হুঁশ ফিরেছে বুনো হাতিটির। শঙ্কামুক্ত হাতিটি দাঁড়াতে পারছে। এখন সে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার কামরাবাদ ইউনিয়নের কয়ড়া গ্রামে একটি আমগাছের সঙ্গে দড়ি ও শেকল দিয়ে বাঁধা। শিগগিরই হাতিটিকে গাজীপুরে নেওয়া হবে।ঢাকার বণ্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক অসীম মল্লিক দুপুরে জানান, হাতিটি এখন শঙ্কামুক্ত। তবে এখনো চিকিৎসা চলছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে হাতিটিকে গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নেওয়া হবে।
গত ২৮ জুন ভারতের আসাম রাজ্য থেকে বন্যার পানিতে ব্রহ্মপুত্র নদ বেয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে হাতিটি। এরপর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। হাতি উদ্ধার নিয়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল টান টান উত্তেজনা। চেতনানাশক ছোড়ার পর হাতিটির জলাশয়ে পড়ে যাওয়া, জনতার তৎপরতায় সেখান থেকে উদ্ধার পাওয়াÑএসব ঘটনা নিয়ে ব্যাপক উৎসাহ ও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে সংজ্ঞাহীন করার ১০ ঘণ্টা পর স্বাভাবিকভাবে দাঁড়িয়েছে দেড় মাস পর ধরা পড়া বুনো হাতিটি। এখন অপেক্ষা মাহুত দিয়ে বশে আনার; তারপরই জামালপুর থেকে হাতি ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে কামারাবাদ ইউনিয়নের কয়রা গ্রামে ট্রাংকুলাইজার বন্দুক থেকে ডার্ট ছুড়ে অচেতন করা হয় হাতিটি; এরপর কয়েকশ মানুষ পাঁচ টনের বেশি ওজনের পুরুষ হাতিটিকে জলাশয় থেকে লোকালয়ে টেনে তোলে।তারপর অচেতন হাতির চিকিৎসা শুরু হয়। শেষে শুক্রবার প্রথম প্রহরে হাতিটি শেকল পায়ে স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে পেরেছে, বলেন বন অধিদপ্তরের উদ্ধার দলের ভেটেরিনারি সার্জন সৈয়দ হোসেন।তিনি বলেন, ভারতীয় হাতিটির জীবন নিয়ে যে শঙ্কা ছিল তা ‘আর নেই’।অচেতন হওয়ার দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্য সাধারণত হাতির হুঁশ ফেরে; তবে এটি বেশ দুর্বল থাকায় দেরি হয়েছে। ১০ ঘণ্টা পর এখন পুরোপুরি দাঁড়াতে পেরেছে।রাতেই হাতিটিকে কলাগাছ ও অন্যান্য খাবার দেওয়ায় শারিরীক শক্তিও ফিরতে শুরু করেছে বলে জানান এ চিকিৎসক।সরিষাবাড়ির প্রত্যন্ত এ গ্রামে ট্রাক কিংবা ক্রেন যাওয়ার মতো অবস্থা নেই; সেক্ষেত্রে হাতিটিকে নিরাপদ জায়গা দিয়ে হাঁটিয়ে নিয়ে সরাতে হবে বলে জানান তিনি।
এখানে ৫-৭দিন আটকে রেখে খাবার দিয়ে, প্রশিক্ষণ দিয়ে বশ মানাতে হবে। এ গ্রাম থেকে গাড়ি চলাচলের রাস্তা প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। এখন বুনো হাতটিকে বশে আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।আপাতত হাতিটিকে বেঁধে রেখে পরে মাহুতের সাহায্যে বশে আনার চেষ্টা হবে বলে জানান তিনি।
হাতির সামনের ও পেছনের তিনটি পা বড় গাছের সঙ্গে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। মাহুত আসার পর আরও দুটো হাতির সঙ্গে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।একটা সময় আসবে, যখন মাহুত ডানে যেতে বললে ডানে যাবে, বাঁয়ে বললে বাঁয়ে যাবে। এরপর অন্য দুই হাতির পায়ের সঙ্গে বেঁধে হাটিয়ে নেওয়া হবে অন্তত এক কিলোমিটার। ততদিন পর্যন্ত আটক থাকবে সে। না হলে এখান থেকে হাতি সরানো যাবে না।
এই চিকিৎসক জানান, বশ মানানো গেলে মাহুতের সাহায্যে হাতিটিকে রাস্তার কাছাকাছি নেওয়া হবে। তারপর পরিবহনে করে ঢাকার সাফারি পার্ক কিংবা শেরপুরে গজনিতে ছেড়ে দেওয়া হবে।বন কর্মকর্তারা এর আগে জানিয়েছিলেন, হাতিটি উদ্ধারের পর বাংলাদেশের কোনো সাফারি পার্কে রাখা হবে। পরে গারো পাহাড়ের বনে ছেড়ে দেওয়া হবে, যাতে ভারত থেকে আসা হাতির পালের সঙ্গে এটি চলে যেতে পারে।বানের জলে ভেসে গত ২৬ জুন ভারতের আসাম হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম সীমান্তে আসে বুনো হাতিটি।কুড়িগ্রামের রৌমারীতে হাতিটি ছিল ৯ জুলাই পর্যন্ত। এরপর ১০ থেকে ১৩ জুলাই গাইবান্ধায়, ১৪-১৬ জুলাই জামালপুরে, ১৭-১৮ জুলাই বগুড়ায়, ১৯-৩০ জুলাই সিরাজগঞ্জে এবং তারপর ৩১ জুলাই থেকে আবার জামালপুরে চলে বেড়ায় সে।দেড় মাসের বেশি সময় ধরে নদী ও স্থলপথ মিলিয়ে চার জেলার কয়েকশ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে হাতিটি।গত ৩ অগাস্ট ভারতীয় একটি দল এসে উদ্ধার কাজে হাত লাগায়। কিন্তু তিন কৌশল ব্যর্থ হলে ভারতের দলটি আসামে ফিরে যায়।খাবারের প্রলোভনে সাড়া না দেওয়ায় বুনো হাতিটিকে বশে আনতে পোষা একটি মাদী হাতিও আনা হয়েছিল। কিন্তু পোষা হাতিটিকে উল্টো তাড়িয়ে দেয় বুনো হাতিটি।বুধবার প্রথমে প্লাস্টিক ডার্ট’ ছুড়লে তা হাতির গায়ে লেগে বেঁকে যায়। এরপর বৃহস্পতিবার মেটাল ডার্ট’ ছুড়ে হাতিটি অচেতন করা হয়।