যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক হ্যাকিংয়ের দায়ে বাংলাদেশির কারাদন্ড

যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার হুমকি ও ব্যাংক হ্যাকিংয়ের দায়ে এক বাংলাদেশি যুবককে দুই বছরের কারাদ- দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত। অনলাইনে হোয়াইট হাউজসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে বোমা হামলা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের হুমকির ভুয়া তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্তির মামলায় স্থানীয় সময় গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদলতের বিচারক র‌্যান্ডোলফ ডি মোস এ রায় প্রদান করেন।যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির ব্র“কলিনের বাসিন্দা প্রবাসী মীর ইসলাম (২২) নামের বাংলাদেশি এ যুবক ‘জোস দ্য গড’ নাম ব্যবহার করতেন। এছাড়াও তাদের একটি সংঘবদ্ধ চক্র মিলে ইউজিনাজি ডটকম  নামে একটি হ্যাকিং ওয়েবসাইট চালু করেন। যার মাধ্যমে শুধু ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৮০ মিলিয়ন ডলার চুরি করা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৫০ হাজার ক্রেডিট কার্ডের তথ্য রয়েছে। এ চক্রটি সর্বমোট ৪৩ কোম্পানির মোট ২০৫ মিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

ইন্টারনেটে নিউইয়র্কসহ অ্যারিজোনা, ওয়াশিংটন ডিসি, ভার্জিনিয়া ও ম্যারিল্যান্ড ইত্যাদি স্থানে তার অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়ে পুলিশের জরুরি নম্বর ৯১১ এ ফোন করে বিভিন্ন সময়ে বোমা হামলাসহ নানা ধরনের ভুয়া সংবাদ পুলিশকে জানিয়ে বিভ্রান্ত করেছেন মীর। গত বছরের ২৩ এপ্রিল সে হোয়াইট হাউজে বোমা হামলার হুমকি দেন তিনি। এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল ম্যারিল্যান্ডের মন্টগোমারি কাউন্টির পুলিশকে জানানো হয়, বেথেসডাস্থ কংগ্রেসনাল কান্ট্রি ক্লাবের কাছে সিএনএন হোস্ট উল্ফের বাসায় এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছেন।

২০১৩ সালের ৪ এপ্রিল ৯১১ এ ফোন করে জানানো হয় যে, ন্যাশনাল রাইফেলস্ অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রকল্পে নেতৃত্বদানরত ডব্লিউ এল নাকি তার স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করেছেন। একই বছরের ২২ মার্চ ৯১১ এ ফোন করে মীর ইসলাম পুলিশকে বলেন, ইউনিভার্সিটি অব আরিজোনা ক্যাম্পাসে বোমা ফুটেছে এবং গোলাগুলি হচ্ছে। ক্যাম্পাসে এক বন্দুকধারি অবস্থান নিয়েছে। যাকে সামনে পাচ্ছে তাকেই গুলি করছে।২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০টি ফোন করে বিব্রত করা হয় এফবিআই, সিআইএ এবং পুলিশ প্রশাসনকে। কোনো কোনো স্থানে সোয়াট’ টিমকেও অভিযান চালাতে হয়েছে তার ভুল তথ্যের কারণে।

শুধু তাই নয়, আন্ডারগ্রাউন্ড নাজি’ নামক একটি গ্রুপের পরিচয়ে মীর অনেক মানুষের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বর চুরি করে তা অনলাইনে ছড়িয়ে দেন। মীর ইসলামের এমন অপকর্মের সহযোগী হিসেবে আরো চার যুবককে গ্রেপ্তার করা হয় ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চল, ভার্জিনিয়ার ফ্রেডারিকবার্গস এবং ফিনল্যান্ড থেকে।

২০০০ সালে মা-বাবার সাথে ইমিগ্র্যান্ট হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন মীর ইসলাম। তখন তার বয়স ছিল ৬ বছর। গত বছরের জুলাইয়ে গ্রেপ্তারের পর থেকেই তাকে কারাগারে রাখা হয়। গত বছর ৬ জুলাই তিনি ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে নিজের দোষ স্বীকার করেন। অন্যের গোপন তথ্য চুরি করা, অনলাইনের অপব্যবহার-প্রতারণা, অন্যের সোস্যাল সিকিউরিটি নম্বরের অপব্যবহার, কম্পিউটার প্রতারণা, এফবিআইসহ কেন্দ্রীয় সরকারের লোকজনকে অপদস্ত করা, আন্তঃস্টেট হুমকি-ধমকি প্রদানসহ গুরুতর কয়েকটি অপরাধে এই দোষ স্বীকার করেছিলেন তিনি। দীর্ঘ এক বছর পর তাকে গত সোমবার ওয়াশিংটন ডিসিতে ফেডারেল জজ র‌্যান্ডোলফ ডি মোস ২৪ মাসের কারাদ- প্রদান করেন। এ দন্ডভোগের পর তাকে আরো ৩ বছর কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারিতে থাকতে হবে বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। আদালতের বিচারক এ রায়ের বিস্তারিত বিবরণ উপস্থাপন করেন ওয়াশিংটন ডিসির ইউএস অ্যাটর্নি চ্যানিং ডি ফিলিপস, আরিজোনা অঙ্গরাজ্যের ইউএস অ্যাটর্নি জন এস লিয়োনার্দে এবং এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসের সহকারী পরিচালক পোল এম এব্যাটে।

বিচারকের কাছে মীর ইসলামের আইনজীবী দাবি করেন, তার মক্কেল মানসিকভাবে অসুস্থ। দৈনিক ২৪ ঘণ্টা কম্পিউটার গেমে লিপ্ত থাকার মধ্যদিয়ে এমন কান্ড ঘটিয়েছেন তিনি। তাকে কম শাস্তি দেয়া হলে পরবর্তীতে তার চিকিৎসা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে বলেও উল্লেখ করেন তার আইনজীবী।