মিরসরাইয়ে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল,

মিরসরাই উপকূলে সৃজিত বনায়ন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর উপকূলীয় বনাঞ্চল রক্ষায় মাত্র ৬ জন ফরেষ্ট গার্ড দায়িত্ব পালন করছে। ফলে অল্প সংখ্যক বনরক্ষীদের দুর্বল অবস্থানের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র দিনের পর দিন উপকূলীয় বনের গাছ কেেট উজাড় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মত মিরসরাইও বন্যা কবলিত উপকূলীয় এলাকা। উপকূলীয় বন ধ্বংসের ষোলকলা পূর্ণ হলে দুর্যোগ থেকে রেহাই পাবে না এই উপজেলার প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষ।

জানা গেছে, উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নের মধ্যে ৭ টি ইউনিয়ন উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত। এসব উপকূলীয় এলাকায় প্রায় ২৩ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল রয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে নতুন করে আরো প্রায় এক’শ হেক্টর উপকূলীয় এলাকায় নতুন বাগান গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু উপজেলার সাহেরখালী, ইছাখালী এবং ওসমানপুর ইউনিয়নে অবস্থিত উপকূলীয় বনায়ন ঘুরে দেখা গেছে বন উজাড়ের নানা চিত্র।স্থানীয় এলাকাবাসীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এক শ্রেণীর মানুষ বন উজাড়ের সাথে জড়িত। আবার স্থানীয়দের কেউ কেউ সামান্য জ্বালানী (লাড়কি) হিসেবে কাঠ বিক্রি করতে কেটে ফেলছে মূল্যবান বনাঞ্চল। তবে ঘূর্ণিঝড় সিডর ও আইলার মত শক্তিশালী যেকোন বন্যার করাল গ্রাস থেকে মিরসরাইকে রক্ষা করতে এসব উপকূলীয় বনায়নের কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

উপজেলার সাহেরখালী ও বামনসুন্দর স্লুইচ গেইট উপকূলীয় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ওই এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বেশ কয়েকটি বনদস্যু সিন্ডিকেট। দিনের বেলা নৌকা নিয়ে দা, কুড়াল হাতে বনদস্যূরা গভীর বনাঞ্চনে ঢুকে পড়ে। গাছ কাটা শেষ হলে জোয়ারের সময় নৌকায় করে আর ভাটার সময় পানিতে ভাসিয়ে কাঠগুলো নিয়ে আসে। এরপর প্রকাশ্যেই রিকসা, ভ্যানে করে গাছগুলো অন্যত্রে সরিয়ে নেওয়া হয়। উপকূলীয় বনাঞ্চল থেকে কেটে আনা অধিকাংশ গাছ জ্বালানী (লাড়কি) হিসেবে বিক্রি করে দেওয়া হয়। উপজেলার সাহেরখালী, মঘাদিয়া, গজারিয়া, দমদমা, ঘোনা, বদি উল্যাহ পাড়া, খূড়াখালী, কাজীর তালুক, সারেং পাড়া, মিয়া পাড়া, সোনাপাড়ার এলাকায় জাহাঙ্গীর, আলমগীর, বেলাল, হক সাব, ছানেক, সাইফুল, রাজন, বেলাযেত, রবি, লাতু, আলা উদ্দিন, আজিজুল হকসহ অর্ধ শতাধিক লোক বন উজাড়ের সাথে জড়িত রয়েছে। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে উপকূলীয় বন বিভাগ দায়ের করা মামলা রয়েছে। এরপরও উপকূলীয় বনাঞ্চল থেকে গাছ কাটা রোধ করা যাচ্ছে না। এছাড়া সন্দ্বীপ ও সোনাগাজীর গাছ চোরেরা ট্রলার (ইঞ্জিনচালিত নৌকা) করে গাছ কেটে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে বনরক্ষীরা অভিযান চালালে বনদস্যুদের আক্রমণের মুখে বাধাগ্রস্থ হয়। প্রতিদিন গাছ কেটে বনদস্যুরা পিকআপ, ভ্যান, ঠেলাগাড়ী এবং সন্দ্বীপ চ্যানেল দিয়ে ট্রলারও নৌকায় করে গাছ পাচার করে। পাশ্ববর্তী সোনাগাজী উপজেলা থেকে এসেও বনদস্যুরা গাছ কেটে নৌকায় ভরে নিয়ে যায়। বিভিন্ন প্রজাতির গাছের মধ্যে বাউল, কেওড়া, বাইন, গরান, কাকরা, গেওয়া, ঝাউ, আকশমনি, বাবলা, নীম, ইপিল-ইপিল, নারিকেল, খেজুর, তালগাছ বেশি নিধন করছে। বড় গাছগুলো ভ্যানে করে নিয়ে এসে বিভিন্ন করাত কলে কেটে ফার্নিচারের কাঠ তৈরী করা হয়।উপকূলীয় রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় বনাঞ্চল রক্ষায় তিনটি বিট অফিস ও একটি ক্যাম্প অফিস রয়েছে। এগুলো হলো মঘাদিয়া, বামনসুন্দর, ডোমখালী বিট অফিস ও ইছাখালী ক্যাস্প অফিস। ডোমখালী বিট অফিসের বিট কর্মকর্তার পদটি শূন্য রয়েছে। একজন মাত্র ফরেষ্ট গার্ড সব কাজ করছেন। এছাড়া মঘাদিয়া ও বামনসুন্দর বিট অফিসে ৫ জন ফরেষ্ট গার্ড বন রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।

বামনসুন্দর উপকূলীয় বনবিট কর্মকর্তা এরফান হোসেন জানান, উপকূলীয় ইউনিয়ন সাহেরখালীতে কোষ্টগার্ড থাকায় বনাঞ্চল থেকে গাছ কাটার ঘটনা এখন অনেক কমে গেছে। এরপরও কিছু কিছু লোক বন থেকে গাছ কাটার কাজ করে যাচ্ছে। গত দুই বছরে বাগানের গাছ কাটার ঘটনায় কমপক্ষে ৩৪ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় তারা বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিয়ে যায়।