পাঁচ বছরের (২০১৬-২০২১) ‘কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। আজ রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন কর্মকৌশলের সুপারিশ দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ভয়বহ দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন মিডিয়া ব্যক্তিত্বরা।
এসময় তারা বলেন, কিছু সরকারি অফিসের প্রতি ‘চিপা’ দিয়ে হাজার কোটি টাকা চলে যাচ্ছে (লোপাট হচ্ছে)। এসব দুর্নীতি এখন জঙ্গিবাদের মতো ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্য এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি দুর্নীতি প্রতিরোধে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হবে। একইসঙ্গে দুর্নীতির মামলার বিচার যেন দ্রুত সম্পন্ন হয় সেদিকে জোর দিতে হবে।
মতবিনিময় সভায় সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার দুদকের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দুর্নীতি প্রতিরোধের কাজ এমনভাবে করতে হবে যেন তা মানুষের মনে গেঁথে থাকে। এ ব্যাপারে আপনারা গণমাধ্যমের সহযোগিতা নিতে পারেন।’ আর এতে তিনি সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। অন্যথায় জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতি থেকে আমরা কেউ রক্ষা পাবো না। আর যেভাবে হোক আমাদের জঙ্গি নির্মূল করতে হবেই।’
মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন সরকারি অফিসের ভয়বহ দুর্নীতি কথা তুলে ধরেন একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোজাম্মেল বাবু। তিনি বলেন, ‘সরকারি কিছু অফিসের প্রতি ‘চিপা’ দিয়ে হাজার কোটি চলে যাচ্ছে। এভাবে বর্তমানে ব্যাংকিংখাতে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে। ব্যাংকিং খাতে ধস নামবে এই ভয়ে সরকারও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আসলে এ ব্যাপারে দুদক বা সরকার এখনো যদি কোনো ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে একদিন ব্যাংকিং খাতে সত্যিই ধস নামবে।’
এসময় পানি উন্নয়ন বোর্ড, টেলিকম এবং রেল সেক্টরের কিছু ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রেলওয়ে সেক্টরে কোনো কাজেরই টেন্ডার হয় না। এসব বিষয় যেন কমিশনের নজরে আসে। তাই কমিশনকে নিয়মিত কাজের বাইরে জাতীয় টাস্কফোর্স গঠন করে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা দরকার।’
দৈনিক সংবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাশেম হুমায়ুন বলেন, ‘কোনো প্রভাব বিস্তারের কারণে দুদকের তদন্ত আটকে গেলে দুর্নীতি প্রতিরোধ সম্ভব হবে না। প্রায় দেখা যায়, সরকারে থাকাকালীন সেই দলের কিছুই হয় না বা চাকরিতে থাকাকালীনও কিছু হয় না। আবার সরকারে না থাকলে তাদেরই দুর্নীতি নিয়ে টানাটানি শুরু হয়। তাই ক্ষমতায় বা চাকরিতে থাকা অবস্থায় দুর্নীতি ধরিয়ে দিতে দুদকের কার্যক্রম চালাতে হবে।’
নিজের ঘরে কি হচ্ছে তা যেন কমিশন খতিয়ে দেখে সেই বিষয়েও নজর দেয়ার জন্য কমিশনকে আহ্বান জানান তিনি। কালের কলেরকণ্ঠের সম্পাদক এমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘অভিভাবক ও শিক্ষকরা হচ্ছেন সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাই ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণিতে শিশুদের মধ্যে দুর্নীতি বিরোধী ও নৈতিক শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি অভিভাবক ও শিক্ষকদের মাঝেও এসব সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। কেননা তাদের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের অন্তরে দুর্নীতিবিরোধী চেতনা সৃষ্টি করতে পারলে দুর্নীতি হ্রাস করা সম্ভব হবে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, ‘দুদক ও আমাদের লক্ষ্য এক, তাহলো দুর্নীতি দমন করা। কমিশন যতবেশি তথ্য দিতে পারবে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের ততবেশি কাজ করা সম্ভব হবে। দুদক যতটুকু সম্ভব দুর্নীতি প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে, যার ফলে প্রতিষ্ঠানটি কিছুটা হলেও আস্থা অর্জন করেছে। এই আস্থা ধরে রাখতে হবে। আপনারা কাজ করে যান, আমরা গণমাধ্যম থেকে যেসব সহযোগিতা করার তা করে যাচ্ছি।’
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময়ে আরো বক্তব্য রাখেন দুদক কমিশনার ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ, এএফএম আমিনুল ইসলাম, চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক এসএম হারুন অর রশিদ, এটিএন বাংলার সিনিয়র সাংবাদিক নওয়াজেশ আলী খান প্রমুখ।