বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি

পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পারিবারের সদস্য এবং আরো কিছু লোকের হত্যাকান্ডের স্মারক নয়।একই সাথে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির ঘটনাও নয়।এটি ছিল রাষ্ট্রীয় শাসনের, সরকারিযন্ত্রের ভিন্নপথে এবং স্বাধীনতার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ বিপরীত স্রোতের যাত্রার সূচনা। সোমবার ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদত বার্ষিকী।১৯৭৫ সালের শোকাবহ এই কালোদিবসে সূর্য ওঠার আগে খুব ভোরে সেনাবাহিনীর কিছুসংখ্যক বিপদগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে।

দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী,সহযোগী সহগঠনসহ সরকারি ও বেসরকারিভাবে সারাদেশে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করো হয়েছে।ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যাা পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে হত্যাকারীদের প্রতি ঘৃণার বিষবাষ্প। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর নোবেল জয়ী পশ্চিম জার্মানীর নেতা উইলি ব্রানডিট বলেন, মুজিবকে হত্যার পর বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যেকোন জঘন্য কাজ করতে পারে।বস্তুতো ১৯৭৫ সালের পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এক বিপরীত ধারার যাত্রা শুরু করে। বেসামরিক সরকার উৎখাত হয়ে সামরিক শাসনের অনাচারি ইতিহাস রচিত হতে থাকে ।

শুধু তাই নয়, পনেরই আগস্ট এর অন্যায় স্পর্ধাকে জাতি মেনে নিয়েছিল বলেই ১৫ বছর ধরে এ দেশে যথাক্রমে জেনারেল জিয়া এবং এরশাদের সামরিক স্বৈরাচার চলতে পেরেছে ।ড. হাসানুজ্জামান ১৫ই আগস্টের সামরিক অভ্যুথান মুজিব হত্যা ও ধারাবাহিকতা শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কেবল শেখ মুজিবের হত্যাকান্ডই ঘটেনি, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারেরই ক্ষমতাচ্যুতি হয়নি, ওই ঘটনার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছিল ।তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার, সরকার পরিবর্তনে তাদের ইচ্ছে-শক্তি ও রায়কে অস্বীকার করা হয়েছিল। কার্যত পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট বাংলাদেশে গণতন্ত্রকেই নিধন করা হয়েছে ।হাসানুজ্জামান বলেন, পঁচাত্তরের পনেরই আগষ্ট অভ্যুথান সংগঠিত করে শেখ মুজিব এবং তাঁর সহযোগিদের হত্যা করে এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে, নিজেদের ইচ্ছে মাফিক বেয়নটের ডগায় রাষ্ট্রপতি বানিয়ে, মন্ত্রিসভা গঠন করে, সরকার তৈরী করে সম্পূর্ণভাবে সংবিধান-বিযুক্ত করে ‘সুপ্রা কনসটিটিউশানাল’ কর্তৃত্ব দিয়ে সমগ্র দেশকে সামরিক আইনের আওতায় আনা হয়েছিল ।

১৫ই আগস্টের সামরিক অভ্যুথান মুজিব হত্যা ও ধারাবাহিকতা একটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী বিশ্লেষণ সর্ম্পকিত এই বইটি ১৯৯৪ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। হাসানুজ্জামান আরো বলেন, পনেরই আগস্ট এর অন্যায় স্পর্ধাকে জাতি মেনে নিয়েছিল বলেই ১৫ বছর ধরে এ দেশে যথাক্রমে জেনারেল জিয়া এবং এরশাদের সামরিক স্বৈরাচার চলতে পেরেছে। ১৫ আগস্টের অভ্যুথানকে অবৈধ বলে প্রতিরোধ করা হলে এর পর একর পর এক দু’ডজনেরও অধিক অভ্যুথান প্রক্রিয়া ঘটতো না। একের পর এক এত হত্যাকান্ড হতো না। ১৫ বছর দেশ সামরিক শাসনের কব্জায় থাকতো না।

বঙ্গবন্ধু হত্যার মাত্র কয়েকদিন পর ২৮ আগস্ট ‘দি গার্ডিয়ান’ লিখে পনেরই আগস্টের ঘটনার ভেতর দিয়ে যেন বাংলাদেশের জনগণ আইয়ুবের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মীয় প্রচারণা এবং সামরিক শাসনের কালে প্রত্যাবর্তন করেছে। পঁচাত্তরের মর্মান্তিক ঘটনার কয়েকবছর পর ১৯৮২ সালের ৫ এপ্রিল টাইম ম্যাগাজিনেও বলা হয়, ১৫ আগস্ট অভ্যুথান ও শেখ মুজিবের হত্যার পর গণতান্ত্রিক আমলের অবসান হয় ।

এদিকে পনেরই আগস্টের অভ্যুথানের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়েছিল তা যে সাংবিধানিক ভাবে বৈধ ছিল না খোদ সরকার প্রধান হিসাবে খন্দকার মোশতাক আহমদও তার প্রথম ভাষণে উল্লেখ করেছিলেন।পনেরই আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর প্রেসিডেন্ট হিসেবে অধিষ্ঠিত হন খন্দকার মোশতাক আহমদ। সামরিক আইনের জবর দখলকারী স্বত্বের জোরে, সরকার ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে জাতির উদ্দেশ্যে রেডিও ও টেলিভিশনে তিনি এদিন এক ভাষণ দেন ।১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট দৈনিক ইত্তেফাকে এ সংক্রান্ত সংবাদ ছাপা হয়। ভাষণে মোশতাক এক ঐতিহাসিক প্রয়োজনে এবং বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের সঠিক ও সত্যিকারের আকাঙ্খাকে বাস্তবে রুপদানের পূতপবিত্র কর্তব্য সামগ্রিক ও সমষ্টিগত ভাবে সম্পাদনের জন্য করুনাময়ের দোয়ার উপর ভরসা করে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সরকারের দাযিত্ব তার উপর অর্পিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।তবে তিনি বলেন, দেশের শাসন ব্যাবস্থার পরিবর্তন সর্ব মহলের কাম্য হওয়া সত্বেও বিধান অনুযায়ী তা সম্ভব না হওয়ায় সরকার পরিবর্তনের জন্য সামরিক বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয়েছে । মোশতাকের এই ভাষণে অবশ্য আরো একটি দাবি করা হয়েছে সেনাবাহিনীও এই পরিবর্তনের জন্য কাজ করেছে এবং সরকারের (তার) প্রতি অকুন্ঠ অনুগত্য ও আস্থা প্রকাশ করেছেন। তবে সেনাবাহিনীর পুরো অংশ এই ষড়যন্ত্র এবং অভ্যুথানের সাথে জড়িত ছিল তা কিন্তু এখনো উদঘাটিত হয়নি।

আর বিধান অনুযায়ী পরিবর্তন সম্ভব না হওয়ার কথা বলে নিজেই নিজের সরকারকে অবৈধতার সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন বলে অনেকে মনে করেন।

মোশতাক রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য হন ৬ নভেম্বর। রাষ্ট্রপতি হিসাবে ক্ষমতা লাভ করেন বিচারপতি আবু সাদত সায়েম। তবে মোশতাক অথবা সায়েমের অধীনে যে সরকার ছিল, তা আদৌ বৈধ ছিল না । এরা দুজনেই ক্ষমতায় বসেছিলেন সম্পূর্ণ বেআইনি পথে। আর এরই ধারাবাহিকতায় পরবর্তি সময়ে জিয়াউর রহমান এবং এরশাদ ক্ষমতায় আসলেও সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী বাতিল করে ২০১০ সালে হাইকোর্টের একটি রায়ে খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আবু সা‘দাত মোহাম্মদ সায়েম ও জিয়াউর রহমান এবং হুশাইন মুহাম্মদ এরশাদকে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারি হিসেবে রায় দেয়া হয় ।আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস নুহ উল আলম লেনিন বাসসকে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর থেকেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভুলন্ঠিত করার জন্য নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারায় মৌলবাদের রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটে।বঙ্গবন্ধুর দুই খুনিকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকরের আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত এম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় পালিয়ে আছেন। ওই দু’জনকেই ফিরিয়ে আনার আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান আইনমন্ত্রী। রোববার দুপুর দেড়টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় সরকারি শিশু পরিবার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদেরকে এ কথা জানান তিনি।আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের দায়ে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত নূর চোধুরী কানাডায় পালিয়ে আছেন। কানাডার আইন অনুসারে ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামিদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা বেশি। তারা আমাদের সাজা কমানোর বিষয়ে বলেছিলো। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায় কমানো যায় না বলে আমরা কানাডাকে জানিয়েছি। এখন তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

আর এম রাশেদ চৌধুরী রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেও আমাদের আলোচনা চলছে। অবশ্যই তাদের ফিরিয়ে আনা হবে।জঙ্গিবাদীদের বিচারের জন্য নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন নেই বলেও জানান আনিসুল হক।তিনি বলেন, জঙ্গিবাদীদের বিচারের জন্য বর্তমানে দেশে বিদ্যমান আইনই যথেষ্ট। নতুন কোনো আইন করার প্রয়োজন নেই। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে জঙ্গিদের বিচার করা হবে। এদিকে, বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত ১২ খুনির মধ্যে ছয়জনের রায় এখনো কার্যকর করা যায়নি। এমনকি এ ছয়জনের মধ্যে চারজনের অবস্থানও এখন নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাকি দু’জনের মধ্যে রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় আছেন।

তবে সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের একজন সাবেক রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান জার্মানিতে পালিয়ে আছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতে, সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি জটিলতা কাটিয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া দুই আসামিকে ফেরাতে যথেষ্ট চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ১৯৭৫ সালে হত্যাকনন্ডর পরবর্তী সরকারগুলো বঙ্গবন্ধু পরিবারের আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার না করে বিভিন্ন সময় পুর্নবাসন করেছে। বঙ্গবন্ধুকে খুনের পরে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ওই হত্যাকান্ডেজড়িত সেনা কর্মকর্তাদের বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনে চাকরিও দেওয়া হয়।১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খুনিদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দীর্ঘ পথপরিক্রমা শেষে ২০১০ সালে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ওই বছরের ২৭ জানুয়ারি দিবাগত রাতে খুনি সৈয়দ ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান ও মহিউদ্দিন আহমেদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। এ রায় কার্যকরের আগে ২০০১ সালে একজন আসামি আজিজ পাশা জিম্বাবুয়েতে মারা যান।বাকি ছয়জন এখনও পলাতক আছেন। তারা হলেন- এম রাশেদ চৌধুরী, নূর চৌধুরী, খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, আব্দুল মাজেদ ও মোসলেম উদ্দিন খান।সরকারের তথ্য মতে, রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় আছেন।

খন্দকার আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, আব্দুল মাজেদ ও মোসলেম উদ্দিন খান সম্পর্কে সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য নেই। এর মধ্যেও সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, মোসলেহউদ্দিন খান জার্মানিতে পালিয়ে আছেন। তবে জার্মানির কোথায় বসবাস করছেন তার সঠিক অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পলাতক বাকি তিনজনের বিষয়ে নানা তথ্য উঠে আসে। খন্দকার আবদুর রশিদ কোনো সময় পাকিস্তানে কোনো সময় লিবিয়ায়, শরিফুল হক ডালিম পাকিস্তানে, আবদুল মাজেদ সেনেগালে রয়েছেন বলে খবর বের হয়।

১৯৯৬ সালের ০২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম বাদী হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা করেন। ১৯৯৮ সালের ০৮ নভেম্বর তৎকালীন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ কাজী গোলাম রসুল মামলাটির রায়ে ১৫ জনকে মৃত্যুদন্ড দেন। নিম্ন আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও মৃত্যুদন্ড নিশ্চিতকরণের শুনানি শেষে ২০০০ সালের ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্ট বিভক্ত রায় দেন। রায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম রুহুল আমিন ১৫ আসামির ১০ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন। খালাস দেন পাঁচ আসামিকে। অপর বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ১৫ আসামির সবার মৃত্যুদ- বহাল রাখেন।নিয়ম অনুযায়ী ২০০১ সালের ৩০ এপ্রিল হাইকোর্টের তৃতীয় বেঞ্চের বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম ১২ আসামির মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন। খালাস দেন তিনজনকে। আসামিদের আবেদনের পর ২০০৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্ব তিন বিচারপতির বেঞ্চ পাঁচ আসামির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন।এর প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের ২৪ আগস্ট আপিল শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি ওই বছরের ৫ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন। আপিল শুনানির জন্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন ওই বছরের ০৪ অক্টোবর সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল ইসলামের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির বিশেষ বেঞ্চ গঠন করেন। শুনানি শেষে ১৯ নভেম্বর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন সর্বোচ্চ আদালত।এরপর আসামিদের করা পুনর্বিবেচনার আবেদনও ২৭ নভেম্বর খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ। একইদিন রাতে ৫ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়।