বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নাম ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন আ স ম হান্নান শাহ। এই কারণে বলে বলেও জামায়াত নিষিদ্ধের কোনো উদ্যোগ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন এই সরকার নিচ্ছে না বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স হলে জিয়া পরিষদের ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ বলেন, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি জাতীয় ঐক্য গড়বে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলাচনা করা হবে। তখন সরকারকেও আহ্বান জানাবো। তাতে সাড়া না দিলে ভাববো, আপনারাও সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত।

হান্নান শাহ বলেন, সরকার সন্ত্রাসীদদের তথ্য না নিয়ে বিএনপি নেতাদের তথ্য নিতে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই সরকার সন্ত্রাসীদের ‘প্রত্যক্ষ মদদদাতা। এটি একটি ‘অপদার্থ’ সরকার।জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে হান্নান শাহ বলেন, তারা (সরকার) বলছে, সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য হয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জনগণের সঙ্গে তাদের ঐক্য হয়নি। তাদের ঐক্য হয়েছে এক সময়কার গণবাহিনীর ইনুর সঙ্গে।

হান্নান শাহ আলোচনা সভায় বলেন, হাই কোর্টে মামলা হয়ে গেছে, জামায়াত নির্বাচন করতে পারবে না, প্রতীক পাবে না, তাদের নিবন্ধন বন্ধ হয়ে গেছে।সরকারকে বলব, তাহলে এত চিন্তা করেন ক্যান? আপনারা মিটিং করে বলেছিলেন, জুন মাসের মধ্যে তাদেরকে (জামায়াত) বন্ধ করবেন, কই? কইও নাই, খইও নাই। তাহলে বোঝা গেল, এরাও (সরকার) এই জামায়াত কার্ড রাজনেতিক কার্ড হিসেবে খেলছে। যেমন ভারত খেলে কাশ্মিরে যখন গন্ডগোল হয়, পাকিস্তানি কার্ড খেলে তারা, বলেন বিএনপি নেতা।হাই কোর্টের রায়ে ইসিতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দলটি কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও রাজনৈতিক দল হিসেবে তৎপরতা চালাতে পারছে।

যুদ্ধাপরাধের দন্ডিত জামায়াতের শীর্ষনেতাদের রায়ে একাত্তরে ভূমিকার জন্য দলটিকে ক্রিমিনাল দল বলা হয়েছে। তার ভিত্তিতে দলটির যুদ্ধাপরাধের বিচার করে একে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে, তেমনি নাশকতার জন্য দায়ী করে দলটি নিষিদ্ধের দাবিও রয়েছে।আওয়ামী লীগ নেতারা বলে এলেও জামায়াত নিষিদ্ধে কোনো উদ্যোগ না দেখে তার সমালোচনা করছেন তাদের জোট শরিক দলের নেতারাও। জামায়াতের জোট শরিক বিএনপির নেতা হান্নান শাহ বলেন, এই সরকার সবসময় উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপায়। কথায় কথায় বিএনপি-জামায়াতের কথা বলে। কাজটা করে উল্টো।

আমি একটা চ্যালেঞ্জ দেই, গত ২০ বছরে কয়টা বিএনপি ঘরনার মানুষ আওয়ামী লীগের ঘরনার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, সেটা আমার কাছ থেকে নেন। পক্ষান্তরের আওয়ামী লীগ ঘরানার কতগুলো মানুষ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে আত্মীয়তা করেছেন, ওইটার একটা হিসাব নেন। তাহলে দেখা যাবে…. এখন জামায়াতের প্রিয় কারা, কারা অপ্রিয়, সেটা বলতে চাই না।

জঙ্গিদের মোকাবেলায় খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যেও ডাকে সরকারকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার আসবে বলে মনে হয় না। তবুও বলব, যদি রামের সুমতি হয় এবং তারা আসেন সেটা দেশের জন্য মঙ্গল হবে।নইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের নেতৃত্বে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক নেতারা বসে সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য সম্মেলন করব।আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দেশের সম্পদ পাচারের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, শত শত উদাহরণ দেখাতে পারব, উন্নয়নের নামে এদেশের সম্পদ কী করে লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।মালয়েশিয়ায় যান দেখবেন, এদেশের কত মানুষ ঘোরাঘুরি করছে। ওদের ভূমি অফিসে যাবেন, গত তিন বছরে কত বাংলাদেশি মানুষ সেকেন্ড হোম করেছে। তার মধ্যে বিএনপির কয়জন, আওয়ামী লীগের কয়জন। সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করছি, যান না ঘুরে আসেন, গিয়ে দেখে আসেন।জিয়া পরিষদের উদ্যোগে ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান কবীর মুরাদ।