13-08-16-BD PM_Power-7

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তাঁর সরকার ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।তিনি ২০২১সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে দরিদ্রমুক্ত করবো, বাংলার দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবো।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য সংগ্রাম করেছেন। এখন তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা আমাদের দায়িত্ব। তাই তাঁর সরকার উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে দেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরটির অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্বোধন এবং আরো বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম ৮ লেন মহাসড়ক যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর মহাসড়ক উদ্বোধন এবং যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংকসহ) মাওয়া এবং পাঁচর-ভাংগা মহাসড়ক উভয়দিকে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প (পদ্মা সেতু লিংক রোড)এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন।প্রধানমন্ত্রী একইসঙ্গে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড-এর আওতাধীন ছয়টি উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন সম্পন্নের এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (কম্পিউটার এবং ভাষা শিক্ষণ ল্যাব) শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মুহ্ম্মাদ শফিউল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ,কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ এবং বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রী পায়রা বন্দরের বহিঃনোঙ্গর থেকে পণ্য খালাসের মাধ্যমে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।তিনি চিনের জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড থেকে পদ্মাসেতুর জন্য আনা ৫৩ হাজার মেট্রিক টন পাথর খালাস আরম্ভ করে বন্দরে পণ্য খালাসের কাজের সূচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় পায়রা বন্দরকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন পরিকল্পনার উল্লেখ করে বলেন, ফরচুন জাহাজ আমাদের জন্য ফরচুন নিয়ে এসেছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সচিব মনোয়ার ইসলাম, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব অশোক মাধব রায় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ এন সিদ্দিক স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, নতুন এ বন্দর ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য গড়ে উঠবে। শুধু দক্ষিণাঞ্চল না, সমগ্র বাংলাদেশ এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জন্যও একটা শুভ সূচনা।প্রকল্পের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ভিডিও কনফারেন্সে গণভবনের অনুষ্ঠানে যুক্ত হন। ভিডিও কনফারেন্সে স্থানীয় নেতারা অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ঘিরে নিজেদের আশার কথা জানান। শনিবার উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নিরাপদ বাল্কপণ্য নদীপথে পরিবহনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হল বলে জানান পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মো. সাইদুর রহমান।

পদ্মা সেতুর পাথর নিয়ে আসা এমভি ফরচুন বার্ড থেকে পণ্য খালাসের মধ্য দিয়ে পায়রার যাত্রা শুরু হয়। পাথর সরবরাহকারী চীনা কোম্পানির প্রতিনিধিও পায়রা বন্দরে বসে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন। শেখ হাসিনার সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যে ১০টি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে তার একটি পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর, এর মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতুও। মহেশখালীতে আরেকটি গভীর সমুদ্র বন্দরও রয়েছে অগ্রাধিকারের তালিকায়।২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে ১৬ একর জমির উপর পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়।এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্েয এই সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে জাহাজ ভেড়ার অবকাঠামো নির্মিত হয়ে যাওয়ায় আগেই ভিড়তে শুরু করেছে জাহাজ।

শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন সময় দক্ষিণাঞ্চল সফর করার সময় ওই অঞ্চলের সম্ভাবনার বিষয়টি নজরে আসার পর পায়রা বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন তিনি।পায়রা বন্দরের নামটা আমি দিয়েছি। পায়রা নামটাও খুব সুন্দর। পায়রা শান্তির প্রতীক।বন্দরের পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নৌবাহিনীর ঘাঁটি ও সেনানিবাস স্থাপনের কথাও জানান সরকার প্রধান।তিনি আরও বলেন, সেখানে জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠবে।পরিকল্পনা আছে, রেল যোগাযোগও পায়রা বন্দর পর্যন্ত নিয়ে যাব। এই সমুদ্র বন্দরটি ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও আগ্রহের কথাও জানান শেখ হাসিনা, যা থেকে বাংলাদেশও উপকৃত হবে। উত্তরে আসামের করিমগঞ্জ পযন্ত নৌপরিবহণের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে। যেটা ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ না, আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে।ভবিষ্যতে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর হবে বলে জানান তিনি।ক্যাপ্টেন সাইদুর বলেন, প্রাথমিকভাবে মাদার ভেসেল থেকে লাইটার জাহাজে পণ্য খালাস করে নৌপথে পরিবহন করা হবে। পণ্য খালাস ও পরিবহনের জন্য ইতোমধ্যে বন্দরে এসে পৌঁছেছে ১৫টি লাইটার জাহাজ।বন্দর এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করতে বিরামহীন কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, জেটি ও অত্যাধুনিক কনটেইনার ক্যারিয়ার, পানি শোধনাগার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড শুল্ক স্টেশন, নিরাপত্তা ভবনসহ প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণ হচ্ছে। নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডও।পায়রা বন্দরের এক কর্মকর্তা বলেন, বড় বড় জাহাজ যেন রামনাবাদ চ্যানেলে নির্বিঘেœ চলাচল এবং মূল বন্দরের জেটিতে নোঙ্গর করতে পারে সেজন্য চ্যানেলের গভীরতা পর্যবেক্ষণ করে খননের (ড্রেজিং)কাজ অচিরেই শুরু হবে।পটুয়াখালীর রাজস্ব বিভাগের উপ-পরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, গত ১ অগাস্ট বিকালে ৫২ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন পাথর নিয়ে নোঙ্গর করে বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড।এই পাথর ব্যবহার করা হবে পদ্মা সেতুর কাজে। গত ১ অগাস্ট পণ্য খালাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে তা স্থগিত করা হয়।

পায়রা বন্দর দক্ষিণ জনপদের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয়দের আশা, বন্দরটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হলে উপকূলীয় এলাকার হাজার হাজার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে।৬টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়তনে উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎকে বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত করতে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।তিনি বলেন, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধিতে তাঁর সরকার বেশ কিছু স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করায় এর সুফল ইতোমধ্যে জনগণ পেতে শুরু করেছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এই পদক্ষেপের ফলে দেশের ৭৮ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ পাচ্ছে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা এখন ১৫ হাজার মেগাওয়াট।প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের ৪৬৫টি উপজেলাকেই খুব শিগগিরই শতভাগ বিদ্যুৎ দেবো। ৭৮ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারছি। অচিরেই শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করে দেবো।এসময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়ে বিদ্যুৎ খরচ কমানোরও আহ্বান জানান তিনি।বিদ্যুতায়িত ৬টি উপজেলা হচ্ছে- গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, নারায়ণগঞ্জ বন্দর, নরসিংদীর পলাশ, চ্গ্রামের বোয়ালখালি, কুমিল্লা সদর এবং চাপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট।তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন (কম্পিউটার এবং ভাষা শিক্ষণ ল্যাব)এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে ২০০১টি কম্পিউটার ল্যাব এবং ৬৫ ল্যাংগুয়েজ ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় আযোজিত দেশব্যাপী শেখ রাসেল বিষয়ে কবিতা, রচনা এবং বক্তৃতাপ্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।পুরস্কার হিসেবে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অধিকারিকে যথাক্রমে ল্যাপটপ,ট্যাব এবং স্মাট ফোনসহ প্রত্যেককে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং শেখ রাসেল’র ওপর একটিসহ দুটি বই উপহার দেয়া হয়।অনুষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব বিষয়ে একটি ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন করা হয়।ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা বন্দর কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে পায়রা বন্দর প্রান্ত থেকে বক্তৃতা করেন- নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান এবং নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ।পায়রা বন্দর প্রান্তে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ,নূরে আলম চৌধুরী এমপি, পররাষ্ট্র সচিব মো.শহীদুল হক, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।অনুষ্ঠানে সংক্ষিপ্ত অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন-স্থানীয় বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমাযুন কবির এবং চিনের পাথর রপ্তানীকারক ফেলিক্স।ভিডিও কনফারেন্সে সব প্রকল্প উদ্বোধনের পরই প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় জনগণের সঙ্গে বিশেষ মোনাজাতে অংশ গ্রহণ করেন।