30-08-16-PM_AL Dhaka Mohanagar Memorial Meeting-13

যুদ্ধাপরাধী হিসেবে সাজাপ্রাপ্তদের মন্ত্রী বানানোর অভিযোগে প্রকাশ্যে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিচার হওয়া উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, অনেক বাধা বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে।অনেক বাধা পেরিয়ে জাতির পিতার শুরু করা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ সরকার সম্পন্ন করছে বলে জানান তিনি।মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর ৪১তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এ কথা বলেন তিনি।যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জিয়াউর রহমান ও বিএনপির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, কোন বিবেকে যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আইনজীবী দাঁড়ান?যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানানোর দায়ে খালেদা জিয়ার বিচার জনগণ প্রকাশ্যে করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।তিনি বলেন, জঙ্গিদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বিএনপি প্রমাণ করেছে তারাই এসব সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা।পিতা হত্যার বিচারকাজ শেষ করতেই শত বাধা উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে বলে এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।

জঙ্গিদের জন্য খালেদা জিয়ার মায়াকান্নার সমালোচনা করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমেই প্রমাণ হয় তারাই সন্ত্রাসের মদদ দেয়।পঁচাত্তরের পরও খুনি মোশতাক গাদ্দারি করেনÑ তিনি কিছুদিনের জন্যে রাষ্ট্রপতি হন পরে তাকে সরিয়ে জিয়া ক্ষমতায় আসেন খুনিদের পুরস্কৃত করেন, বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দেন সেদিন কাউকে পাশে পাইনি পেয়েছিলাম শুধু দেশের মানুষকে বলে জানান তিনি।তিনি বলেন, আমরা দুই বোন সেদিন বিদেশে ছিলামÑ প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি বাবা নেই, অনেকে বিচার চায়। আমরা যে এতো আপনজন হারালাম বিচারও চাইতে পারিনি কারণ ইমডেমনিটি জারি করে মামলা জিডি করতে দেয়া হয়নি থানায় যেতে পারিনি।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতাই দিয়ে যাননি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এদেশের মানুষের মর্যাদাও প্রতিষ্ঠা করে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ স্মরণসভা আয়োজন করা হয়। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু সবই করে দিয়ে গেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে কীভাবে সমৃদ্ধ করা যায় সে পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিলো, ঠিক তখনই ১৫ আগস্ট তাকে হত্যা করা হয়। সংবিধান থেকে শুরু করে সবই তিনি করে দিয়ে গেছেন। আজ যেখানেই হাত দিই সেখানেই দেখি চিন্তার প্রতিফলন।জাতির পিতা আজ নেই, স্বাধীনতার চেতনা সম্পূর্ণ মুছে ফেলার জন্যেই তাকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিলো। জাতির পিতা আমাদের শুধু স্বাধীনতাই এনে দেননি, মানুষের মর্যাদাও এনে দিয়েছেন।তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর দেশের মানুষ সব অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলো। ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ মানুষের অধিকার রক্ষায় কাজ শুরু করে।

পঁচাত্তরের নির্মম হত্যাকান্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। অনেকে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে চলে যায়। তাকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ইনডেমনিটি বিল জারি করে সে বিচার কাজ বন্ধ করেন। যুদ্ধাপরাধীদের দেশে ফিরিয়ে আনেন, শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী বানান, আবদুল আলীমকেও মন্ত্রী বানান।আর কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন, পাকিস্তানি পাসপোর্টেই তাকে দেশে আনা হয়। পরে খালেদা জিয়া তাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেন। তাদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়, দেওয়া হয় রাজনীতি করার অধিকার।

শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় কোনো অধিকার ছিলো না মানুষের। পঁচাত্তরের পর প্রতিরাতেই কারফিউ জারি ছিলো, স্বাধীনভাবে চলার সুযোগ ছিলো না। কোনো গণতন্ত্র ছিলো না। যেখানে কারফিউ চলে, সেখানে গণতন্ত্র আসে কীভাবে?এমনকি বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার যাতে না হয় সেজন্যে জিয়া মার্শাল ল জারি করে ইনডেমনিটি বিল আনেন। থানায় মামলা নেয়নি, জিডিও করা যায়নি। ২১ বছর পরে ক্ষমতায় এসে সেসব অর্ডিন্যান্স বাতিল করে বিচার শুরু করি আমরা।ওই সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজও বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে। অনেক হুমকি-ধমকি এসেছে, কিন্তু নতি স্বীকার করিনি। আমি জাতির পিতার কন্যা।

যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেওয়ায় বিএনপিরও শাস্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, রাজাকারের দোসর হিসেবে এদেরও বিচার করতে হবে। তাদের বিচার জনসম্মুখে হওয়া দরকার।অনুষ্ঠানে ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন করা হবে জানিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, সেজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নেতা-কর্মীদের প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতা নেই, আদর্শ আছে। তিনি সহজ সরল জীবনযাপন করে গেছেন, এটাই তার আদর্শ। তাকে হত্যার বিচার করেছি। এখন বাংলাদেশ তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে তার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ থেকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ দূর করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে।কিন্তু নিহত জঙ্গিদের জন্য খালেদা জিয়ার এতো মায়া কান্না কেন? তাদের বাঁচিয়ে রেখে কী হবে? ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সংসদ সদস্য একেএম রহমতউল¬াহ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন প্রমুখ।