সন্তু লারমা

পাহাড়ের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সমতলের জনগণের মধ্যে সংহতি স্থাপন ও সর্ম্পক উন্নয়নের পাশাপাশি পার্বত্য চট্রগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। দেশের ক্ষদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রতি বঞ্চনার মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি তাঁর ভাষায়, শিক্ষা থেকে ভূমি হয়ে এখন এই বঞ্চনা বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা এসব কথা বলেন।শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জনসংহতি সমিতির এই নেতা বলেন, ‘জাতীয় শিক্ষা নীতিতে আদিবাসীদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির বিকাশকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বিকাশের লক্ষ্যে বাস্তব কোনো কার্যক্রম সরকার নিচ্ছে না। বরং জনমত উপেক্ষা করে রাঙামাটিতে মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে যা আদিবাসীদের শিক্ষা বিকাশে অপরিহার্য নয়।

সন্তু লারমার অভিযোগ, দেশে আদিবাসীদের জাতিসত্তা ও ভূমির অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নেই। আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত আদিবাসীদের প্রথাগত ভূমি অধিকার সরকার উপেক্ষা করছে। ফলে ভূমি দখলের উৎসব শুরু হয়েছে। তাঁদের মানবাধিকার পরিস্থিতি খুবই করুণ। হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ১৯ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও সে চুক্তির কোনো মৌলিক বিষয় বাস্তবায়ন করা হয়নি। অপরদিকে, সরকার একের পর এক পার্বত্য চুক্তিবিরোধী ও আদিবাসীদের স্বার্থের পরিপন্থী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। ন্যাশনাল পার্ক, ইকো পার্ক, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, সামাজিক বনায়ন, সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প ও স্থাপনা সম্প্রসারণ প্রভৃতি কারণে আদিবাসীরা ভূমিহীন হচ্ছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে সন্তু লারমা বলেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি যেভাবে ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের সুপারিশ করেছিল, সেভাবেই মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে কি না সে বিষয়ে তাঁরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানেন না। আর পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আয়কর অব্যাহতির যে ধারা চালু রয়েছে, তা অব্যাহত রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী কর্মসূচি ও ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। কর্মসূচির প্রথম দিন আগামীকাল রোববার আদিবাসী-বিষয়ক সংসদীয় ককাসের উদ্যোগে সিরডাপ মিলনায়তনে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑপার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নে সময়সূচিভিত্তিক পরিকল্পনার পথনকশা ঘোষণা করা, শিক্ষা বিস্তার, সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠন, আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা প্রভৃতি।সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, লেখক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও আদিবাসী-বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সমন্বয়ক মেজবাহ কামাল। তাঁরা বলেন, এসব দাবির মধ্য দিয়ে দেশের ৩০ লাখ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বুকের ভেতর জমে থাকা কান্নার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। তাঁরা দাবিগুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং সংবাদ সম্মেলনে সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করেন। আদিবাসী ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেনসহ কয়েকজন নেতা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।