22-08-16-PM_Gonobhaban-8সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে মাঝে-মধ্যে সুপরিকল্পিত ঘটনা ঘটানো হয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকারও আহ্বান জানান তিনি। শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী উপলক্ষে সোমবার (২২ আগস্ট) বিকেলে গণভবনে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু ধর্মসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মীয় গুরু হত্যা ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে মাঝে মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটানো হয়’। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সব ধর্মের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ষড়যন্ত্র থাকবে, কিন্তু তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব এবং আমরা ‍তা করতে পারবো’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই ভূখণ্ডের মানুষ আবহমানকাল থেকে এক সঙ্গে মিলে-মিশে আছেন। এখানে সব ধর্মের মানুষ মিলে-মিশে থাকার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যে দেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় সব ধর্মের মানুষের রক্ত মিলে-মিশে একাকার হয়ে গেছে, সে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে না’। ধর্মীয় স্বাধীনতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ম যার-যার, উৎসব সবার। যার যার ধর্ম সে পালন করবে। তবে প্রত্যেকের মধ্যে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ থাকতে হবে’।

তিনি বলেন, ‘ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই এ মাটিতে বাস করার অধিকার আছে। আপনারা সে অধিকার নিয়ে বাস করবেন, নিজ নিজ ধর্ম পালন করবেন’। সবাইকে নিজ নিজ ধর্মের মর্মবাণী, শান্তির বাণী প্রচার করার ‌আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সব ধর্মে শান্তির কথা বলা হয়েছে। অশান্তি মানুষ মানুষের সঙ্গে করে। কোনো ধর্মে অশান্তির কথা বলা নেই’। বিশ্ব সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে অশান্তি চলছে। আমেরিকার মতো জায়গায় মসজিদের ইমামকে হত্যা করা হয়। আমেরিকাতো সেক্যুলার কান্ট্রি।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে চেতনার উন্মেষ ঘটেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আহ্বান করেছিলাম। মানুষ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। মানুষ শান্তি চান। সবাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন’।

হিন্দু ধর্মে সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার প্রাপ্তির আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেক সময় স্বামী মারা গেলে বিধবা স্ত্রী করুণ অবস্থায় পড়ে যান। সন্তানরাও দুর্দশায় পড়েন। এটা তো হতে পারে না। এর কারণ, উত্তরাধিকার আইন নেই। আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে বাধা এসেছিলো আর আমরা থেমে গিয়েছিলাম’।

তিনি বলেন, ‘এখন আপনারা যদি চান এই আইন হবে। আপনারা আইনের খসড়া তৈরি করে দিন। আমরা পাস করে দেবো। আপনারা নিজেরা তৈরি করলে সেটা সবচেয়ে ভালো হবে’। হিন্দু ধর্মালম্বীদের কল্যাণে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কিছু চাইতে হয়নি। চাওয়ার আগেই আমরা সবার কল্যাণে জন্য অনেক কিছু করেছি’। এ সময় তিনি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্মাষ্টমীর আগাম শুভেচ্ছা জানান।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেষানন্দ মহারাজ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ পালিত, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রমেশ ঘোষ, বর্তমান সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল।