করযোগ্য আয় থাকলেই বাধ্যতামূলক করারোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।তিনি বলেন, আমাদের বাধ্যতামূলক করারোপ করা উচিত। এটা হতে পারে ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৩০ টাকা। আমি এ প্রস্তাব করছি। দেশের মানুষের মধ্যে কর দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠুক।বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত পে রোল ট্যাক্স বা বেতন থেকে অগ্রিম কর কেটে রাখা নিয়ে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, যাদের আয় নেই, তাদের জন্য এ বাধ্যতামূলক কর নয়। বাকি সবাইকে এ করের আওতায় আনা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবতে হবে।এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল মাসুদ আহমেদ, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।
সেমিনারে অর্থমন্ত্রী বলেন, যাদের কোনো আয় নেই তারা ছাড়া দেশের প্রত্যেক নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে নূন্যতম করের আওতায় আনা উচিত। এর পরিমাণ ১০/২০/৩০ বা ৫০ টাকা হতে পারে। পরিমাণ যাই হোক না কেন।কয়েকবছর আগেও একবার এ প্রস্তাব দিয়েছিলেন জানিয়ে মুহিত বলেন, এখন আবারও দিচ্ছি। যদিও বাস্তবায়ন হবে কিনা জানি না। তবে আশা ছাড়িনি। সরকারের এখনো দুই বছর আছে।
বর্তমান নিয়মে কোনো করদাতার বার্ষিক আয় আড়াই লাখ টাকার বেশি হলে কর দিতে হয়। আর নারী এবং ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রবীণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ টাকা। করদাতা প্রতিবন্ধী হলে তাঁকে পৌনে চার লাখ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয়ের কর ছাড় দেওয়া হয়েছে।গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়সীমা সোয়া চার লাখ টাকা। এ ছাড়া সন্তান প্রতিবন্ধী হলে পিতামাতা ও আইনানুগ অভিভাবক করদাতা হলে বার্ষিক আয়ে আরো ২৫ হাজার টাকা করমুক্ত সুবিধা পাবেন।
করমুক্ত সীমার বেশি আয় হলে বিভিন্ন হারে কর দিতে হবে। করমুক্ত আয়সীমার পর প্রথম ৪ লাখ টাকার জন্য ১০ শতাংশ হারে; পরবর্তী ৫ লাখ টাকার জন্য ১৫ শতাংশ; পরবর্তী ৬ লাখ টাকার জন্য ২০ শতাংশ; পরবর্তী ৩০ লাখ টাকার জন্য ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।এ ছাড়া কোনো ব্যক্তির মোট আয় যদি সাড়ে ৪৭ লাখ টাকার বেশি হয়; তবে বাকি টাকার জন্য ৩০ শতাংশ হারে কর বসবে।
ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় অবস্থিত করদাতার জন্য নূন্যতম কর ৫ হাজার টাকা। অন্য সিটি এলাকার জন্য ৪ হাজার টাকা। আর এর বাইরের এলাকার জন্য ৩ হাজার টাকা।চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর হিসেবে ৭১ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে।
ষোল কোটি মানুষের বাংলাদেশে মাত্র ১২ লাখ মানুষ আয়কর দেয় জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশে মোট আয়করের ৩০ শতাংশ আসে বেতন-ভাতা থেকে। অথচ বাংলাদেশে এটা মাত্র ৪ শতাংশ।
এ অবস্থার পরিবর্তনের ওপর জোর দিয়ে মুহিত বলেন, সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে এখন সরকার কর কেটে রাখছে। বেসরকারি খাতও সচেতন হয়ে বেতন থেকে কর কেটে রাখলে অবস্থার উন্নতি হবে। দেশে কর কালচার তৈরি করার জন্যই এটা দরকার।এ বিষয়ে ‘সুশীল সমাজসহ’ সংশ্লিষ্টদের মতামত গঠনের আহ্বান জানান তিনি। রাজধানীর অফিসার্স ক্লাব সম্মেলন কক্ষে এনবিআর আয়োজিত এ সেমিনারে অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রধান অতিথি।