10-08-16-Jamalpur_Relief-13

নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দেশে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে উপকূলীয় অঞ্চলে এর মাত্রা বেশি। এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর এবং নৌবন্দরগুলোকে ২ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বৃহস্পতিবার বিকেলের আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম। এদিকে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বুধবার ভারী বৃষ্টি হয়। বৃষ্টিতে রাজধানীর অনেক এলাকা জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছিল। জলাবদ্ধতা নগরবাসীকে চরম ভোগান্তিতে ফেলে।অন্যদিকে, টানা বৃষ্টিতে বুধবার চট্টগ্রাম নগরের নিচু এলাকায় পানি উঠেছে। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ বেড়েছে নগরবাসীর। মৌসুমি নিম্নচাপের প্রভাবে এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে। একই কারণে সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত থেকে কখনো মাঝারি, কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি মাত্রায় এই বৃষ্টিপাত হচ্ছে।পতেঙ্গা আবহাওয়া দপ্তর সূত্র জানায়, উপকূলীয় গাঙ্গেয় এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে অবস্থানরত মৌসুমি নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বুধবার সকাল ছয়টার সময় খুলনা অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। সমুদ্রবন্দর, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

চট্টগ্রাম, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর এবং কক্সবাজারকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

10-08-16-Jamalpur_Relief-10

উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে তিন থেকে চার ফুটের অধিক উচ্চতার জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে বলে আবহাওয়া দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।নিম্নচাপটি আজ বুধবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে যশোর-চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে আশপাশের অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে। বুধবার নিম্নচাপটি খুব ধীরে উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ তথ্য জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, দুপুর থেকে ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। নিম্নচাপটি উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলের পর এটি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে যাবে। এর আগ পর্যন্ত বৃষ্টি খুব একটা কমবে না।আবহাওয়া অধিদপ্তরের আজকের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ‘রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে।

এদিকে, রাজধানীতে বিকেল পাঁচটার দিকে রামকৃষ্ণ মিশন রোডের পেয়াদা পাড়া মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ রহমতউল্লাহ। সেখানে জমে আছে হাঁটুপানি। ময়লা ওই পানি মাড়াতে গিয়ে চরম অসহায় বোধ করছিলেন তিনি। বললেন, জলাবদ্ধতা প্রতিবছরই হয়। দুর্ভোগও পিছু ছাড়ে না। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে মতিঝিল মধুমিতা সিনেমা হলের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছিলেন একদল মানুষ। এঁদের মধ্যে আরামবাগের বাসিন্দা আবদুর রশীদ বলেন, প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়েও কোনো রিকশা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, বেলা ১১টার দিকে বিশেষ প্রয়োজনে বেরিয়েছিলেন। সূর্যের তাপে মাথা ঘুরে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। এখন চলছে বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার সমস্যা।সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দেখা গেল আরামবাগ, ফকিরের পুল মোড় ও আশপাশের এলাকার পানি আর পানি। ফকিরের পুল থেকে নয়াপল্টন যাওয়ার পথে তীব্র যানজট। জলাবদ্ধতা ছাড়াও নয়াপল্টনে একটি ভবনে আগুন লাগার কারণে সেখানে যানজট সৃষ্টি হয়েছিল বলে দায়িত্বরত একজন পুলিশ জানান।গত দুই দিনের তীব্র গরমের পর এই বৃষ্টি কিছুটা স্বস্তির আভাস দিলেও জলাবদ্ধতা নগরবাসীকে চরম ভোগান্তিতে ফেলে

10-08-16-Jamalpur_Relief-5

রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের সামনে যখন তীব্র যানজট, শান্তিনগর মোড়ে তখন প্রায় কোমর পানি। ইস্টার্ন প্লাস বিপণিবিতানের সামনে থেকে শান্তিনগর মোড় ছাড়িয়ে চারদিকে ব্যাপক যানজট চোখে পড়ে। আশপাশে মৌচাক, মালিবাগ, সার্কিট হাউস রোড, নয়াপল্টন, পুরানা পল্টন, গুলিস্তান, মতিঝিল, দিলকুশা, বংশালসহ পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় পানি আর পানি। এ ছাড়া কে এম দাস লেন, অভয় দাস লেন, বৃষ্টিতে মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, দিলকুশা, পুরানা পল্টন, কাকরাইল, মৌচাক, মালিবাগ, শেরেবাংলা নগর, রামপুরা, পরীবাগ, মিরপুরের গোলচত্বর থেকে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, শুক্রাবাদ, পুরান ঢাকার অনেক এলাকায় গজলাবদ্ধতা হয়।ঢাকা ওয়াসার এক কর্মকর্তা বলেন, আগে ভারী বৃষ্টি হলে যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানি জমে থাকত, সেখানে এখন অল্প সময় পরই পানি সরে যায়। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ওয়াসা পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

চট্রগ্রাম: টানা বৃষ্টিতে নগরের হালিশহর, কাপাসগোলা, চকবাজার উর্দু গলি, শুলকবহর, বাদুড়তলা, ষোলোশহর, দুই নম্বর গেট, মোহাম্মদপুর, বহদ্দারহাট, আগ্রাবাদ সিডিএ, চান্দগাঁও, কাতালগঞ্জ, বাকলিয়াসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।সরেজমিনে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শুলকবহর মুন্সিরপুকুর পাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, হাঁটুসমান পানি। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহিম জানালেন, সকাল থেকে এখানে পানি উঠেছে। সামান্য বৃষ্টিতেই এ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।দুপুর ১২টার দিকে নগরের চকবাজারের উর্দু গলিতে দেখা যায়, হাঁটুসমান পানি থই থই করছে। এর মধ্যে এলাকার বাসিন্দারা চলাফেরা করছেন। নালার ময়লা-আবর্জনা ভাসছে এই পানিতে।

10-08-16-Jamalpur_Relief-3

টানা বৃষ্টিতে নগরের চকবাজার মুন্সিরপুকুর পাড় এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়। এ সময় দুর্ভোগে পড়ে এলাকাবাসী। ছবিটি বুধবার বেলা একটার দিকে তোলা। জুয়েল শীলবৃষ্টির কারণে নগরে যানবাহনের সংখ্যাও কমে যায়। এর ফলে রিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া বেড়ে যায়।নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে আরও বেশ কিছু সময়। আপাতত বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত এরকম বৃষ্টিপাত হবার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে। তবে এরপরও আকাশ মেঘলা থাকার কারণে বৃষ্টিপাতের হার বাড়তে পারে।এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অন্যদিকে নিম্নচাপের কারণে ১ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বিদ্যমান আছে।

মাদারীপুর: পদ্মা নদী উত্তাল থাকায় মাওয়ার সঙ্গে মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের নৌ যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। ওই নৌপথে লঞ্চ ও সিবোট চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে কয়েকটি ফেরি।বুধবার সকাল থেকে এসব নৌপথে নৌযানগুলোকে চলাচল না করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি)।বিআইডব্লিউটিসির কাওরাকান্দি ঘাটের ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম বলেন, সকাল থেকে পদ্মা নদী বেশ উত্তাল। নদীতে ¯্রােতও বেশি। এ কারণে মাওয়ার সঙ্গে মাদারীপুরের কাওরাকান্দি ও কাঁঠালবাড়ি এবং শরীয়তপুরের মঙ্গলমাঝি ঘাটের নৌপথে লঞ্চ ও সিবোট চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করা হয়েছে। আটটি ডাম্ব ফেরি চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তবে চারটি রোরো ও চারটি কে-টাইপের ফেরি দিয়ে যাত্রীবাহী গাড়ি ও যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতির কারণে এ মুহূর্তে পণ্যবাহী গাড়ি পারাপার করা সম্ভব হচ্ছে না। বেলা ১১টার দিকে কাওরাকান্দি ঘাটে পণ্যবাহী পাঁচ শতাধিক ট্রাক পারাপারের অপেক্ষায় ছিল।আব্দুস সালাম বলেন, পলি জমে নদীতে কোথাও কোথাও ডুবোচর তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে নদীও উত্তাল। তাই ফেরিগুলোকে ঘাটে পৌঁছাতে যেখানে সোয়া ঘণ্টা লাগত, এখন আরও এক ঘণ্টা বেশি লাগছে।লঞ্চ মালিক সমিতির মঙ্গলমাঝি ঘাটের ব্যবস্থাপক মোকলেছ মাদবর বলেন, মাওয়ার সঙ্গে এ পারের তিনটি ঘাটে প্রতিদিন ৮৭টি লঞ্চ ও ছয় শতাধিক সিবোট চলাচল করে। আজ সকাল থেকে নৌযানগুলো বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়ায় চারটি ঘাটে হাজার হাজার যাত্রী আটকা পড়েছে।

10-08-16-Jamalpur_Relief-1

শিবালয়: পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে অচলাবস্থা চার দিনেও কাটেনি। দৌলদিয়ার তিন ও চার নম্বর ঘাটে ইউটিলিটি ফেরি দিয়ে ছোট যানবাহন লোড-আনলোড করা হচ্ছে। তবে এখনও বন্ধ রয়েছে রো রো ফেরি চলাচল। সেইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে যাত্রীবাহী বাস-ট্রাক পারাপার।বুধবার দুপুরে বিআইডব্লিটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শেখ মো. জানান, ঘাট সচল হলেই রো রো ফেরি চলাচল শুরু হবে। বর্তমানে চালু থাকা ঘাট দু’টি রো রো ফেরি ভেড়ানোর জন্য উপযোগী নয়।এদিকে ৩ নম্বর ঘাটটি পুরোপুরি সচল করতে বুধবার মেরামতের কথা থাকলেও বৈরি আবহাওয়ায় নদী উত্তাল ও ¯্রােতের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

বিআইডব্লিউটি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহ আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে এলেই সংস্কার কাজ শুররুহবে।এদিকে, বৈরি আবহাওয়ার কারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। বিশেষ করে সকাল থেকে প্রচ- বৃষ্টির কারণে নারী-শিশু যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো চরমে উঠেছে।ভারী বৃষ্টিতে কক্সবাজারের মহেশখালীতে পাহাড়ধসে মোহাম্মদ কাউছার (১৩) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মাইজপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত কাউছার ওই এলাকার আবু ছিদ্দিকের ছেলে।স্থানীয় কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, সকালে কাউছার পাহাড়ের পাদদেশে ঘাস কাটতে যান। এ সময় ভারী বৃষ্টিতে হঠাৎ ওপর থেকে পাহাড় ধসে পড়লে সে মাটিতে চাপা পড়ে। খবর পেয়ে স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সাতক্ষীরা: টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরা পৌর এলাকাসহ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক এলাকায় বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। ডুবে গেছে রাস্তা-ঘাট। পানিবন্দি হয়ে আছে হাজারো মানুষ। মঙ্গলবার বিকেলে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বুধবার বিকেলেও বৃষ্টি থামেনি। টানা বৃষ্টিতে জেলার আশাশুনি উপজেলার কয়েক হাজার বিঘা জমির ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা বিসিক শিল্পনগরী। সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা আলী নুর খান বাবুল জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত হওয়ার পথ না থাকায় তাদের এলাকায় কোমর পানি জমেছে। অনেকের ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। সুলতানপুর কাজীপাড়ার আহসানুর রহমান রাজীব জানান, বৃষ্টির পানিতে তাদের এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। এতে নলকূপ, টয়লেট সব একাকার হয়ে গেছে। বক্সচরার আবুল কালাম জানান, টানা বৃষ্টিতে তাদের এলাকার ৫০টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বক্সচরা বিলের পানি পরানদহা বিলে না যাওয়ায় তাদের এলাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আশাশুনি উপজেলার খাজরার কৃষ্ণ ব্যানার্জি জানান, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘা জমির ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। একাকার হয়ে গেছে সবকিছু। বাড়িঘরে পানি উঠেছে। এদিকে, বৃষ্টিতে তালা উপজেলা পরিষদের অফিসেও পানি উঠেছে। সাতক্ষীরা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, মঙ্গলবার থেকে বুধবার সকাল ৯টা পর্যন্ত জেলায় ১০৪ সেন্টেমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সাতক্ষীরা পৌর মেয়র তাসকিন আহমেদ চিশতি জানান, তিনি ও সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এক সঙ্গে পৌর এলাকার জলাবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করছেন। তারা জলাবদ্ধতা নিরসনের চেষ্টা করছেন।

কলাপাড়া: নিজামপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ ভাঙ্গায় পানিবন্দী ২৩০ পরিবারকে একটি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে বিশ^ খাদ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তা প্রদানের ঘটনা একটি অনলাইন পেইজে অপপ্রচার করে এ কার্যক্রম ব্যাহতের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। বুধবার বেলা ১১টায় কলাপাড়া প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কৃষক আব্দুর রশিদ হাওলাদার। তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান, আমরা যখন পানিবন্দী দশায় দিশেহারা তখন জরুরি ভিত্তিতে বিশ^ খাদ্য সংস্থার সহায়তায় একটি বেসরকারি সংস্থা সবচেয়ে বেশি বিপদাপন্ন ২৩০ টি পরিবারকে চার হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। যা ৩ আগস্ট উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বিপদাপন্ন পরিবারের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু স্থানীয় একটি মহল উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে এ কার্যক্রমকে ব্যাহত করতে ইন্টারনেটে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে। রশিদ হাওলাদার আরও বলেন, মাত্র আর এক মাস এ সহায়তা প্রদান করা হবে আমরা জানতে পেরেছি। তিনি দাবি করেন, এটি বন্ধ করতে ওই চিহ্নিত মহল স্থানীয় ইউপি নির্বাচনের বিরোধকে পুঁজি করে এমন অপপ্রচার করেছে। আব্দুর রশিদ জানান, এমনিতেই অন্তত হাজারো পরিবারে এখন চলছে চরম দুর্দশা-দুরাবস্থা। তার মধ্যে ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতের কোন উদ্যোগ নেই। সেখানে দুই শতাধিক বিপদাপন্ন পরিবারকে সহায়তার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা সরকারি প্রশাসনের উদ্যোগে এগিয়ে আসলে তাও বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এসময় নিজামপুরসহ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামের একাধিক ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। তারা এ অপপ্রচারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিপদাপন্ন মানুষকে সহায়তার ধারা অব্যাহত রেখে এর সংখ্যা আরও বৃদ্ধির দাবি করেন। পায়রা বন্দরসহ কলাপাড়ার গোটা উপকূলে দূর্যোগপুর্ণ আবহাওয়া ॥

এদিকে, পায়রা বন্দরসহ কলাপাড়া উপজেলার গোটা উপকূলজুড়ে বইছে দূর্যোগপুর্ণ আবহাওয়া। তিনদিন এ অবস্থা বিরাজ করছে। থেমে থেমে দমকা ঝড়োহাওয়া বইছে। মঙ্গলবার রাতে কয়েকদফা মাঝারি ধরনের দমকা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। ফলে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বহু গাছপালা ভেঙ্গে গেছে। দ্বিতীয় দফায় কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। ডুবে আছে অন্তত ৫০টি গ্রাম। পানিবন্দী এসব মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তার মধ্যে তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও ঝড়োহাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সাগর প্রচন্ড উত্তাল থাকায় অধিকাংশ মাছ ধরার ট্রলার কিনারে ফিরে এসেছে। এদিকে ৫৩ হাজার টন পণ্যবাহী পায়রা বন্দরে আসা প্রথম জাহাজ ফরচুন বার্ড (মাদার ভ্যাসেল) বহির্নোঙ্গরে আটদিন ধরে অবস্থান করছে। দূর্যোগপুর্ণ আবহাওয়ার কারণে পণ্য খালাশ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দূর্যোগপুর্ণ আবহাওয়ার কারণে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন এখানকার লক্ষাধিক আমন চাষী। তারা এখন পর্যন্ত বীজতলা তৈরির কাজ সম্পন্ন করতে পারেন নি। আকাশ প্রচন্ড মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। থেমে থেমে পুবের দমকা হাওয়া বইছে। সাগর-নদীতে বইছে অস্বাভাবিক জোয়ার। বেড়িবাঁধের বাইরে অন্তত চার হাজার দরিদ্র পরিবার চরম ঝুঁকি নিয়ে অবস্থান করছে। বিপন্ন রয়েছে মহিপুর, লালুয়া ও ধানখালীর অন্তত সাত হাজার পরিবার। এরা সবাই প্রতিদিন জোয়ারের দুই দফা প্লাবনে ভাসছে। আবহাওয়া বিভাগ তিন নম্বর সতর্ক সঙ্গেত দেখিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে।