মানবতাবিরোধী অপরাধে যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। বাকি সাতজনের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এ রায় দেওয়া হয়েছে। বুধবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দুই ও চার নম্বর অভিযোগে সাখাওয়াতকে মৃত্যুদণ্ড এবং বাকি সাত জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্য অভিযোগগুলোতে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর বাকি সাতজনের বিষয়ে সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করবেন কিনা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে সাখাওয়াতের আইনজীবীরা জানান, তারা রায়ে সন্তুষ্ট নন। পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে আসামির সঙ্গে দেখা করে এবং পরামর্শ করে তারা আপিল করবেন বলেও জানান। বুধবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে বিচারপতি আনোয়ারুল হক নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে রায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। শুরুতেই জানানো হয়, সংখ্যাগরিষ্ঠোর ভিত্তিতে রায় ঘোষণা হবে। ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যানের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম ৭৬৮ পৃষ্ঠার রায়ের সার সংক্ষেপ পড়া শুরু করেন। অপর বিচারপতি মো. সোহরাওয়ার্দীও এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি ২৬তম রায়। এ মামলায় সাখাওয়াত ছাড়া বাকি সাত আসামি হলেন- মো. বিল্লাল হোসেন বিশ্বাস, মো. ইব্রাহিম হোসাইন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, এম এ আজিজ সরদার, আব্দুল আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইসলাম ও মো. আব্দুল খালেক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপহরণ, আটক, নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচ অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
এদের মধ্যে সাখাওয়াত ও বিল্লাল আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকি ছয়জনকে পলাতক দেখিয়ে এ মামলার বিচার কাজ পরিচালিত হয়েছে। এ মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামি মো. লুৎফর মোড়ল কারাবন্দি থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে মারা যান।
আসামিদের বিরুদ্ধে আনা এক নম্বর অভিযোগে যশোরের কেশবপুর উপজেলার বোগা গ্রামে এক নারীকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ধর্ষণ, দ্বিতীয় অভিযোগে একই উপজেলার চিংড়া গ্রামের চাঁদতুল্য গাজী ও তার ছেলে আতিয়ারকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়। এছাড়া পরের দুটি অভিযোগ কেশবপুরের চিংড়া গ্রাম ও হিজলডাঙার ঘটনা। তিন নম্বর অভিযোগে মো. নুরুদ্দিন মোড়লকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও অভিযোগ চার নম্বরে আ. মালেক সরদারকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও খুন এর অভিযোগ আনা হয়েছে। সর্বশেষ পাঁচ নম্বর অভিযোগে কেশবপুরের মহাদেবপুর গ্রামের মিরন শেখকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ওই গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন এর কথা বলা হয়।
এর আগে বুধবার সকালে দুই আসামিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। রায়কে ঘিরে বরাবরের মতোই ট্রাইব্যুনাল এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের সবগুলো প্রবেশ পথে ছিল যথেষ্ট তল্লাশির ব্যবস্থা।
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাখাওয়াতসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে প্রসিকিউশনের তদন্ত দল। প্রসিকিউশনের আবেদনে ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর ট্রাইব্যুনাল সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে ২৯নভেম্বর রাজধানীর উত্তরখান থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আদালত নয়জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয়। এরপর ২৪ নভেম্বর অভিযোগ গঠনের ওপর পক্ষে-বিপক্ষে শুনানি শেষে ২৩ ডিসেম্বর বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।