উদ্ধার কাজের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য রবিবার দিবাগত রাতে সেনা বাহিনীর একটি দল ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন। সোমবার কারখানার পূর্বপাশে রাস্তার ওপর উদ্ধার কাজ করার সময় সেনা সদস্যরা ধ্বংসাবশেষ থেকে একজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। এনিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩২ জনে দাঁড়িয়েছে।

সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এএসএম মাহমুদ হাসান জানান, টঙ্গীর বিসিক নগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানাটির ভয়াবহতা রানা প্লাজার চেয়েও অনেক বেশী। এখানে যে পরিমাণ গর্বেজ (ধ্বংসাবশেষ) জমে রয়েছে তা রানাপ্লাজার চেয়েও অনেক বেশী। সেনা সদর থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সে অনুযায়ী আমরা কাজ করছি। সোমবার সকালে আমরা আমাদের কর্ম পরিকল্পনা তৈরী করেছি। মূলতঃ আমরা তিনদিক থেকে কাজ করবো। কিন্তু এখানে রয়েছে ইথাইল কেমিক্যালের ড্রাম- যেগুলো কাজের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। এসব ইথাইল ড্রামগুলো একেকটা বোমার মতো। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা ইথাইল ড্রামগুলো ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। কোন ড্রামে খোঁচা লাগলে সেটি বোমার মতো বিষ্ফোরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এধরনের জায়গায় কাজ করার মতো অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। তাই ইথাইল ড্রামগুলোকে এড়িয়ে সাবধানতার সঙ্গে আমাদের কাজ করতে হবে। আমরা হয়তো আজ (সোমবার) বিকেলের মধ্যে পূর্ব পাশের্^র ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলতে পারবো। কিন্তু এখানকার পুরো কাজ শেষ করতে এক মাসের বেশী সময় লাগবে। এমনকি দু’মাসও লাগতে পারে।

এদিকে, দূর্ঘটনায় নিহত জুয়েলের পিতা আঃ কাদের বাদী হয়ে টঙ্গী মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় কারখানার মালিক মকবুল হোসেন ও তার স্ত্রী শেফালী পারভীনসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতদের আসামী করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলো- কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভির আহমেদ, মহাব্যবস্থাপক সফিকুর রহমান, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মনির হোসেন, ব্যবস্থাপক (সার্বিক) সমীর আহমেদ, ব্যবস্থাপক হানিফ ও উপ সহকারী পরিচালক আলমগীর হোসেন। এই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কী অভিযোগ আনা হয়েছে, তা স্পষ্ট হওয়া যায়নি। তবে ঘটনার পর থেকে মামলার আসামীরা পলাতক রয়েছে।

টঙ্গীর কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা
টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেডে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারখানার মালিক ও তার স্ত্রীসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে টঙ্গী মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। টঙ্গী মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার জানান, টঙ্গীর বিসিক নগরীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় অগ্নিকান্ডে নিহত শ্রমিক জুয়েলের বাবা আবদুল কাদের বাদী হয়ে রবিবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় কারখানা মালিক মকবুল হোসেনকে প্রধান এবং তার স্ত্রী শেফালী আক্তারকে আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও আরো অজ্ঞাতদের আসামী করা হয়েছে। ওই কারখানায় শনিবার ভোরে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।