%e0%a6%a8%e0%a6%9c%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%b9%e0%a7%80%e0%a6%a8-%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%aa%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%be%e0%a7%9f-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%bf

নজিরবিহীন নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। ইহরাম পরিহিত অবস্থায় লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে মক্কা থেকে মিনা যাত্রার মাধ্যমে ৫ দিনের হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেছেন হজ পালনকারীরা।এশিয়া, আফ্রিকাসহ বিশ্বের প্রায় ১৫ লাখ মুসলিম শনিবার এখানে পবিত্র হজব্রত শুরু করেছেন। তবে শিয়া অধ্যুষিত ইরান ও সুন্নী সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদী আরবের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনার কারণে হাজার হাজার ইরানি এবার হজে অংশ নিতে পারছেন না।

পবিত্র হজ পালনের জন্য মক্কায় সমবেত সারা বিশ্বের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান শুক্রবার মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) জুমার নামাজ আদায় করার পর হজযাত্রীরা পবিত্র হজের অংশ হিসেবে মিনায় রওনা হন। বাসে, গাড়িতে, ট্রেনে এমনকি হেঁটে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তারা। সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরে হজের নিয়তে তাঁদের মুখে ছিল তালবিয়া ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্ধসঢ়;দা ওয়ান্নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাকা’।

মিনায় রাতযাপন জীবনের এক পরম পাওয়া।৮ জিলহজ হজযাত্রীরা মিনায় অবস্থান করবেন। ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানে যাবেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করবেন। এরপর প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় গিয়ে রাতযাপন ও পাথর সংগ্রহ করবেন। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে মিনায় ফিরবেন।হাজিরা মিনায় বড় শয়তানকে পাথর মারবেন, কোরবানি দেবেন, চুল ছেঁটে মক্কায় গিয়ে কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন। তাওয়াফ, সাঈ শেষে আবার মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ অব¯’ান করবেন। সেখানে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করবেন তারা। প্রত্যেক শয়তানকে সাতটি করে পাথর মারতে হয়। তিন শয়তানকে তাকবিরসহ পাথর নিক্ষেপ করা হজের অপরিহার্য অংশ। এবার বিশ্বের ১৫০টিরও বেশি দেশ থেকে হজ পালনে মক্কায় সমবেত হয়েছেন ১৩ লাখ ২৩ হাজার ৫২০ জন মুসলমান। সৌদি সংবাদপত্র সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ (সা.) ১৪শ’ বছরেরও আগে যেভাবে হজ পালন করেছেন ইসলামের মূল ৫টি স্তম্ভের অন্যতম এই হজ সেভাবেই প্রতি বছর পালন করে চলেছেন মুসলমানরা।৮ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর মক্কা থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মিনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা সুন্নত হলেও যানজট এড়াতে বিপুল সংখ্যক হজযাত্রীকে মুয়াল্লিমরা সৌদি সরকারের অনুমোদনক্রমে আগের রাত থেকেই হজযাত্রীদের মিনায় নিয়ে থাকেন।

অনেকে অবশ্য নবীর সুন্নত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পালনের জন্য গতরাতে না গিয়ে আজ সূর্যোদয়ের পর পায়ে হেঁটে মিনায় রওনা করবেন। যারা গতরাতেই মিনায় পৌঁছেছেন তারা আজ ফজরসহ সেখানে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবেন। সুন্নতি তরিকায় ৯ জিলহজ সূর্যোদয়ের পর আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করার কথা থাকলেও যানজটের বিড়ম্বনা এড়াতে আজ সন্ধ্যার পর থেকেই হজযাত্রীদের ১৪ কিলোমিটার দূরবর্তী আরাফাতের ময়দানে নিয়ে যাওয়া শুরু করবেন মুয়াল্লিমরা।

এদিকে হজ উপলক্ষে এবার মক্কা ও মদিনায় নজিরবিহীন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিশেষ করে মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের সময় যাতে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সৌদি হজ কর্তৃপক্ষ হাজিদের ভাগ ভাগ করে সেখানে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে।গত বছর মিনায় পাথর নিক্ষেপের সময় পদদলিত হয়ে প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে। এরপরই হজে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের উদ্যোগ নেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ।হজ পালনকারীদের আগমনে মিনা এখন তাঁবুর শহরে পরিণত হয়েছে। চারদিকে তাঁবু আর তাঁবু। হাজিরা এই তাঁবুতে অবস্থান করছেন। তাঁবুগুলো দেখতে চৌচালা ঘরের মতো। ভেতরে পর্যাপ্ত আলো আছে। এই তাঁবুতে শোয়া-বসা ও নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। রয়েছে শৌচাগার ও পানির কল। আছে টেলিফোন সংযোগ।মিনায় কিছু দূর পরপরই রয়েছে হাসপাতাল। হাজিদের সেবায় সেখানে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক ও নিরাপত্তাকর্মী আছেন। আল্লাহর ঘরের মেহমানদের যাতে কোনোরূপ কষ্ট না হয়, সে জন্য মিনায় যাওয়ার সব রাস্তা যানজটমুক্ত রাখা হয়েছে।৮ জিলহজ মিনায় সারা দিন অবস্থানের পর ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায়ের পর প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশে যাত্রা করবেন তারা। সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। পরে আরাফার ময়দান থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে মুজদালিফায় গিয়ে রাতযাপন করতে হবে। এরপর মিনায় জামারাতে শয়তানকে মারার জন্য পাথর সংগ্রহ করতে হবে। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরবেন হাজিরা। এখানে বড় শয়তানকে পাথর মেরে, কোরবানি করে ও মাথা মু-ন করতে হবে। পরে কাবা শরিফ তাওয়াফ করবেন হাজী সাহেবরা। তাওয়াফ ও সাঈ শেষে মিনায় ফিরে ১১ ও ১২ জিলহজ সেখানে অবস্থান করবেন। এখানে প্রতিদিন তিনটি শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করতে হবে।এদিকে, আরাফার দিন হজের খুতবা প্রদান ও নামিরা মসজিদে ইমামতি করা থেকে পদত্যাগ করেছেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবুদল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আল শায়খ।তিনি ১৯৮১ সাল থেকে দীর্ঘ ৩৫ বছর যাবৎ হজের খুতবা দিয়ে আসছিলেন। স্বাস্থ্যগত কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

শনিবার সৌদি আরবের জাতীয় দৈনিক ওকাজ এ খবর জানিয়েছে। দৈনিক ওকাজ আরও জানায়, গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম মুফতি সালিহ বিন হুমাইদ গ্র্যান্ড মুফতি আবুদল আজিজের স্থালাভিষিক্ত হতে পারেন।
বিশ্বস্ত সূত্রের বরাত দিয়ে ওকাজ জানায়, হুমাইদ ছাড়াও গ্র্যান্ড মুফতি নির্বাচনে দু’জনের নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন, ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মিনিস্টার শায়খ সালিহ আল আশ শায়খ ও দুই পবিত্র মসজিদের প্রেসিডেন্সি চেয়ারম্যান গ্র্যান্ড মসজিদের ইমাম শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস।

আরাফার ময়দানে অবস্থান হজের অন্যতম আমল। আরাফার ময়দান মক্কা থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানেই হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেছিলেন। যা ইতিহাসে ‘বিদায় হজের ভাষণ’ হিসেবে পরিচিত। এখানেই জিলহজ মাসের নবম দিনে ফজরের পর থেকে আরাফার দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব হচ্ছে, জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে বেশি বেশি নেক আমল করা। বিশেষ করে আরাফার দিবস তথা জিলহজ মাসের নবম দিনে। কেননা দিনটি আল্লাহর নিকট অন্য দিনগুলোর তুলনায় অধিক প্রিয়। বছরের অন্য দিনের আমলের সওয়াবের চেয়ে এদিনের আমলের সওয়াব দ্বিগুণ। তেমনিভাবে এদিনের আমলের সওয়াব আল্লাহর রাস্তায় ব্যয়কারীদের (মুজাহিদ) থেকেও উত্তম। সুতরাং দিনটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে আমাদের করণীয় হলো-একনিষ্ঠভাবে তওবা করে আল্লাহ দিকে ধাবিত হওয়া।সৎ কাজের প্রতি মনে আগ্রহ সৃষ্টি করা। যে কাজ করলে আমল কবুল হয় না, সেসব কাজ থেকে দূরে থাকা। অতীতের খারাপ কাজের জন্য জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করা।

এক. রোজা পালন করা। এটা এদিনের সর্বোত্তম আমল। সহিহ মুসলিম শরিফের এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আরাফার দিবসের রোজা, পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়।’ তবে এ রোজা হাজিদের জন্য নয়, যারা হজে যায়নি- তাদের জন্য। হাজিদের জন্য আরাফার দিবসে রোজা রাখা মাকরুহ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বিদায় হজের সময় আরাফার দিবসে রোজা রাখেননি। বরং সবার সম্মুখে তিনি দুধ পান করেছেন। -মুসলিমইকরামা থেকে এক বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-এর বাড়িতে প্রবেশ করে আরাফার দিবসে আরাফার ময়দানে থাকা অবস্থায় রোজা রাখার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আরাফার ময়দানে আরাফার দিবসের রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। -মুসনাদে আহমদ: ২/৩০৪

দুই. তাকবিরে তাহরিমাসহ জামাতে নামাজ আদায় করা। বেশি বেশি সিজদা করা অর্থাৎ নফল নামাজ পড়া। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বেশি বেশি সিজদা করা তোমার দায়িত্ব। কেননা, তুমি যদি আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করো তাহলে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন, আর একটি গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। -সহিহ মুসলিম: ৭৮৮।তিন. ঈুরুষের উচ্চ আওয়াজে একাকি তাকবির পাঠ করা। নারীরা নিম্নস্বরে তাকবির বলবে।

চার. আরাফার দিনে বেশি বেশি দোয়া পাঠ করা। আরাফার দিনের উত্তম দোয়া হলো, যেগুলো রাসূলুল্লাহ (সা.) ও পূর্ববর্তী নবীরা পাঠ করেছেন। ওই সব দোয়ার অন্যতম হলো- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদির।এ ছাড়া আরাফার দিনের দোয়াল আল্লাহর কাছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার দোয়াও করা। আলেমরা সুবহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’ বেশি বেশি পাঠ করার কথা বলেন।পাঁচ. চোখ, কান ও জিহ্বাকে হারাম কাজ থেকে বিরত রাখা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আরাফার দিবসে যে তার কান, চোখ, জিহ্বাকে সঠিক কাজে ব্যয় করবে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। -শোয়াবুল ঈমান: ৩৭৬৬ ।ছয়. কোরআনে কারিম তেলাওয়াত করা। কোরআনের অর্থ ও তাফসির পাঠ করা।সাত. হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরূদ পাঠ করা।আট. সৎ কাজের আদেশ করা ও অসৎ কাজ থেকে অন্যকে বিরত রাখা।আল্লাহতায়ালা সবাইকে আরাফার দিবসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিনে বেশি বেশি নেক আমল সঠিকভাবে সম্পন্ন করার তওফিক দান করুন, আমিন।