একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগই করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনিরা বলেছিল কে বিচার করবে; তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল। তবে আমরা বিচার করেছি। এদিকে ’৭৫-এর পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিলো। বাংলার মাটিতে তাদের প্রতিষ্ঠা করলো, তাদেরও বিচার আমরা করেছি- করে যাচ্ছি। বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল এবং তখনকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ সাল থেকে দেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। তখন (জিয়াউর রহমানের আমলে) স্বাধীনভাবে চলার কোনো সুযোগ ছিল না, কথা বলারও কোনো সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর আমলে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী সাজাপ্রাপ্ত ছিল, ২২ হাজার মামলা হয়েছিল; আরও মামলা হচ্ছিল। জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিলেন। গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনা হলো, মন্ত্রী বানানো হলো।
‘শুধু তাই নয়, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। সেসময় বিবিসিতে ইন্টারভিউতে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল খুনিরা। বলেছিল- ‘কে আমাদের বিচার করবে, কারণ বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলেছি’। তবে আমরা বিচার করেছি, আমরাই করেছি। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনাকে ফিরিয়ে আনবো বলেই বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করি। বঙ্গবন্ধুর খুনি এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরা করেছি, আমরাই করে যাচ্ছি,’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জিয়া জড়িত ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সেসময় ব্রিটিশ এমপিকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি জিয়াউর রহমান। এতে কোনো সন্দেহ নেই তিনি জড়িত ছিলেন। বাংলার মাটিতে অন্যায়গুলোর বিচার করতে পেরেছি, রায় কার্যকর করেছি- করে যাচ্ছি। শেখ হাসিনা বলেন, যদি সংকল্প দৃঢ় থাকে যেকোনো অর্জন সম্ভব। বঙ্গবন্ধু বলতেন, মহৎ অর্জনের জন্য মহৎ ত্যাগ দরকার। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। বাঙালির জন্য যেকোনো ত্যাগে আমি সবসময় প্রস্তুত। এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে। তবে কখনোই বিজয়ের ইতিহাস ভুললে চলবে না, এতে আমাদের অস্তিত্বই থাকবে না। জাতির পিতা জীবন দিয়ে গেছেন, সেই আদর্শ নিয়ে আমাদের চলতে হবে।
‘যখন বঙ্গবন্ধুকে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তিনি পাকিস্তানে গিয়ে বলেছিলেন, আমি তো দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে এসেছি। আপনারা আমার কী বিচার করবেন- করেন। তখন তিনি বলতেন ’জয় বাংলাদেশ,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তার মায়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, বাবার কথা তো অনেক লিখা হয়, মায়ের (শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব) কথা তো লিখা হয় না। তবে আমার মায়ের অবদান কিন্তু কম নয়। তিনি বাবার পাশে থেকে, অনেক কাজ করে গেছেন। সেসবও তুলে আনা দরকার। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি সবাইকে পড়ে দেখার আহ্বান জানান।