গাজীপুরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জঙ্গলে নিয়ে মুক্তিপণ আদায়ে ব্যার্থ হয়ে এক নারী গার্মেন্টস কর্মীকে হত্যার দায়ে দু’জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড এবং অপর দু’জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে রায়ে দন্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। যাজ্জীবন দন্ড প্রাপ্তদের জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ মাসের করে সশ্রম কারাদন্ডাদেশ দেয়া হয়েছে। গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ এ.কে.এম এনামুল হক মঙ্গলবার দুপুরে এ রায় প্রদান করেন।
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো- মৃত আব্দুল হেকিমের ছেলে মোঃ কালাম (৩২) ও হাসেন আলী ডাক্তারের ছেলে ইকবাল হোসেন (২৪) এবং যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তরা হলো আব্দুল ছফুর উদ্দিনের ছেলে আব্দুল লতিফ (২৭) ও মফিজ উদ্দিনের ছেলে মোঃ মোখলেছ (২১)। তাদের সবার বাড়ি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী কাদিরা পাড়া এলাকায়।
গাজীপুর আদালতের পিপি অ্যাডভেকেট মোঃ হারিছ উদ্দিন আহমদ জানান, রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার মারিয়া গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে রুপালী খাতুন (২৫) গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় ভাড়া থেকে স্থানীয় গার্মেন্টসে চাকুরী করতো। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কালাম, লতিফ ও মোখলেছকে সঙ্গে নিয়ে ইকবাল হোসেন গত ২০১৪ সালের ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় গার্মেন্টস কর্মী রুপালী খাতুনকে শ্রীপুরের গিলাশ^র এলাকার মান্নানের খামারের পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে আসামীরা রুপালীর বাবার কাছে ২০ হাজার টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। টাকা আদায়ে ব্যার্থ হয়ে তারা রুপালীকে গলা টিপে হত্যা করে। পরে নিহতের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ওই খামারের সীমানা পিলারের সঙ্গে বেঁধে লাশটিকে বসিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে এলাকাবাসি লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে শ্রীপুর মডেল থানা পুলিশ অজ্ঞাত ওই তরুনীর লাশ উদ্ধার করে। এব্যাপারে শ্রীপুর মডেল থানার এসআই আঃ মালেক খান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে এঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ কালাম, লতিফ ও মোখলেছকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা রুপালীকে হত্যার করার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়। তদন্ত শেষে পুলিশ ইকবাল, কালাম, লতিফ ও মোখলেছের বিরুদ্ধে গত বছরের ২৮ এপ্রিল আদালতে চার্জশীট দাখিল করে।
শুনানীকালে ১১জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ শেষে ওই হত্যা মামলায় আসামিরা দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় মঙ্গলবার গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক ওই রায় প্রদান করেন। রায় ঘোষণাকালে আসামী কালাম, লতিফ ও মোখলেছ আদালতে উপস্থিত ছিল। অপর আসামী ইকবাল হোসেন ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন পিপি আলহাজ্ব মোঃ হারিছ উদ্দিন আহমেদ এবং আসামী পক্ষে ছিলেন মো: আবুল হাসেম।
মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।