24-07-16-PM_Army Headquarters (AHQ) Selection Board Meeting-4সেনাবাহিনীতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণের দিকে জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এছাড়া সাতটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে বলেছেন তিনি। রোববার (২৪ জুলাই) ঢাকা সেনানিবাসে সেনাসদর নির্বাচনী পর্ষদে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষা, মনোভাব, সামাজিকতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিরীক্ষা করেই পদোন্নতি দিতে হবে। সেনাবাহিনীতে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে সাতটি বিষয় প্রধানমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন তা হলো- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস, নেতৃত্ব, পেশাগত দক্ষতা, মাঠের তৎপরতা বিচার, শৃঙ্খলা, সততা-বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য এবং নিযুক্তিগত উপযোগিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা।

তিনি বলেন, যারা সুশিক্ষিত, কর্মক্ষম, সচেতন, বুদ্ধিমান এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রকে সুসংহত করার জন্য দৃঢ় প্রত্যয়ের অধিকারী এমন যোগ্য অফিসারদের কাছে নেতৃত্ব ন্যস্ত করতে হবে। ‘আপনাদের সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার-বিশ্লেষণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসের ওপর গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আদর্শগতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামরিক বাহিনীর জন্য অত্যন্ত মৌলিক এবং মুখ্য বিষয়। আপনাদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব ন্যস্ত হয় তাদেরই হাতে যারা দেশপ্রেমিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী।

নির্বাচকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বরাবরের মতোই পদোন্নতির ক্ষেত্রে আপনারা সততা, আদর্শ ও সুবিচারের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। আপনাদের প্রজ্ঞা, বিচার-বুদ্ধি, সততায় আমার পূর্ণ আস্থা আছে। একটি দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত এবং সুসংহত করতে সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী সেনাবাহিনী অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

আধুনিক ও প্রযুক্তি নির্ভর সেনাবাহিনী গড়ে তুলতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফোর্সেস গোল-২০৩০-এর আলোকে সেনাবাহিনীর জন্য গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে হবে। ‘সেনাবাহিনীকে প্রযুক্তি নির্ভর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিদেশি প্রযুক্তির পাশাপাশি নিজস্ব উদ্ভাবনী ও প্রযুক্তি সংযোজন করেছি’। এছাড়া শক্তিশালী সেনাবাহিনী গঠনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সেনাবাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর প্রতি অবিচল আস্থা, গভীর বিশ্বাস এবং অকৃত্রিম ভালোবাসা, তাদের দেশপ্রেম ও পেশাদারিত্বের কারণে বঙ্গবন্ধু নিজের সন্তানকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছিলেন। রাজধানীর গুলশানের জিম্মি উদ্ধারে পরিচালিত কমান্ডো অপারেশনের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের যে কোনো সংকটময় সময়ে সেনাবাহিনী সর্বদা পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছে। ১ জুলাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরায় ১৩ জন দেশি-বিদেশি নাগরিককে জিম্মিদশা হতে জীবিত উদ্ধার করে। দক্ষ পরিকল্পনায় মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যেই এ অভিযান সম্পন্ন করায় আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

দেশের অবকাঠামো উন্নয়নসহ দুর্যোগে সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সুনামের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সদস্যরা বিশ্বের মোট ১১টি দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশ শীর্ষ সেনা সদস্য প্রেরণকারী দেশ। যা পুরো জাতির জন্য বিরল সম্মান বয়ে আনছে। আমাদের সৈনিকদের শৃঙ্খলা, দক্ষতা ও কর্তব্যবোধে দৃঢ় মনোভাব বিশ্ব দরবারে প্রশংসিত হয়েছে।