কুকুর লেলিয়ে হত্যায় ৫ আসামির ফাঁসি

চট্টগ্রামে কুকুর লেলিয়ে মেধাবী ছাত্র হিমাদ্রী মজুমদারকে হত্যার দায়ে পাঁচজনকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। অ রোববার বিকেল চারটার দিকে চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মো. ইুরুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেনএই পাঁচজন হলেন শাহ সেলিম ওরফে টিপু, শাহাদাত হোসেন, মাহাবুব আলী, শাহ সেলিমের ছেলে জুনায়েদ রিয়াদ ও তাঁর বন্ধু জাহিদুল ইসলাম তাঁদের মধ্যে কারাগারে আছেন শাহ সেলিম, শাহাদাত ও মাহাবুব।পলাতক আছেন জুনায়েদ ও জাহিদুল।

২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের পাঁচলাইশের একটি ভবনের পাঁচতলার ছাদে নিয়ে হিমাদ্রীকে মারধরের পর কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাঁকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। ওই বছরের ২৩ মে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান এ-লেভেলের শিক্ষার্থী হিমাদ্রী। হিমাদ্রী হত্যার ঘটনায় তাঁর মামা অসিত কুমার দে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ২০১৪ সালের ৩ ফেব্র“য়ারি আদালত পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।এর আগে গত ২৮ জুলাই এবং ১১ আগস্ট দুবার এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ পেছানো হয়।রায়ে হিমাদ্রীর বাবা প্রবীর মজুমদার সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।তবে রায় শুনে আদালত প্রাঙ্গণে মৃত্যুদন্ডাদেশ পাওয়া শাহ সেলিম নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, তিনি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অনুপম চক্রবর্ত্তী রায়ের পর বলেন, ৩০২/৩৪ ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত পাঁচজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- কার্যকরের আদেশ দিয়েছে।সর্বোচ্চ সাজার আদেশ পাওয়া পাঁচ আসামি হলেন- জাহিদুর রহমান শাওন, জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ, তার বাবা শাহ সেলিম টিপু, শাহাদাত হোসেন সাজু ও মাহবুব আলী ড্যানি।এদের মধ্যে শাওন জামিন নিয়ে এবং রিয়াদ মামলার শুরু থেকেই পলাতক। কারাগারে থাকা টিপু, সাজু ও ড্যানি রায়ের সময় কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন বলে অনুপম চক্রবর্তী জানান।নিয়ম অনুযায়ী আসামিরা সাত দিনের মধ্যে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন। তবে পলাতক আসামিদের সেই সুযোগ পেতে হলে আত্মসমর্পণ করতে হবে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল বন্দরনগরীর পাঁচলাইশ এলাকার সামারফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে হিমুকে ধরে নিয়ে যায় আসামি শাওন, রিয়াদ, সাজু ও ড্যানি। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য ‘এ’ লেভেল পাস করা হিমুর বয়স তখন ১৮ বছর।আসামিরা তাকে ধরে পাঁচলাইশ এলাকায় রিয়াদের বাবা ব্যবসায়ী টিপুর বাড়ির ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে আটকে রেখে মারধরের পর হিং¯্র কুকুর লেলিয়ে ও ধাক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেওয়া হয় ছাদ থেকে। হাসপাতালে ২৬ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ওই বছরের ২৩ মে মৃত্যু হয় হিমুর।হিমু খুনের ঘটনায় তার মামা শ্রীপ্রকাশ দাশ বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় এই হত্যা মামলা করেন। তদন্ত শেষে পুলিশ ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রায় দেড় বছর পর ২০১৪ সালের ৩ ফেব্র“য়ারি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে পাঁচ আসামির বিচার শুরু করে আদালত। ১৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।হিমুর মামা শ্রীপ্রকাশ আদালতে তার সাক্ষ্যে বলেন, স্থানীয় মাদকবিরোধী সঙ্গঠন শিকড়ের সদস্য ছিলেন হিমু। আর এ মামলার আসামিরা মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।২০১১ সালের ২৬ অক্টোবর শিকড়ের পক্ষ থেকে এম ইসমাইল নামের একজন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করলে ওই সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে আসামিদের বিরোধের সূত্রপাত হয়।মাদক সেবনে বাধা দেওয়ার কারণেই কুকুর লেলিয়ে হিমুকে হত্যা করা হয় বলে আদালতে বলেন শ্রীপ্রকাশ।রাষ্ট্রপক্ষে ২০ জনের সাক্ষ্য শুনে আদালত রায়ের জন্য প্রথমে ২৮ জুলাই ও পরে ১১ অগাস্ট দিন রাখে। দুই দফা পেছানোর পর অবশেষে রোববার পাঁচ আসামির সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।