স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীআসাদুজ্জামানখান কামাল বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়ায় কাউন্টার টেরোরিজম অভিযান হিট স্ট্রং-২৭ এ সাম্প্রতিক সকল জঙ্গি হামলার হোতা তামিম চৌধুরী নিহত হয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, তামিম চৌধুরীর চ্যাপ্টার এখানেই শেষ।শনিবার সকালে ওই অভিযানে তামিম চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হন। এর পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌছে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গোপন তথ্যেই জানা গিয়েছিলো তামিম চৌধুরী এখানে রয়েছে। তার ভিত্তিতেই সোয়াটবাহিনীসহ এই অভিযান পরিচালনা করা হয়।স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেন, গুলশান হামলার পেছনে ছিলেন তামিম চৌধুরী। ওই হামলার পরিকল্পনা তার, অর্থায়নও করেছিলেন। তিনি কানাডিয়ার নাগরিক। সারা পৃথিবীতে নাশকতা কিরে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।
তিনি জানান, আমাদের গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল, তামিম চৌধুরী এ বাড়িটিতে আত্মগোপন করে আছেন। গোপন ওই সংবাদের ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়ে রাত তিনটার দিকে বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।সকালে সোয়াট টিম আসার পর অভিযান শুরু হয়। এর আগে সারা রাতই পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও গুলি ছোড়ে তারা। আক্রান্ত হয়েও আমাদের বাহিনীগুলো ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। পরবর্তীতে সকালে ফায়ার ওপেন করেছে।
নিহত বাকি দু’জনের পরিচয় তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে কামাল বলেন, আমাদের গোয়েন্দা বাহিনী তৎপর, খোঁজ না নিয়ে, নিশ্চিত না হয়ে আমরা এগোই না।জঙ্গিদের বিষয়ে তিনি বলেন, এরা সংখ্যায় অল্প, জনবিচ্ছিন্ন। জনগণ এদের সমর্থন দেয় না। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছেন। বাকি অল্প সংখ্যক যারা আছে, তাদেরকেও আমরা ধরে ফেলবো।বাংলার জনগণ এদের পছন্দ করে না, সরকারও এদের প্রশ্রয় দেবে না, বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কানাডায় বেড়ে ওঠা তামিম আহমেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশে জঙ্গিদের নতুন ধারায় তৎপরতার নেপথ্য ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিল পুলিশ, যিনি শনিবার নারায়ণগঞ্জে অভিযানে নিহত হলেন।গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন হামলায় ১৭ বিদেশিসহ ২২ জনকে হত্যার পর মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে এই তামিমকেই চিহ্নিত করেছিল পুলিশ।গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় ঘরছাড়া তরুণ-যুবকদের জড়িত থাকার তথ্য প্রকাশের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিখোঁজ ১০ জনের যে প্রথম তালিকা দিয়েছিল, তাতে সিলেটের তামিমের নাম আসে।এর আগে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী আইএস বাংলাদেশে দলের শাখাপ্রধান হিসেবে যে আবু ইব্রাহিম আল হানিফের নাম ঘোষণা করেছিল, সেই ব্যক্তি তামিম বলেই অনেকে মনে করছিলেন।তবে গুলশান হামলার পরই তামিমের নামটি ব্যাপক আকারে আলোচনায় আসে।তামিম সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মজিদ চৌধুরীর নাতি। মজিদ চৌধুরী একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে স্থানীয়দের তথ্য।
তামিমের বাবা শফি আহমদ জাহাজে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি সপরিবারে কানাডায় পাড়ি জমান। কানাডার উইন্ডসরে থাকার সুবাদে ৩০ বছর বয়সী তামিমের বেড়ে ওঠাও সেখানে।পরিবার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানা না গেলেও গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, তামিম তিন সন্তানের জনক।তামিমের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার শুরু কীভাবে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য জানা যায়নি। বলা হচ্ছিল, ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ফেরার পর থেকে তিনি নিখোঁজ।তিনি ২০১৩ সালের অক্টোবরে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে গত ২ অগাস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।গুলশান হামলার পর তামিমের খোঁজে নামে পুলিশ। তখন বলা হচ্ছিল, তামিম দেশেই রয়েছেন।আইএস-সংশ্লিষ্টতার দাবি প্রত্যাখ্যান করে আইজিপি শহীদুল এক সংবাদ সম্মেলনে তামিমকে ‘নব্য জেএমবি’র শীর্ষনেতা বলে চিহ্নিত করেন।তিনি বলেছিলেন, এখানে (গুলশান হামলা) মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। নিও জেএমবির নেতৃত্ব সে দিচ্ছে। এই তামিম চৌধুরীর পর যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করেছি।আইজিপি বলেছিলেন, গুলশান হামলাকারীদের তামিমই রিক্রুট করেছিলেন।ঘটনার আগে সে তাদের ব্রিফিং দিয়েছে, তাদেরকে পাঠিয়েছে এবং ঘটনার সময় তাদেরকে এগিয়ে দিয়েছে, আমরা সে তথ্য পেয়েছি।গুলশান হামলার পর ঢাকার কল্যাণপুরে যে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নয়জন নিহতহয়েছিলেন,সেখানেও তামিমের অবস্থান ছিল বলে মনিরুল জানিয়েছিলেন।এরপর তামিমের বিষয়ে তথ্য দিতে ২০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়ার পাশাপাশি অভিযান শুরু করে পুলিশ। এর মধ্েযই শনিবার ভোরে নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়ায় একটি তিন তলা বাড়ি ঘিরে অভিযানে নামে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা, যার নাম দেওয়া হয় অপারেশন হিট স্ট্রং টুয়েন্টি সেভেন।সকাল সাড়ে ৯টা থেকে এক ঘণ্টার অভিযানে তামিমসহ তিনজন নিহত হন বলে মনিরুল জানান।তামিমকে গ্রেপ্তার করা গেলে জেএমবির নতুন ধারার আদ্েযাপান্ত বেরিয়ে আসবে বলে আশা করেছিলেন পুলিশ প্রধান শহীদুল হক। অভিযানের সময় উপস্থিত নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরা বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধারণা করা হচ্ছে, তারা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলেছে।তবে অভিযানের পর ওই এলাকা পরিদর্শনে যাওয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, তামিম চৌধুরীর অধ্যায় এখানেই শেষ হল।