মাস্টারমাইন্ড’ তামিম চৌধুরীবাংলাদেশে জেএমবির যে ভগ্নাংশটি আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অনুসারী হয়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, এ অংশের শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরী কল্যাণপুরের জঙ্গি নিয়মিত আস্তানায় যেত বলে তথ্য পেয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক তামিম চৌধুরী দেশে ফিরে আত্মগোপন করে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছে। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় দায়ের করা মামলার এজাহারেও এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলো জানায়, আরও কয়েকজনের সঙ্গে তামিম চৌধুরীই দেশীয় জঙ্গিদের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় তামিম চৌধুরীর যাতায়াতের বিষয়টি গ্রেফতারকৃত আসামি রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান পুলিশ কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, তামিম চৌধুরী বর্তমানে জেএমবির একাংশের নেতৃত্বদানকারীদের একজন। সে দেশেই আত্মগোপন করে রয়েছে বলে তথ্য রয়েছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলা বলা হয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান জানিয়েছে, কল্যাণপুরে তাদের জঙ্গি আস্তানায় তামিম চৌধুরী, রিপন, খালিদ, মামুন, মানিক, জোনায়েদ খান, বাদল ও আজাদুল ওরফে কবিরাজ নামে ব্যক্তিরা নিয়মিত যাতায়াত করত। তারা তাদের ধর্মীয় ও জিহাদি কথাবার্তা বলে উদ্বুদ্ধ করত। প্রয়োজনী টাকা-পয়সা দিয়ে যেত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান আরও জানায়, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন ও সমর্থনপুষ্ট অন্যান্য সংগঠনের নেতা, কর্মী ও সমর্থক তাদের এ কাজে অর্থ, অস্ত্র, গোলা-বারুদ, বিস্ফোরক দেওয়াসহ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে সহায়তা ও প্ররোচনা দিত।

জঙ্গি প্রতিরোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ ও অর্থদাতাদের মধ্যে কিছু লোককে তারা শনাক্ত করেছেন। গ্রেফতারকৃত হাসানের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে আগের গোয়েন্দা তথ্যের কিছু মিল পাওয়া গেছে। কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা জানান, রাকিবুল হাসানের দেওয়া নামগুলোর মধ্যে তামিম চৌধুরী ও জোনায়েদ খান ছাড়া অন্য নামগুলো জঙ্গি নেতাদের ছদ্মনাম বলে মনে হয়েছে। কারণ জঙ্গিরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম-পরিচয়ে তাদের কার্যক্রম চালায়। যেন স্লিপার সেলের সদস্যরা কখনও গ্রেপ্তার হলে শীর্ষ নেতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে না পারে। তারপরও শারিরীরিক বর্ণনা শুনে ও আগে থাকা গোয়েন্দা তথ্য মিলিয়ে তাদের কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে।

সিটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কিছু কিছু তথ্য দিলেও অসুস্থ থাকায় তাকে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। সে সুস্থ হলে তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার কাছ থেকে জঙ্গি নেটওয়ার্কের আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করা যেতে পারে। পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, জঙ্গিদের এমনভাবে মোটিভেট করা হয়, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও তাদের কাছ থেকে তথ্য উদ্ধার করা যায় না। প্রশিক্ষণের সময় মাস্টারমাইন্ডরা তাদের শেখায় যে, পুলিশের হাতে ধরা পড়লে নিজেকে মৃত বা শহিদ মনে করতে হবে। মৃত মানুষ যেমন কোনও তথ্য দিতে পারে না, তেমনি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও কোনও তথ্য দেওয়া যাবে না।