25-07-16-Jamalpur_Flood-4

উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। অন্তত ১২ জেলার প্লাবিত এলাকায় কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা সংলগ্ন নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া,সিরাজগঞ্জ; গঙ্গা-পদ্মা সংলগ্ন রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর এবং সুরমা-কুশিয়ারা সংলগ্ন সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কেন্দ্রের সর্বশেষ পর‌্যবেক্ষণ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত অনুযায়ী, দেশের নদনদীগুলোর ৯০টি পয়েন্টের মধ্যে ১৭টিতে পানি বিপদসীমার ওপরে বইছে।ধরলা নদী কুড়িগ্রামে, তিস্তা নদী ডালিয়ায়, ঘাঘট নদী গাইবান্ধায়, ব্রহ্মপুত্র চিলমারীতে, যমুনা বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজিপুর ও সিরাজগঞ্জে, গুর নদী সিংড়ায়, আত্রাই নদী বাঘাবাড়িতে, ধলেশ্বরী এলাসিনে, পদ্মা গোয়ালন্দ ও সুরেশ্বরে, সুরমা নদী কানাইঘাট ও সুনামগঞ্জে, কংস নদী জারিয়াজঞ্জাইলে ও তিতাস নদীর পানি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পয়েন্টে বিপদসীমার দুই থেকে ১০৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী রিপন কর্মকার জানান, উজানের ঢলে বন্যার বিস্তার ঘটছে।এখন পর‌্যন্ত ১২টি জেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও সুরমা-কুশিয়ারা নদনদীগুলোর পানি সমতলে বাড়ছে। উজানে আরও দুইদিন বৃষ্টি থাকতে পারে। এর প্রভাবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদী সংলগ্ন জেলায় অন্তত তিনদিন পানি বাড়বে, এত পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে পারে।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে আরও দুই দিন উজানে বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে বুধবার পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে, তবে মঙ্গলবারের পর সুরমা-কুশিয়ারায় পানি কমতে পারে, বলেন তিনি।আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামী তিনদিন বৃষ্টিপাত থাকতে পারে।মঙ্গলবারের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণও হতে পারে।গত ২৪ ঘণ্টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বোচ্চ ১৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।এক সপ্তাহ ধরেই বন্যা পরিস্থিতিতে থাকা দেশের দেশের উত্তারাঞ্চলে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছালেহ উদ্দিন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উত্তরের বন্যায় কয়েক লাখ লোক পানিবন্দি রয়েছে। তাদের জন্য ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রয়েছে।মাঠপর্যায় থেকে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য নিচ্ছি আমরা। বিশুদ্ধ পানি, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও শুকনো খাবার সরবরাহের উদ্যোগ চলছে।

কুড়িগ্রাম:ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ফুলকুমারসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে চিলমারী শহর রক্ষা বাঁধ।

ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবহিত হচ্ছে। চরম দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসি প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ। পানির স্রোতে সদরের যাত্রাপুর বাজার রক্ষা বাঁধের ১শ মিটার ধসে যাওয়ায় ১৫টি বাড়ি ও ১০টি দোকান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কুমরপুর এলাকায় কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী মহাসড়কে পানি ওঠায় ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী উপজেলার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে চিলমারী শহর রক্ষা বাঁধ। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, নাগেশ্বরী, রৌমারী, রাজীবপুর, ফুলবাড়ীসহ ৯ উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩ লক্ষাধিক মানুষ। খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে বানভাসি মানুষ। সরকারের বিতরণ করা ত্রাণ অনেকের ভাগ্যে জুটছে না। বন্যা কবলিত এলাকায় কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। কুড়িগ্রামে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আকতার হোসেন জানান, ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও ১৯২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার পাওয়া গেছে, যা বিতরণ করা হচ্ছে। নতুন করে ৫শ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা ও দুধকুমারের পানিও।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঘাঘটের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।সোমবার সকালে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি বিপদসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি ১৯ দশমিক ৮২ সেন্টিমিটার, ঘাঘট ২১ দশমিক ৭০ সেন্টিমিটার, করতোয়া ২০ দশমিক ১৪ সেন্টিমিটার ও তিস্তা ২৫ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার হলে বিপদসীমা ধরা হয়।ফুলছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর মন্ডল জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঘাঘটের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা সদর, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার অন্তত ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বন্যা কবলিত এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতাও বেড়েছে। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানায়, এ পর্যন্ত বন্যা কবলিত মানুষদের মধ্যে ২শ’ মেট্রিক টন চাল, নগদ দুই লাখ টাকা ও পাঁচ লাখ টাকার শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

লালমনিরহাট: টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা অববাহিকায় সর্বোচ্চ সর্তকতা জারি করেছে প্রশাসন।রোববার রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিস্তা ব্যারেজে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬৫ সেমি (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৪০ সেমি)। যা বিপদসীমার ২৫ সেমি ওপরে।এদিকে, লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হওয়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে ৩০ হাজার পরিবারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজানসহ সব নদীর পানি বৃদ্ধিতে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ভাঙনের শিকার হয়েছে এক হাজারেরও বেশি পরিবার।তিস্তা ব্যারেজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিস্তার তীরবর্তী মানুষকে সর্বোচ্চ সর্তকতা জারি করে মাইকিং করা হয়েছে।তিনি জানান, তিস্তা ব্যারেজের পূর্ব দিকের সংযোগ সড়কের পাশের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে ব্যারেজ রক্ষার্থে ওই সড়ক কেটে দেওয়া হতে পারে।পানি বৃদ্ধির সঙ্গে তিস্তার ভাঙনও বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুণ। চরাঞ্চলের অনেকেই অব্যাহত ভাঙনের মুখে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে নৌকাযোগে তীরে চলে আসছেন।মহিষখোচা ইউয়িনের তিস্তা চরাঞ্চলের গরিবুল্লা চরের বৃদ্ধ নজরুল ইসলাম জানান, গেল রাতে তার চোখের সামনেই তার নিজেরসহ চারটি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে রোববার রাতের মধ্যে ওই এলাকার প্রায় ২০/৩০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে। জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী বলেন, জেলায় প্রায় ২৫ হাজার পানিবন্দি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। এ দুর্ভোগ না কাটতেই আবারও বন্যার পানি ধেয়ে আসায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে নগদ টাকা ছাড়াও ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।এসব বিষয়ে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রেজাউল আলম সরকার বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় আমরা সার্বক্ষণিক তদারকি করছি। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

জামালপুর: যমুনা ও তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে জামালপুরে। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দ্রুত পানি বৃদ্ধির ফলে জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে শনিবার সকাল থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।বর্তমানে জামালপুরের বকশীগঞ্জ, মাদারগঞ্জ, ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নবকুমার চৌধুরী জানান, বাহাদুরাবাদ ঘাট এলাকায় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত যমুনা নদীতে ৩৪ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে পানি পরিমাপক স্কেলের ১৯.৯০ সেন্টিমিটার পয়েন্টে অবস্থান করছে। ফলে পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।যমুনায় পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধির ফলে জামালপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মঞ্জুর আব্দুল হাই জানান, বন্যার্তদের মাঝে ৫শ’ খাবার প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে।সরেজমিন দেখা যায়, যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী, নোয়ারপাড়া, কুলকান্দি, সাপধরি, চিনাডুলি ও বেলগাছা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের ২০টি এবং দেওয়ানগঞ্জের চুকাইবাড়ি ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম, বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ও নিলক্ষিয়ার ১০টি গ্রামসহ চার উপজেলার অন্তত ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।ইসলামপুর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যমুনার পূর্বতীরে ভয়াবহ ভাঙন চলছে। যমুনার ভাঙনে গত দুই দিনে ঘোনাপাড়া গ্রামের ৫০টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।চিনাডুলি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, চিনাডুলি ইউনিয়নের দেওয়ানপাড়া থেকে শিংভাঙ্গা পর্যন্ত এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টপকে পানি আসতে শুরু করায় ইসলামপুর ও মেলান্দহের বিস্তৃর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। নোয়ারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বাদল জানান, যমুনার পানি বৃদ্ধিতে নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের রাজনগর, করিরতাইর, তাড়তাপাড়া, মাইজবাড়ী, কাজলা, কাঠমা এবং ব্রহ্মত্তর এলাকার প্রায় দশ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেএছাড়াও বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কাজলা ও কাঠমা এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে

বগুড়া: উজান থেকে আসা ঢল ও ভারী বৃষ্টিপতে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বগুড়ার যমুনা তীরবর্তী ৩ উপজেলার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৮৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে। সোমবার বগুড়ার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনার পানি বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর প্রবাহিত হয়। এ পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকা গুলোর ৭৪ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া ফসলেরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।বন্যাকবলিত এলাকা থেকে অনেক লোকজন বাড়ি ঘর সরিয়ে নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ সহ উচুঁ রাস্তায় আশ্রয় নিচ্ছে। ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছে বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন গত কয়েক দিন ধরে যুমনার পানি অব্যাহত ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপদসীমা অতিক্রম করে। বগুড়ার জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ি ইতোমধ্যে সারিয়াকান্দি, সোনাতালা ও ধুনট উপজেলার মোট ১৬ টি ইউনিয়নের নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি প্রবেশ করেছে ১০৭টি গ্রামে। এর মধ্যে সারিয়াকান্দির ৯টি ইউনিয়নের ৭০ টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করে। উপজেলার চন্দনবাইশা, কতুবপুর ও কামালপুর ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি বাড়ি ঘরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। দুর্গত এলাকা থেকে লোকজন বাড়িঘর সরিয়ে বন্যানিয়ন্ত্রন বাঁধ সহ উচু স্থানে আশ্রয় নেয়া শুরু করেছে। এছাড়া সারিয়াকান্দি সদরের অন্তরপাড়া, ধলিরকান্দি, চরবটিয়া সহ কিছু নিম্মাঞ্চলে পানি প্রবেশ করেছে। চরাঞ্চলর ৩টি ইউনিয়ন-কাজলা কর্নিবাড়ি ও বোহাইলের বেশ কিছু এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। অপর দিকে ধুনটের ২টি ও সোনাতলা উপজেলার ৫টি ইউনিনের নিম্মাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মাঝে এ পর্যন্ত ১৩৫ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার নগদ টাকা সহ বেশ কিছু শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।