Bazil

একের পর এক সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলায় শঙ্কিত বিশ্ববাসী। তবে, শঙ্কাটা কিছুটা বেশি ব্রাজিলে। আগামী ০৫ আগস্ট থেকে ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিওতে শুরু হতে যাচ্ছে ক্রীড়া বিশ্বের সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক। জঙ্গিদের নিশানা এবার রিও, এমনই আশঙ্কা করছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা।

রিও অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভেন্যু মারাকানার পাশে সন্ত্রাসীদের ঠেকানোর রিহার্সাল অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ব্যবহার করা হয় অলিম্পিকের জন্য তৈরি ব্রাজিলের বিশেষ রোবট। নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিল বিশেষ ফোর্স।

রিহার্সেলের অংশ হিসেবে দেখানো হয় বোমা বিস্ফোরণের শব্দে সবাই আতঙ্কিত হয়ে ছোটাছুটি শুরু করেন। খুব দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় বিশেষ ফোর্স এর সদস্যরা। কর্ডন করে ফেলা হয় বিস্ফোরণের জায়গা। এরপর রোবট পাঠানো হয় বোমা বিস্ফোরণের জায়গায়। রোবটের মাধ্যমেই নিষ্ক্রিয় করা হয় অবিস্ফোরিত বোমাগুলো।

এভাবেই ব্রাজিলকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার পাশাপাশি কোনো বাজে ঘটনার দ্রুত সমাধান করবে দেশটির সরকার। তারপরও অলিম্পিকের শহরকে বাড়তি সতর্ক থাকতে বলেছেন ব্রাজিলের গোয়েন্দারা। হঠাৎ করেই কোথাও হামলা হলে কিভাবে তা ঠেকানো হবে, তারই কৌশল হিসেবে এই মহড়া দেয় নিরাপত্তা বাহিনী। সে সময় মাঠের ভেতর চলছিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মহড়া।

বৈশ্বিক ক্রীড়ার সবচেয়ে বড় আসর অলিম্পিক নিয়ে শঙ্কার শেষ হচ্ছে না। কারণ, ব্রাজিল অলিম্পিক আয়োজনের পর থেকে এর বিরোধিতা করে আসছিল দেশটির একদল জনতা। এর বড় কারণ ধরা হচ্ছে দেশটির অর্থনৈতিক মন্দা। এর আগে ব্রাজিল বিশ্বকাপের আসরেও (২০১৪) সেখানে বিরোধিরা দাঙ্গা-হাঙ্গামা চালায়। ফলে ধারণা করা হচ্ছে অলিম্পিক আয়োজনের পর আরও খারাপ অবস্থায় যেতে হতে পারে ব্রাজিলকে।

অ্যাথলেট ভিলেজে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাথলেটরা যে ভবনটিতে অবস্থান করছিলেন, গত পরশু সেই ভবনের নিচ তলায় আগুন লাগে। এটা নিয়েও অ্যাথলেটদের মনে ভীতি ঢুকে গেছে। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ব্রাজিল কর্তৃপক্ষ অজি অ্যাথলেটদের বাইরে বের করে আনেন। আর সেই সুযোগে অ্যাথলেটদের রুম থেকে ব্যবহৃত ল্যাপটপ খোয়া যায়। চোর শুধু ল্যাপটপ চুরিই করেনি, জিকা ভাইরাস থেকে বাঁচতে অ্যাথলেটদের জন্য তৈরি বিশেষ পোশাকও চুরি করে।

অলিম্পিকের নিরাপত্তা নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন ব্রাজিলের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মাইকেল টেমার। তার নির্দেশ মতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হচ্ছে। দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, পুলিশ এবং সেনাবাহিনী মিলিয়ে ব্রাজিলে মোট পঁচাশি হাজার নিরাপত্তাকর্মী রয়েছেন। যাদের ওপর দশ হাজার পাঁচশো অ্যাথলেট ও অলিম্পিকের জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে আসা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ভার দেওয়া হয়েছে।

তবে, কড়া নিরাপত্তা স্বার্থে আরও কর্মী বাড়ানো হবে বলে জানান ব্রাজিলের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান সার্জিও এতচেগোয়েন। তিনি জানান, ব্রাজিল অলিম্পিকের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছিল ৮৫ হাজার পুলিশ ও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত থাকবে। যা ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের দ্বিগুণ। কিন্তু, ক্ষেত্রবিশেষে সেটাকে আরও বাড়ানো হয়েছে। পুরো দেশটিকে আমরা ঘিরে রাখার জন্য নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও বাড়িয়েছি।

রিও অলিম্পিককে সামনে রেখে ব্রাজিল সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা মহড়া থেমে নেই। ব্রাজিলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাউল জুংম্যান নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে জানান, এখন পর্যন্ত কোনো দেশ নির্দিষ্ট করে কোনো সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকির ব্যাপারে আমাদের সতর্কবার্তা দেয়নি। তারপরও আমরা দেশের অভ্যন্তরীন প্রতিটি চেক পয়েন্টে নিরাপত্তাপ্রহরী আরও বাড়াব।