সাধারণ মানুষের চলাচল নির্বিঘœ করতে কোরবানির ঈদের আগে-পরে ছয় দিন জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ট্রাক-লরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে।বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় মন্ত্রণালয়।কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, ঈদের সময় সাধারণ মানুষের বাড়ি যাওয়া নির্বিঘœ করতে মন্ত্রণালয় তাদের পদক্ষেপগুলো কমিটিকে জানিয়েছে।বৈঠক শেষে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, “আমাদের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্তগুলো কমিটিকে জানানো হয়েছে।গত রোজার ঈদের যেসব সিদ্ধান্ত ছিল, এবারও তাই। ঈদের আগে তিন দিন এবং পরে তিন দিন মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে ট্রাক-লরি বন্ধ থাকবে।
সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জনস্বার্থ বিবেচনায় যানজট নিরাসনে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ট্রাক ও লরি চলাচল বন্ধ রাখা হবে। খাদ্য ও পচনশীল দ্রব্য, ওষুধ, জ্বলানি বহনকারী যানবাহন, কাঁচা চামড়া এর আওতামুক্ত থাকবে।বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন না করা, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ভিজিলেন্স টিম গঠন, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা এবং সড়ক মহাসড়কের ১৬টি পয়েন্টে পুলিশ প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য ১ হাজার রোভার স্কাউট নিয়োজিত করা হবে।কমিটি ঘরমুখো মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত এবং মহসড়কগুলো যানজটমুক্ত রাখার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করে।এছাড়া মহাসড়কের পাশে যাতে কোনোভাবেই পশুর হাট বসতে না পারে, সে বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য রেজওয়ান আহম্মদ তৌফিক, নাজমুল হক প্রধান, লুৎফুন নেছা ও নাজিম উদ্দিন আহমেদ অংশ নেন।সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও বৈঠকে ছিলেন।
এদিকে, সকাল ৯টায় রংপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়েছে হানিফ পরিবহনের একটি বাস। এতোক্ষণে রংপুর পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত বাসটি টাঙ্গাইলও পার হতে পারেনি বলে একাধিক যাত্রী ফোনে জানিয়েছেন।হানিফ পরিবহনের মতো অন্য পরিবহনের অবস্থাও একই বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। এ পরিবহনের যাত্রী তামহিদুর জানিয়েছেন, সকাল ৯টায় বাসটি কল্যাণপুর থেকে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। গাবতলী পার হতেই সময় লেগেছে এক ঘণ্টা। আমিন বাজার ব্রিজ পার হওয়ার পর থেকে অসহনীয় যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে।আমিন বাজার থেকে সাভার পর্যন্ত থেমে থেমে চলেছে বাসটি। আশুলিয়ায় গিয়ে পুরো স্থবির। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক একই স্থানে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর আবার থেমে থেমে চলতে থাকে। স্বাভাবিক সময়ে ছয় থেকে সাত ঘণ্টায় রংপুর পৌঁছে যাওয়ার কথা বাসটি। কিন্তু আট ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও টাঙ্গাইল পার হওয়া যায়নি। এক তৃতীয়াংশ রাস্তা পাড়ি দিতে কেটে গেছে আট ঘণ্টা। বাকি পথ কতক্ষণে পাড়ি দেবেন সে নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।
জুয়েল নামের অপর এক যাত্রী জানিয়েছেন, ঈদের ছুটিতো এখনও শুরুই হয়। তাতেই যদি এ অবস্থা হয় তাহলে ঈদের চাপ শুরু হলে কি হবে! প্রত্যেক বছরেই ঈদের আগে নানা রকম ফাঁকাবুলি শুনি। কিন্তু পথে এসে তার কোনো নমুনা দেখি না। প্রতিবারই সিদ্ধান্ত নেই, ঈদে আর বাড়ি যাবো না। কিন্তু ঈদ এলে আর মনটাকে মানাতে পারি না।
ঈদের যাত্রা পথে এ বিড়ম্বনায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হন নারী ও শিশুরা। এসব স্থানে প্রয়োজনীয় টয়লেট না থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। মাহবুব নামের এক চালক জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যদি দ্রুত স্বাভাবিক না হয় তাহলে ল-ভ- হয়ে যাবে গাড়ির শিডিউল। কারণ গাড়িগুলোর ১০ ঘণ্টা সময় ধরে ফিরতি শিডিউল ধরা আছে। সময় মতো যখন যাতায়াত করতে পারবে না তখন পিছিয়ে যেতে থাকবে শিডিউল। বড় পরিবহনগুলো তবুও কিছুটা সামলে উঠতে পারে। কিন্তু যাদের গাড়ির সংখ্যা কম সেসব পরিবহন শেষ দিকে যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। সাভার, আশুলিয়া, চন্দ্রা ও টাঙ্গাইল পর্যন্ত যদি গাড়ির যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও পার্কিং বন্ধ করা যায় তাহলে অনেকাংশে কমে আসবে দুর্ভোগ।