গাজীপুরের শ্রীপুরে ফিল্মি স্টাইলে বোমা ফাঁটিয়ে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হাইওয়ে থানার পাশের একটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির ঘটনায় দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে ঘটনার পরদিন শনিবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করতে পারে নি। আটককৃতরা হলো- শ্রীপুরের দরগার চালা এলাকার মৃত সাইদ আলীর ছেলে ফাইজ উদ্দিন (৫৫) ও একই থানার গলদা পাড়া গ্রামের ফাইজ উদ্দিনের ছেলে লালু (২৮)।
শ্রীপুর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা মোড় এলাকার সঙ্গীতা জুয়েলার্সের দোকানে হাত বোমা ফাটিয়ে স্বর্ণালংকার লুটের ঘটনায় ঘটনার রাতেই দু’ব্যাক্তিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে শনিবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করতে পারে নি।
প্রসঙ্গতঃ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা-চৌরাস্তা এলাকায় মাওনা হাইওয়ে থানার মাত্র কয়েক গজের ব্যবধানে ইয়াকুব আলী মাস্টার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় শংকর চন্দ্র দাসের মালিকানাধীন সঙ্গীতা জুয়েলার্সের দোকানে ফিল্মি স্টাইলে শুক্রবার দিবাগত রাত সাতটার দিকে এক দল ডাকাত হানা দেয়। পুলিশ, এলাকাবাসি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রথমে ডাকাতদলের ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সি দুই সদস্য ক্রেতা সেজে ওই দোকানে প্রবেশ করে। ডাকাতদলের অপর সদস্যরা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে দোকানের সামনে, মার্কেটের নীচে ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেয়। এরপর মার্কেটের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা ফ্লাইওভারের উপর থেকে ওই দোকান লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি হাত বোমার বিষ্ফোরণ ঘটায় ডাকাত সদস্যরা। একই সময়ে ওই মার্কেটের ভিতরে ও বাইরে অবস্থানরত ডাকাতদলের সদস্যরা ২৫/২৭টি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় এবং কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
এঘটনায় মার্কেটে জঙ্গী হামলা হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে লোকজন হুড়োহুড়ি করে পালাতে থাকে। এঘটনায় আশপাশের দোকানগুলো মুহূর্তেই বন্ধ হয়ে যায় এবং রাস্তা মানুষ শুন্য হয়ে পড়ে। এসময় ডাকাত দলের অপর কয়েক সদস্য পিস্তল উচিয়ে ওই জুয়েলার্সের দোকানে প্রবেশ করে দোকানের সবাইকে জিম্মি করে ফেলে। পরে ডাকাতরা স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করতে থাকে। লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকারগুলো ব্যাগে ভরে প্রায় ১৫ মিনিট ডাকাতি শেষে ফের বোমার বিষ্ফোরণ ঘটাতে ঘটাতে দু’টি মাইক্রোবাসযোগে ময়মনসিংহের দিকে পালিয়ে যায়। ঘটনার সময় ডাকাতদের বাধা দিতে গিয়ে দোকান মালিকের ছেলে সুব্রত চন্দ্র দাস (৩২), কর্মচারি নয়ন চন্দ্র (১৭) ও লিটন মিয়া (৪২) এবং ওই মার্কেটের মুদি ব্যাবসায়ী জাকির হোসেন (৩২) বোমার স্পিøন্টারের আঘাতে আহত হয়। এছাড়া ডাকাতদের বোমা হামলা ও গুলিতে আতংকিত হয়ে ছুটাছুটির সময় ও বোমার স্পিøন্টারে আরো অন্ততঃ ৬ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় সুব্রত চন্দ্র দাস ও লিটন মিয়াকে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও আহত অন্যদের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রেরণ করা হয়।
জুয়েলার্সের মালিক শংকর চন্দ্র দাস দাবি করেন, ডাকাতরা তার জুয়েলার্স থেকে প্রায় সাড়ে তিন’শ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতির সময় সংবাদ দেয়া হলেও ডাকাতদল ঘটনাস্থল ত্যাগের প্রায় ঘন্টা খানেক পর পুলিশ সেখানে আসে। পুলিশ ওই মার্কেটের পাশ থেকে অবিষ্ফোরিত একটি হাত বোমাসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছে।
মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।