চাকরি ফিরে পেতে চান আলোচিত পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। চাকরিতে ফেরার আশায় ইতোমধ্যে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দফতরে দুই দফায় আবেদন করেছেন। স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের পরে চাকরি নিয়ে জটিলতায় পড়া এসপি বাবুল আক্তার গত ৯ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর লিখিত আবেদন পত্রে বলেন,গত ২৪ জুন পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে, বাধ্য হয়ে আমাকে চাকরির অব্যাহতি পত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। স্বেচ্ছায় দাখিল করিনি। ৯ আগস্ট এসপি বাবুল আক্তারের লেখা আবেদন পত্রটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘রিসিভ’ করে। এর আগে ৪ আগস্ট পুলিশ সদর দফতরে কাজে যোগদানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। যেখানে এসপি বাবুল আক্তার বলেন, Duties resume (দায়িত্বে পুনর্বহাল) করতে চাই। সংশ্লিষ্ট দফতরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের স্বাক্ষরিত ‘রিসিভ’ করা দুটি আবেদনপত্রই বাংলা ট্রিবিউনের হাতে রয়েছে। সরকারদলীয় এক নেতার কাছ থেকে আবেদনপত্র দুটি পেয়েছে বাংলা ট্রিবিউন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের আবেদনপত্র প্রাপ্তির কথা স্বীকারও করেছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি দেশের বাইরে আছি। ঢাকায় ফিরে কথা বলবো।
দুই আবেদনপত্রে যা লিখেছেন বাবুল আক্তার
অব্যাহতির আবেদন প্রত্যাহার করে নিতে এবং কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ চেয়ে দুটি আবেদনপত্র লেখেন পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তার। এরমধ্যে অব্যাহতির আবেদন প্রত্যাহার চেয়ে পত্রটি লেখেন ০৯ আগস্ট, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর। আর পুলিশ সদর দফতর বরাবর কাজে যোগ দেওয়ার পত্রটি লেখা হয়েছে ৪ আগস্ট। দুটি আবেদনপত্রই সরকারদলীয় এক নেতার কাছ থেকে বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। ওই দুই আবেদনপত্রে তিনি যা লিখেছেন, পাঠকদের জন্য তা (বাবুল আক্তারের লেখা বানান অক্ষুণ্ন) তুলে ধরা হলো-
চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদন প্রত্যাহারের আবেদনপত্র
বাবুল আক্তার এই আবেদনপত্রে বিষয় হিসেবে লেখেন, ‘চাকুরী হতে অব্যাহতির আবেদন প্রত্যাহার প্রসঙ্গে।’ এরপর তিনি লেখেন, ‘বিগত ০৫/০৬/২০১৬ ইং তারিখে আমার স্ত্রী নির্মমভাবে খুন হন। ঐ ঘটনার পর দুটি অবুঝ শিশু সন্তান নিয়ে আমি সীমাহীন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাই। আমি এতটাই শোকাহত ছিলাম যে, শুধু সন্তানদের কথা ভেবে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। শোকাগ্রস্ত ও অসহায় অবস্থায় আমি যখন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় অতিবাহিত করছিলাম, সেই সময় বিগত ২৪/০৬/২০১৬ ইং তারিখে পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে বাধ্য হয়ে আমাকে চাকুরির অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়। স্ত্রীর মৃত্যুশোক, সদ্য মাহারা দুটি শিশুর ব্যাকুলতার প্রতিকূল ও বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে আমি চাকুরি হতে অব্যাহতির আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করি। একজন সৎ পুলিশ অফিসার হিসেবে এবং আমার সন্তানদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন এই চাকুরী। এমতাবস্থায়, উক্ত অব্যাহতিপত্রটি প্রত্যাহারের আবেদন জানাচ্ছি, যা আমি স্বেচ্ছায় দাখিল করিনি।
অতএব, বিনীত নিবেদন এই যে, গত ২৪/০৬/২০১৬ ইং পরিস্থিতির শিকার হয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে দাখিলকৃত চাকুরী হতে অব্যাহতির আবেদনপত্রটি প্রত্যাহারপূর্বক আমাকে চাকুরীর সুযোগ দানের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জনাবের সদয় মর্জি হয়।’ আবেদনপত্রের নীচে বাবুল আক্তারের স্বাক্ষর, তার বিপি নম্বার (৭৫০৫১০৯০২৯) রয়েছে।
কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদনপত্র
কাজে যোগ দেওয়ার সুযোগ চেয়ে আবেদনপত্রএই আবেদনপত্রটি বাবুল আক্তার লেখেন পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (প্রশাসন) বরাবর। সেখানে তিনি লেখেন, ‘গত ৫ জুন আমার স্ত্রী আততায়ীর হাতে নিহত হন। ঐ ঘটনার সময় এবং পরবর্তীতে সরকার এবং আমার সহকর্মীদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা ও সহমর্মিতা পেয়েছি, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ঘটনার আকস্মিকতায় বিপর্যস্ত আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনাক্রমে আমার শ্বশুরের বাড়িতে অবস্থান করি। সর্বোপরি, আমার দুটি ছোট ছোট বাচ্চা তাদের মাকে হারিয়ে এতটাই অস্বাভাবিক হয়ে যায় যে, তাদের সঙ্গ দেওয়া ছাড়াও একাধিকবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। এই কঠিন সময়ের প্রতিটি পর্যায়ে আমি আমার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা আমার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি। তাঁরা উদারতার সঙ্গে আমাকে মৌখিকভাবে মা হারা দুটি বাচ্চার সাথে সময় কাটানোর এবং আমাকে মানসিক বিপর্যস্ততা থেকে উত্তরণের জন্য অকুণ্ঠ সহযোগিতা দিয়েছেন। একজন সৎ অফিসার হিসাবে আমার এবং আমার সন্তানদের জন্য বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আমার চাকুরী। এমতাবস্থায়, আমি অদ্য ০৪/০৮/২০১৬ ইং তারিখ পূর্বাহ্ন হতে আমার Duties resume (দায়িত্বে পুনর্বহাল) করতে চাই। এবং এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে জনাবের মর্জি হয়।’ এই আবেদনপত্রটি পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ‘রিসিভ’ করেছেন।
Source : বাংলা ট্রিবিউন