জঙ্গিবাদ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহীদের সার্বিক সহযোগী প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) একেএম শহীদুল হক। বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের মহা পরিদর্শক একেএম শহিদুল হক বলেছেন, প্রকৃত মুসলমান কখনও মানুষ হত্যা করতে পারেনা। জঙ্গিবাদের নামে যারা মানুষ হত্যা করছে তারা প্রকৃত মুসলিম নয়।
তারা দেশের শক্র। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে সকলকে রুখে দাঁড়াতে হবে। পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে এ দেশ থেকে চিরতরে জঙ্গি নির্মূল করা হবে। এছাড়া যারা পথভ্রষ্ট হয়ে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত হয়েছে বা হতে যাচ্ছে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে।
বর্তমানে এদেশে ৫৬ জন জঙ্গির বিরুদ্ধে নি¤œ আদালতে ফাঁসির রায় হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বাকীরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। যদি পর্যাক্রমে তাদেও ফাঁসি কার্যক্রর করা যায় তাহলে এ দেশ থেকে জঙ্গিবাদের শিকড় উপঁড়ে পেলা যাবে।
তিনি বলেছেন, জঙ্গিবাদ একটি ঘৃণিত কাজ। ইতিমধ্যে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের লাশ পরিবার পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। এর চেয়ে বড় ঘৃণার কাজ আর হতে পারেনা।
তিনি জঙ্গি সংশ্লিষ্টদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, যারা জঙ্গিবাদে বিশ্বাস করে তাদের সাথে যোগ দিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনরূপ হত্যা ও নাশকতায় জড়িত হয়নি তারা সকলেই ফিরে আসতে পারে। আরা যারা হত্যা ও নাশকতা করার পরও নিজের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাই সরকার তাদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বিবেচনা করবে। এ ক্ষেত্রে সরকার চাইলে সাধারণ ক্ষমাও করতে পারে। তাই তিনি জঙ্গিদের স্বেচ্ছায় ফিরে আসার অনুরোধ জানান এ মতবাদে বিশ্বাসীদের।
রোববার দুপুরে কক্সবাজারের একটি আবাসিক হোটেলের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় পুলিশের এ সর্বোচ্চ কর্মকর্তা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের ডাকে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে আইজিপি বলেন, জঙ্গি সংশ্লিষ্ট যারা গ্রেফতার হয়েছে ওখানে এখনো রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তবে তারা পুলিশের সন্দেহের তালিকায় রয়েছে। তাদের প্রতি চোঁখ কান সজাগ রাখার পরামর্শ দেন তিনি। সকল ধর্ম শান্তির কথা বলে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে হত্যা করে বেহেস্তে যাওয়ার মত কু মন্ত্র বিশ্বাস করে ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ইসলাম ধর্ম মানুষ হত্যার কথা বলে না।
গুলশানের ঘটনার পর বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র চিহ্নিত করার চেষ্টা বলে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা দেশের উন্নয়নে কাজ করতে এসেছিলেন। কিন্তু ফিরলেন লাশ হয়ে। এটা দেশের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতাও।
সভায় পুলিশের চট্রগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন, বিজিবির কক্সবাজারস্থ ১৭ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার, জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তাফা, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান, ইমাম সমিতির নেতা মৌলভী সিরাজুল ইসলাস, বৌদ্ধ ভান্তে প্রজ্ঞানন্দা ভিক্ষু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা বাবুল শর্মা, কমিউনিটি পুলিশের সভাপতি এডভোকেট আমজাদ হোসেন, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, কর্মকর্তা, ধর্মী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।