10-08-16-PM_Blood Donation Program for Jatirpita-18সবাইকে রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একজন রক্ত দিলে একজন মানুষের জীবন বাঁচে। রক্ত দিলে শরীরের ক্ষতি হয় না। বরং ভালো হয়। দেওয়ার যদি ক্ষমতা থাকতো, তবে এখনও আমি রক্ত দিতে প্রস্তুত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (১০ আগস্ট) সচিবালয়ে আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি একজন রক্ত দেয়, তবে একজন মানুষের জীবন বাঁচে। রক্ত দিলে শরীরের ক্ষতি হয় না। বরং ভালো। রক্ত দিলে শরীরে নতুন রক্তকণিকা উৎপন্ন হয়। শরীর সুস্থ থাকে। দেশে ফেরার পর ১৫ আগস্ট রক্ত দিতাম। যত দিন বয়স ছিল, ততদিন রক্ত দিতাম। ৫৭ বছরের পর নাকি রক্ত দেওয়া যায় না। তাই রক্ত নেয় না। দেওয়ার যদি ক্ষমতা থাকতো, তবে এখনও আমি রক্ত দিতে প্রস্তুত।

‘বঙ্গবন্ধু আমাদের রক্তের ঋণে আবদ্ধ করেছেন, লাখো শহীদ আমাদের রক্তের ঋণে আবদ্ধ করেছেন। তাদের এ রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। এ দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়েই জাতির পিতা শহীদ হয়েছিলেন। জীবনের প্রতিটি স্তরে তিনি মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। শেষ পর্যন্ত রক্ত দিয়ে গেছেন। তার সেই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন মানুষকে রক্ত দিলে একজন মানুষের জীবন বাঁচবে। মানুষের সেবা হবে। এর চেয়ে বড় সেবা আর হয় না। তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের জনগণের কল্যাণে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সব দুঃখ-বেদনা ভুলে (প‍ঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর) দেশের জন্য কাজ করতে ফিরে এসেছি। মানুষের কল্যাণে কাজ করছি। এখানে আপনাদের সহযোগিতা চাই। মানুষের সেবা করা প্রতিটি সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব। সংবিধানে আছে, প্রজাতন্ত্রের জন্য যারা কাজ করেন, তারা কর্মচারী, জনগণের সেবক।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একাত্তরের আগে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে বাঙালির কোনো অধিকার ছিলো না। বঙ্গবন্ধু সবসময় বাঙালির অধিকার আদায়ের কথা বলেছেন। সে কারণে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এখান থেকে ১২শ’ মাইলেরও বেশি দূর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাংলাদেশকে শাসন-শোষণ করতো উল্লেখ করে সে সময়কার বঞ্চনার কিছু চিত্র তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাঙালি জনংসখ্যার দিকে থেকে ৫৬ ভাগ ছিলো, সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে তারা সে অধিকার ভোগ করতে পারতো না।

‘তখন কেন্দ্রীয় সরকারের সেক্রেটারি পদে একজন বাঙালিও ছিল না। কিন্তু তারা ছিল ২২ জন। জয়েন্ট সেক্রেটারি পদে পশ্চিমারা ছিল ৪২ জন, বাঙালি ছিল মাত্র ৮ জন। ডেপুটি সেক্রেটারি তারা ছিল ৫৯ জন, বাঙালি মাত্র ২৩ জন। প্রথম শ্রেণির গেজেটেড অফিসার ওরা ছিল ৩ হাজার ৭৬৯ জন, বাঙালি ছিল মাত্র ১১৮ জন।’

প্রধানমন্ত্রী এসময় সরকারি রেডিও-টেলিভিশন, রেলওয়ে, সশস্ত্র বাহিনীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেও বাঙালির বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই বঞ্চনার বিরুদ্ধে এবং বাঙালির অধিকারের কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেজন্য তাকে সবসময় নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। ‘স্বাধীন রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার পরও তিনি সবসময় ন্যায্য অধিকারের কথা বলেছেন। তার নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেয়েছি বলেই স্বাধীন রাষ্ট্রে আমরা কাজ করতে পারছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। যুদ্ধজয়ের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভারতের সৈন্য ফেরত পাঠানো হয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন নজির নেই। ‘তিনি শুধু স্বাধীনতা এনেই দেননি। মানুষের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মসূচিও হাতে নিয়েছেন। যুদ্ধের পর এ দেশে রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট ছিলো না। ছিল না অবকাঠামোগত কিছুই। জাতির পিতা সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তুলেছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শোকাভিভূত প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এ দেশের স্বাধীনতা চায়নি তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে হত্যা করতে ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করে।

‘যেসব আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিলো, পরে তাদের ষড়যন্ত্রেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা, আমার ভাই শেখ কামাল, শেখ জামাল, ছোট্ট রাসেলকেও তারা হত্যা করেছিলো।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিজয়ী জাতি, বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে যেন মাথা উঁচু করে চলতে পারি, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার পর মাত্র নয় মাসের মধ্যে জাতির পিতা বাঙালিকে স্বাধীন দেশের সংবিধান উপহার দিয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে তিনি জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধু বলে গেছেন প্রজাতন্ত্রের জন্য যারা কাজ করেন তারা কর্মচারীরা নন, জনগণের সেবক। আমাদেরও সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন সচিব কামাল আবদুল নাসের চোধুরী। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। বক্তৃতার পর রক্তদান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী।

গত বছর প্রথমবারের মতো রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তখন বিভিন্ন পর্যায়ের ৯৭ জন কর্মচারী স্বতঃস্ফূর্তভাবে রক্তদান করেন। এবার এ পর্যন্ত ৪২২ জন রক্তদানের জন্য নাম লিখিয়েছেন।