বাংলাদেশে ‘একনিষ্ঠ যোদ্ধা’ পাঠিয়েছে আইএস!

বাংলাদেশে একের পর এক ভিন্ন মতাবলম্বী ও সংখালঘু হত্যাসহ গুলশান ও শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলা,কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে আইএস রয়েছেÑ পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো এমন প্রচারণা চালালেও সরকার আইএসের অস্তিত্ব বরাবরই অস্বীকার করে বলছে,দেশিয় জঙ্গিগোষ্ঠীরাই এসব হামলা করছে।বার্তা সংস্থা রয়টার্স, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এবং এনবিসির প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আইএস ও বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ। কোন কোন দেশে আইএস বিস্তার লাভ করছে- হোয়াইট হাউসের এ বিষয়ক এক গোপন নথির বরাতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসি।

ন্যাশনাল কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের ওই নথিতে জঙ্গিদের কার্যক্রম পরিচালনার সর্বশেষ মানচিত্রে দেখা গেছে, আইএস বিশ্বের ১৮টি দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে।নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মোট ১৮ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ,ইন্দোনেশিয়া, মালি, ফিলিপাইন, মিসর ও সোমালিয়ায় শিকড় গাড়তে অবকাঠামো তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে আইএস।সিরিয়া থেকে জার্মানিতে পালিয়ে আসা হ্যারি সারফো নামের সাবেক এক আইএস জঙ্গির সাক্ষাতকার নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস।পত্রিকাটি জার্মানিতে আটক সারফোকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, আইএসের এমনি নামের একটি বিশেষ সেলের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালানোর জন্য সক্ষম জঙ্গিদের চিহ্নিত করে দায়িত্ব দেয়া হয়। আইএস নিয়ন্ত্রিত এলাকার বাইরের জঙ্গি হামলাগুলোর পরিচালনা ও সমন্বয় করে এমনি।প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের বাংলাদেশসহ অস্ট্রিয়া, জার্মানি, লেবানন, তিউনিসিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছে।

আইএসের এমনি প্রশিক্ষিত শত শত যোদ্ধা নিজেদের দেশে ফেরত গেছে বলেও জানিয়ে সারফো বলেন, অবকাঠামো তৈরিতে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার আল কায়েদা প্রশিক্ষিতদের দলে টানছে আইএস।এদিকে, বাংলাদেশে আইএস রয়েছে, নেই আইএসÑ এ বিতর্কের মধ্যেই ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে ঘটে গেছে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ আর এর সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করে হামলার সামর্থ্য ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জানানও দিয়েছে জঙ্গিগোষ্ঠীটি।শুধু তাই নয়, গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরে পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে নিহত ৯ জঙ্গির কাছেও মিলেছে আইএসের পোশাক ও পতাকা। এছাড়াও দেশের বেশ কয়েকজন ভিন্ন মতাবলম্বী ও সংখ্যালঘু হত্যার দায়ও স্বীকার করেছে আইএস।

তবে দেশে আইএসের অস্তিত্ব বরাবরই অস্বীকার করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এসব হামলার পেছনে আইএস নয়, রয়েছে আইএস নাম ব্যবহার দেশিয় জঙ্গি সংগঠনগুলো।৩ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকা-ে সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের নাম প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের পুলিশ, তাদের অনেককেই নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে আইএস।
বাংলাদেশে গত মাসে যে ২৬১ জনের নিখোঁজ তালিকা প্রকাশিত, এর মধ্যে জিলানি বা আবু জিদাল, সিরিয়ায় লড়াইতে নিহত হয়েছেন।প্রতিবেদনে, সিঙ্গাপুরভিত্তিক রাজারত্মম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক রোহান গুনারতœার গবেষণার উল্লেখে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জঙ্গিরা ইসলামিক স্টেটের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা ও নির্দেশনা পাচ্ছে। এদিকে, রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজানে জিম্মি হামলার এক মাস পর বৃহস্পতিবার নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিম ও কানাডা প্রবাসী যুবক তাহমিদ হাসিব খানের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।এর আগে গুলশান হামলার ঘটনায় তাহমিদ হাসিব খান ও হাসনাত করিমকে ৫৪ গ্রেপ্তার দেখিয়ে সিএমএম আদালতে আদালতে হাজির করে তাদের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্যান্সনেশনাল ক্রাইম ইউনিট এর পরিদর্শক মোহাম্মদ হুমায়ন কবির।পরে ঢাকা মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিনের আদালতে শুনানি শেষে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গুলশান লিঙ্করোডের আড়ংয়ের সামনে থেকে বুধবার সন্ধ্যায় নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজাউল করিম এবং রাতে বসুন্ধরার জি-ব্লক থেকে কানাডা প্রবাসী যুবক তাহমিদ হাসিব খানকে আটক করা হয়।

রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজানে থেকে উদ্ধার হওয়া হাসনাত করিম ও তাহমিদ হাসিব খান পুলিশের নজরদারিতে রয়েছে বলে গত মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক।গত ১ জুলাই শুক্রবার রাত পৌঁনে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানে স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হোলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি ২০ নাগরিক নিহত হন। আর সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় ৬ জঙ্গি।আর কমান্ডো অভিযানের আগে, ভোর বেলায় যে কয়েকজনকে জঙ্গিরা ছেড়ে দেয়। তাদের মধ্যে হাসনাত করিম ও তার পরিবারের সদস্যরা এবং তাহমিদ ছিলেন। মোট ৩২ জিম্মিকে উদ্ধার করা হয় ওই রেস্টুরেন্ট থেকে। ভোরে ছেড়ে দেয়া জিম্মিদের মধ্যে হাসনাত করিম ও তাহমিদের রহস্যজনক আচরণের কারণে গোয়েন্দা কার্যালয়ে কয়েকদিন জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের ছেড়ে দেয়ার কথা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হলেও তাদের অবস্থান জানা যায়নি।একজন কোরিয়ান নাগরিকের গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে হলি আর্টিজানে হামলার ছবি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই হাসনাত করিম ও তাহমিদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। ওই ছবিতে হলি আর্টিজানের জিম্মি ঘটনায় তাকে জঙ্গিদের কয়েকজনের সঙ্গে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাঁটতে ও কথা বলতে দেখা যায়।

রাজধনীর গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার এক মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো মূলহোতা তামিম চৌধুরী বা এ ঘটনার নেপথ্য হোতাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো খুঁজছে জঙ্গি হামলার মাস্টারমাইন্ডদের।গুলশান-শোলাকিয়া ও কল্যাণপুরের আস্তানার জঙ্গিরা জেএমবির সদস্য বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। আইএস নয় বরং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালেই এসব ঘটনা বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে বেশ অগ্রগতি রয়েছে এবং খুব শিগগিরই এসব ঘটনার পিছনের সব বিষয় উদঘাটিত হবে।গত ১ জুলাই গুলশানে রেস্তোরায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হয়। এর রেশ কাটতে না কাটতে এক সপ্তাহ পর শোলাকিয়ার জঙ্গি হামলা ঘটনা ঘটে। খুঁজে পাওয়া যায় গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার যোগসূত্র।

এর ১৯ দিন পর গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন স্পটে অভিযান চালাতে গিয়ে রাজধানীর কল্যাণপুরের আস্তানায় জঙ্গিদের মুখোমুখি হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের অভিযানে মারা পরে ৯ জঙ্গি। নিহতদের মধ্যে ছিল তাদের এক প্রশিক্ষকও।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তাদের তৎপরতায় জঙ্গিদের তৃতীয় হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বড় ধরণের হামলা থেকে থেকে রক্ষা পেয়েছে সাধারণ মানুষ।

তদন্তে বেরিয়ে আসতে থাকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পারে এসব হামলার পিছনের হোতাদের নাম। গুলশান ও শোলাকিয়া হামলা এবং কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের মধ্যে যোগসূত্রও খুঁজে পাওয়া যায়।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরা তদন্তে নিশ্চিত যে, জঙ্গি তৎপরতার মূলহোতা বাংলাদেশি বংশদ্ভুত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। তাকে ও কল্যাণপুরে অভিযানের সময় পালিয়ে যাওয়া আরেক জঙ্গিকে এখন খোঁজা হচ্ছে।আর তাদের সন্ধান বের করার জন্য ভারতের সহায়তাও চেয়েছে বাংলাদেশ সরকার।জানা গেছে, এসব জঙ্গি প্রশ্রিক্ষণ নিয়েছে গাইবান্দার সাদুল্যাপুর চরে। তারা ভাগ ভাগ হয়ে বিভিন্ন মিশনে নামে। হামলার আগে ঝিনাইদহ, বারিধারা, কিশোরগঞ্জে ও কল্যাণপুরে আস্তানা গাড়ে। জঙ্গিরা বারবার তাদের আস্তানা পরিবর্তন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াত। সনাতনি পদ্ধতিতে জঙ্গি হামলা চালিয়ে কাজ না হওয়ায়, প্রযুক্তি নির্ভর, উচ্চ শিক্ষিত ও বিত্তবানদের সন্তানদেরকে টার্গেট করছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এসব ঘটনার যোগসূত্র একই দাবি করে বলা হয়েছে, দ্রুতই এর পিছনের রহস্য উন্মোচিত হবে।এসব হামলা দেশিয় জঙ্গিরাই সংগঠিত করছে, তারা তাদের মতো কাজ করে আইএসকে জানায়।তবে তাদের নেতৃত্বে থাকা জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসের কোনো যোগসূত্র থাকতে পারে বলেও মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এসব ঘটনার মাস্টামাই-দের আইনের আওতায় আনতে না পারলে আরো জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথাও জানান তারা।বিশ্লেষকরা মনে করেন, আইএস ফমূর্লা ব্যবহার করে এর নেতৃত্ব দিচ্ছে যুদ্ধাপরাধী রাজনৈতিক দল জামাত।তাদের অর্থদাতাও এ দলটি উল্লেখ করে তারা বলেন, কঠোর হস্তে এদের আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়া উচিত।তাহলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না বলেও মত তাদের।

এদিকে, পুলিশের নিখোঁজ তালিকায় যে দুজন নারীর নাম এসেছে তারা সর্ম্পকে দুই বোন। তাদের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। এরমধ্যে সায়মা আক্তার মুক্তার স্বামী সাইফুল হক সুজন ২০১৫ সালে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলায় নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া বোন রাবেয়া আক্তার টুম্পাসহ মুক্তা গত কয়েক বছর ধরেই নিখোঁজ ছিলেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ার ডুমুরিয়া ইউনিয়নের করফা গ্রামের প্রয়াত ছোলেমান শেখের মেয়ে সায়মা আক্তার মুক্তা ও রাবেয়া আক্তার টুম্পা স্বামী-সন্তানসহ কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ বলে সরকারের একটি উচ্চপর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে।

মুক্তা ও টুম্পার বিয়ে হয়েছিল খুলনার পাকুরতিয়া গ্রামের একেএম আবুল হাসনাতের দুই ছেলে সাইফুল হক সুজন ও শরীফুল হক ইমনের সঙ্গে।এদের মধ্যে মুক্তার স্বামী সুজন ২০১৫ সালে সিরিয়ায় আইএসের আস্তানায় বিমান হামলায় নিহত হন বলে টুঙ্গীপাড়া থানার ওসি মো. মাহমুদুল হক জানিয়েছেন।তিনি বলেন, মুক্তার স্বামী সাইফুল হক সুজন সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলায় ২০১৫ সালের দিকে মারা যান। ওই সময় তিনি আইএস ঘাঁটিতেই ছিলেন।ওসি মাহমুদুল বলেন, এ ঘটনার পর জঙ্গি অর্থায়নে সহযোগিতার অভিযোগে রাজধানীর কারওয়ানবাজার থেকে সুজন-ইমনের বাবা হাসনাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশÑবর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, মুক্তা ও টুম্পার সঙ্গে টুঙ্গীপাড়ায় তাদের বাবার বাড়ি করপাড়া এবং শ্বশুরবাড়ি খুলনার পাকুড়তিয়া গ্রামের কোনো যোগাযোগ নেই।আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সুজনের সর্বশেষ বাসার ঠিকানা ছিল খুলনার ইকবাল নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে এবং ইমনের সর্বশেষ ঠিকানা ছিল ঢাকার মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ১ নম্বর গেটের পাশে। তবে ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ করেও দুজনের কোনো আত্মীয়-স্বজনের সন্ধান মেলেনি।অন্যদিকে, বুধবার মুক্তা ও টুম্পার গ্রামের বাড়ি টুঙ্গীপাড়ার করফা গ্রামে গিয়ে তাদের পরিবারের কারো সন্ধান মেলেনিÑ ওই বাড়িতে তাদের দূর সম্পর্কের চাচা আসাদ শেখ ও তার স্ত্রী বিউটি বেগম সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন।বিউটি বেগম বলেন, ছোলেমান শেখের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেইÑ ছোলেমান খুলনায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। সেখানেই তার মেয়েরা বড় হয়েছে, বিয়ে দিয়েছে।খুলনার পাকুড়তিয়া গ্রামবাসী থেকে জানা গেছে, এ গ্রামের আবুল হাসনাতের ছেলে ও সাইমা আক্তার মুক্তার স্বামী সাইফুল হক সুজন গতবছর সিরিয়ায় আইএসের আস্তানায় রুশ হামলায় নিহত হন বলে এলাকার সবাই জানে।সরকারের উচ্চপর্যায়ের ওই সূত্র বলছে, এ দুই বোন তাদের স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে সিরিয়ায় যান সবাই। সেখানেই আইএসবিরোধী হামলায় মারা পড়েন সুজন। তবে মুক্তা ও টুম্পা এখন সিরিয়া না বাংলাদেশে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জের এ দুই বোনের পাশাপাশি আরো চার জনের নিখোঁজের তথ্য রয়েছ্।েতারা হলেন- সাবেক সচিব মোহাম্মদ মূসা সাদিকের ছোট ছেলে সাইমুন হাছিব মোনাজ, গাজীপুরের শ্রীপুরের কেওয়াবাজার গ্রামের মৃত তৌহিদুল ইসলামের ছেলে মো. রিদওয়ান ইসলাম তুহিন, আশুলিয়ার টুঙ্গাবাড়ীর আবদুর রহমান মাসুদ এবং বগুড়ার একেএম তাকিউর রহমান। এদিকে, দেশে আইএস এর অস্তিত্ব নেই, হুজি, আনসার উল্লা বাংলা টিম, জেএমবি ও শিবির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের কর্মকান্ড আইএসের নামে প্রচার করছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।শুক্রবার সকালে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা এ দেশে হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন চালিয়েছে। পঁচাত্তরের পর এই চক্রটিই হাতের ও পায়ের রগ কেটে আত্মপ্রকাশ করে। এরপর বিভিন্ন সময় জেএমবি, হুজি নানা নাম নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে তারা।এসব গোষ্ঠীর সবাই একÑ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, তারা এখন নিজেকে আইএস দাবি করতে শুরু করেছে।