নৌ ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। পণ্যবাহী সকল নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বেতন বৃদ্ধিসহ নানা দাবিতে শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছেন। ফলে দেশের নৌপথে পরিচালিত ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। শনিবার ধর্মঘটের ৫ম দিনেও খুলনায় অবস্থিত মংলা বন্দরের রুজভেল্ট জেটিসহ সব ঘাটে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রয়েছে। এমন বাস্তবতায় খুলনার বিভিন্ন এলাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন প্রায় তিন হাজার নৌ শ্রমিক।বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবিতে সারা দেশে নৌযান শ্রমিকরা সোমবার (২২শে আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট শুরু করেন।
খুলনা: নৌযান শ্রমিকদের ডাকা লাগাতার নৌযান ধর্মঘটের কারণে খুলনাঞ্চলে প্রতিদিন ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। রূপসা, শিবসা, পশুর নদী ও ভৈরব নদে নোঙ্গর ফেলা পণ্য বোঝাই জাহাজ-কার্গো নৌযান ধর্মঘটে আটকা পড়ে আছে। শিল্পের কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে নৌ-যানগুলোতে।শনিবার ধর্মঘটের ৫ম দিনেও খুলনায় অবস্থিত মংলা বন্দরের রুজভেল্ট জেটিসহ সব ঘাটে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রয়েছে। এমন বাস্তবতায় খুলনার বিভিন্ন এলাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন প্রায় তিন হাজার নৌ শ্রমিক।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, খুলনার বিআইডব্লিউটিএ, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এবং রুজভেল্ট জেটিতে অবস্থানরত কোনো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা হচ্ছেনা। এছাড়া খুলনা লঞ্চঘাট থেকে কোনো নৌযান ছেড়ে যায়নি বা আসেনি। এমনকি মংলা বন্দর থেকে যশোরের নওয়াপাড়া পর্যন্ত কোথাও কোনো নৌযান চলছে না।তিনি জানান, খুলনার রুজভেল্ট জেটিসহ সব ঘাটে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ থাকায় বিভিন্ন এলাকায় অলস সময় কাটাচ্ছেন প্রায় তিন হাজার নৌ শ্রমিক। তারা কাজ বাদ দিয়ে বর্তমানে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। বেতন-ভাতা বাড়ানোসহ ১৫ দফা দাবিতে সারাদেশে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের শ্রমিকরা সোমবার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা ১মিনিট থেকে অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট শুরু করেন।
ধর্মঘটের কারণে খুলনা থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত দুই হাজার ছোট-বড় নৌযান আটকা পড়ে আছে। মংলা বন্দরে সার, কয়লা, ক্লিংকার, বোল্ডার স্টোন, পদ্মা সেতুর যন্ত্রপাতিসহ সর্বমোট ১৩ জাহাজ অবস্থান করছে। ধর্মঘটের কারণে এসব জাহাজ থেকে মালামাল খালাস করা যাচ্ছে না। ধর্মঘট দীর্ঘস্থায়ী হলে ক্লিংকারের অভাবে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিগুলি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। খুলনা বিভাগীয় অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন মালিক গ্রুপ ও মংলা বন্দর ব্যবহারকারী সমন্বয় কমিটির মহাসচিব এডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন, ধর্মঘটে নৌযান মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একদিন বন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে দিনে প্রায় ২৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কেন্দ্রের ডাকা ধর্মঘট খুলনা ও মংলায় সর্বাত্মকভাবে পালিত হচ্ছে। এতে যশোরের নওয়ারপাড়া থেকে শুরু করে মংলার হারবাড়িয়া পর্যন্ত ছোট বড় প্রায় দুই হাজার নৌযান নোঙর ফেলে অবস্থান করছে। খুলনার কোনো ঘাট থেকে নৌযান চলাচল করছে না বলেও জানান তিনি।এদিকে নৌপথে পণ্য পরিবহন মুখ থুবড়ে পড়ায় বিভিন্ন শিল্পকারখানায় উৎপাদন সংকট ও বাজার পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ধর্মঘটের ফলে শনিবার বার খুলনার বিআইডব্লিউটিএ, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এবং রুজভেল্ট জেটিতে অবস্থানরত কোনো জাহাজ থেকে পণ্য খালাস করা হয়নি। এছাড়া খুলনা লঞ্চঘাট থেকে কোনো নৌযান ছেড়ে যায়নি বা আসেনি। এমনকি মংলা বন্দর থেকে যশোরের নওয়াপাড়া পর্যন্ত কোথাও কোনো নৌযান চলছে না।
বাগেরহাট: মজুরি বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে পঞ্চম দিনের মতো ধর্মঘট করছেন নৌযান শ্রমিকরা। এতে বাগেরহাটের মংলা বন্দরে সৃষ্ট অচলাবস্থা অব্যাহত রয়েছে।শনিবার সকাল থেকে কাজে যোগ দেননি কোনো শ্রমিক। ফলে টানা পঞ্চম দিনের মতো বন্দরে পণ্য বোঝাই-খালাস এবং নৌপথে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পরিবহনের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে।এছাড়া মংলা বন্দরের সঙ্গে নৌপথে সারাদেশের যোগাযোগ ও পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে পণ্য লোড-আনলোডও। নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের মংলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাসেম মাস্টার বলেন, বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ শ্রমিকদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা কাজে যোগ দেব না।মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, বর্তমানে বন্দর জেটি ও বহির্নোঙরে পাথর, কয়লা, সার, গম, স্টিল প্লেট ও ক্লিংকারবাহী (সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল) মোট ১১টি জাহাজ (মাদার ভ্যাসেল) রয়েছে। এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও বোঝাই না করায় বন্দরে জাহাজের জট বাড়ছে। বেতন-ভাতা বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে সোমবার (২২ আগস্ট) দিনগত রাত ১২টা থেকে ১ মিনিট থেকে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের ডাকে সারাদেশে নৌযান শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের এ ধর্মঘট শুরু করেন।তবে তেলবাহী ট্যাংকার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করায় ধর্মঘটের আওতামুক্ত থাকছে প্রায় ৫ হাজার ট্যাংকার।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক (ট্রাফিক) মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, বর্তমানে বন্দর জেটি ও বহির্নোঙরে পাথর, কয়লা, সার, গম, স্টিল প্লেট ও ক্লিংকারবাহী (সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল) মোট ১৩টি জাহাজ (মাদার ভেসেল) রয়েছে। ধর্মঘটের কারণে এসব জাহাজ থেকে পণ্য খালাস ও বোঝাই করা যাচ্ছে না। এতে বন্দরে জাহাজের জট বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমদানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। বন্দর ব্যবহারকারী ও শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য মেসার্স নূরু এন্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী এইচএম দুলাল জানান, আমদানি পণ্য নিয়ে আসা জাহাজগুলো পণ্য খালাস করতে না পারায় বন্দরে চ্যানেলে অলস বসে আছে। এতে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের। এছাড়া পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত শত শত নৌযান বিভিন্ন স্থানে নোঙর করে আছে।
বরিশাল: নৌযান শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালে ধর্মঘটের পঞ্চম দিনেও বরিশালের অভ্যন্তরীণ সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে।শনিবার সকালে থেকে বরিশাল থেকে অভ্যন্তরীণ রুটের কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি ও আসেনি।লঞ্চের পাশাপাশি ধর্মঘটের কারণে মালবাহী কার্গোগুলো কীর্তনখোলা নদীর দক্ষিণপ্রান্তে নোঙর করে আছে।তবে সকালে ঢাকা থেকে এমভি সুরভী-৭, টিপু-৭, পারাবত-১২, কীর্তনখোলা-১ লঞ্চটি বরিশাল বন্দরে পৌঁছেছে। যাত্রী নিয়ে সন্ধ্যায় লঞ্চগুলো ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে।বরিশাল নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নৌ বন্দর এলাকায় নৌ পুলিশের সক্রিয় অবস্থান রয়েছে।
বরিশাল থেকে জানান, টানা ৫ম দিনের ন্যায় চলছে বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন ও নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের আহ্বানে ১৫ দফা দাবি বাস্তবায়নের কর্মবিরতি।এমভি টাইপের দোতলা লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করলেও অভ্যন্তরীণ রুটের এমএল টাইপের একতলা লঞ্চ শনিবার সকালেও বরিশাল নৌবন্দরে নোঙর করা আছে। শ্রমিকদের বক্তব্য দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্ম বিরতি চলবে। চলমান আন্দোলনের মধ্যেও শনিবার সকালে ঢাকা থেকে ৩টি লঞ্চ বরিশালে যাত্রী নিয়ে এসেছে। নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, পন্টুর এলাকায় যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বাড়তি ফোর্স মোতায়েন করেছেন। লঞ্চ চলাচলে যেন কোনো রকম বাধার সৃষ্টি না হয়, সেজন্য আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের বলেছেন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে।বরিশাল নদীবন্দরে কথা হয় শ্রমিকদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট একে আজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, শ্রমিক ফেডারেশন আন্দোলন ডেকেছে বটে, তবে ৩ হাজার টাকা বেতন পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয় বলে এখন শ্রমিকরাই কর্মবিরতি চালিয়ে নিচ্ছেন। তাই এই আন্দোলন ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করেন এই শ্রমিক নেতা। জেলা লঞ্চ মলিক সমিতির সহসভাপতি শেখ আ. রহিম বলেন, তারা শ্রমিদের ন্যায্য মজুরি দিয়ে থাকেন। কিছু স্বার্থন্বেষী শ্রমিক নেতা আছেন যাদের কাজ করার যোগ্যতা নেই তারাই এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে বাধ্য করছেন। সাধারণ শ্রমিকরা কাজ করতে চান বলে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দোতলা লঞ্চের ন্যায় একতলা লঞ্চও চালাবেন।