মেয়র নাছির

ঘুষ না দেওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বরাদ্দ কম দেওয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন তুলেছেন, সে বিষয়ে তার ব্যাখ্যা চাইবে সরকার। মন্ত্রণালয় থেকে ৫ শতাংশ কমিশন চাওয়ার অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির।স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন,তাকে ব্যাখ্যা দিতে হবে। হি মাস্ট এক্সপ্লেইন,পরিষ্কার কথা। মন্ত্রণালয় থেকে বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে পরবর্তী সাতদিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আব্দুল মালেক বলেন, আমরা বিষয়টি গণমাধ্যমর মাধ্যমে জেনেছি। তাই বিষয়টি নিয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। মেয়রের ব্যাখ্যা পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান সচিব।বুধবার (১০ আগস্ট) নগরের থিয়েটার ইন্সটিটিউট চট্টগ্রাম মিলনায়তনে চট্টগ্রাম নগর সংলাপ’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র বলেন, মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তাকে ৫ শতাংশ করে দিতে রাজি না হওয়ায় করপোরেশনের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।বক্তব্যে মেয়র আরও বলেন, ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। আর ৫ শতাংশ কমিশন দিলে আনতে পারতাম ৩শ থেকে ৩শ ৫০ কোটি টাকা।

মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্ত স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশরে প্রকল্প অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘুষ চান; মন্ত্রণালয়ের জনৈক যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আপনার কাছে একটি নতুন পাজেরো জিপ চেয়েছেন; ৫ শতাংশ ঘুষ দিলে ৮০ কোটি টাকার পরিবর্তে ৩শ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতেন ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করে গত ১০ আগস্ট চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মর্মে ১১ আগস্ট তারিখে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। আপনার আনীত এ অভিযোগসমূহ গুরুতর। এতে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে, যার প্রমাণ প্রদান আবশ্যক।এর পরিপেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা কোথায় কখন আপনার কাছে ঘুষ দাবি করেছেন, কে কখন কোথায় পাজেরো জিপ চেয়েছেন, কোন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে কোন কর্মকর্তা জটিলতার সৃষ্টি করেছেন, সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক উপযুক্ত প্রমাণ আগামী সাতদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

এদিকে সকালে সচিবালয়ে ঈদে কোরবানির পশু জবাই করা বর্জ্য অপসারণ সংক্রান্ত বৈঠকে আ জ ম নাছির উপস্থিত থাকাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।বুধবার চট্টগ্রামে এক সভায় নাছির বলেন, দাবি মত’ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিলে যেখানে ৩০০ থেকে ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যেত, সেখানে তা না দেওয়ায় এসেছে মাত্র ৮০ কোটি টাকা।আমাকে বলা হল- করপোরেশনের জন্য যত টাকা চাই দেওয়া হবে থোক বরাদ্দ হিসেবে, তবে তার জন্য পাঁচ শতাংশ করে দিতে হবে।

সাম্প্রতিক এক ঘটনা তুলে ধরে মেয়র ওই অনুষ্ঠানে বলেন, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পাস করার জন্য একটি নতুন পাজেরো গাড়ি চেয়েছিলেন। নাছিরকে ওই অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে- এমন মন্তব্য করে স্থানীয় সরকার সচিব সাংবাদিকদের বলেন, তার কথা তিনি যা বলেছেন, আমরা তার কাছে জানতে চাইব, প্রমাণ চাইব। তিনি প্রমাণ দেবেন যে মন্ত্রণালয়ের কোন কর্মকর্তা তার কাছে জিপ চেয়েছেন। তিনি যার কথাই বলুক, সেটা উনি বলুক।উনি যে কথাগুলো বলেছেন, উনি একজন রাজনৈতিক নেতা এবং একজন মেয়র… সুতরাং উনার বক্তব্য উনিই স্যাটেল করুক। আমরা আজকেই (বৃহস্পতিবার) উনার কাছে ব্যাখ্যা চাচ্ছি।

এদিকে কোরবানির ঈদে নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই নিয়ে সিটি করপোরেশন ও কয়েকটি পৌরসভার প্রতিনিধিদের এক বৈঠকে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আসেন নাছির। মন্ত্রণালয় থেকে কোনো ধরনের চিঠি পেয়েছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, না।

কর্মকর্তাদের ঘুষ দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে নাছির বলেন, আমার মত করে আমি বলব। আমি এসেছি কাজে, আমি মিটিংয়ে এসেছি। মিটিংয়ের পরে কিছু দাপ্তরিক কাজ ছিল, সেগুলো নিয়ে (সচিবের সঙ্গে) কথা বলেছি।সাংবাদিকদের প্রশ্নে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমার কোনো প্রজেক্টে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি, আমি এটা বলতে পারি। উনি (মেয়র নাছির) যেহেতু অভিযোগ করেছেন উনিই এ ব্যাপারে বলতে পারবেন।আইভী বলেন, আমার প্রজেক্টগুলো পাস হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে বরাদ্দও পাচ্ছি। তবে চাহিদার তুলনায় কম পাচ্ছি।… আমাকে কখনও পারসেনটেজ দিয়ে অথবা কেউ… বলতে সাহস পায়নি।

চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ তদন্ত করে দেখা উচিত বলেও মন্তব্য করেন আইভী।নাছিরের অভিযোগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, ওই ধরনের কিছু’ তিনি শোনেননি।মিনিস্ট্রির কাজ ডেভেলপমেন্ট করানো। ডেভেলপমেন্ট করাতে হলে টাকা দেবে সরকার। মিনিস্ট্রি তো তার নিজস্ব ডেভেলপমেন্টের স্বার্থে সরকারের কাছে এ সব ডিপিপিগুলো পাঠাবে। আমাদের চেয়ে অনেক সময় উনাদের তাড়া বেশি থাকে।