19-07-16-PM_SSF Raising Day-18
তৃণমূল থেকে জনগণের মধ্যে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে সন্তানদের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখতে বাবা-মায়েদের পরামর্শ দেন তিনি। মঙ্গলবার (১৯ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর (এসএসএফ) ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

সন্তানদের কাছে টেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাবা-মায়েদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের সকল মানুষকে বলবো, নিজেদের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে একটু সময় কাটানো, তাদের আরো বেশি করে সময় দেওয়া, তাদের মনের কথাটা একটু শোনার চেষ্টা করা’।

‘তাদের সঙ্গ দেওয়া এবং তাদের কি চাহিদা সেটা জানা। তাদের আরো কাছে টেনে নেওয়া। তাদের ভালো-মন্দ, সমস্যা, সেগুলো দেখা। ছেলে-মেয়েরা যেন মন খুলে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারে, তাদের সে সুযোগ দেওয়া’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা কি করছে, সেদিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রতিটি পিতা-মাতার কর্তব্য। তারা কোথায় যায়, কি করে, কার সঙ্গে মিশছে- খোঁজ-খবর নিতে হবে’।

‘যে সকল ছেলে-মেয়ে বিভ্রান্তির পথে যাচ্ছে, তাদের সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে’।ধর্মের নামে ধর্মান্ধতার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মের মূল বাণীটা যেন সঠিকভাবে শিখতে পারে সে ব্যবস্থাটা নেওয়া উচিত। এটা প্রতিটি ধর্মের ক্ষেত্রেই হওয়া উচিত। প্রতিটি ধর্মেই শান্তির বাণী বলা আছে’। ‘ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটা শুধু আমাদের দেশে না’।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ খুন করে বেহেশতে চলে যাবে! বেহেশতে গিয়ে হুর-পরী পাবে! এটা কোনো যৌক্তিক কথা না। এটা ধর্মের কথা না, কোরআন শরিফের কথা না, আমাদের নবীর নির্দেশ না’।‘ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম। সেই ইসলাম ধর্মকে আজকে প্রশ্নের সম্মুখীন করে দিচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের এবং লজ্জার’।হুশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্মকে কোনোমতেই অসম্মানিত হতে দিতে পারি না। যাদের কারণে এগুলো হচ্ছে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবো। এতে কোনো সন্দেহ নাই’।জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তদন্ত করছি, আসামি ধরছি, বিচার করছি। শুধু সেটা করলেই হবে না। সামাজিকভাবে একটা আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে’।‘প্রত্যেকটা মানুষের ভেতরে সচেতনতা আনতে হবে। তৃণমূল থেকে সব জনগণ, সবাই যদি জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবিরোধী হয়। প্রত্যেকের ভেতরে সন্ত্রাসবিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করে সকলে মিলে কাজ করতে হবে’।

সাম্প্রতিক গুলশান, শোলাকিয়া, গুপ্তহত্যা এবং বিগত সময়ে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষকে পুড়িয়ে মারার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মনে হয়, যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি, স্বাধীন বাঙালি জাতি উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে, বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করবে যারা চায়নি, তাদেরই একটা চক্রান্ত এখানে কাজ করছে’।‘সেইসঙ্গে আর্ন্তজাতিক জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে’। আর্ন্তজাতিক মহলের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কারা অর্থ দেয়, অস্ত্র দেয়, প্রশিক্ষণ দেয়, এ ধরনের ধর্মান্ধতা সৃষ্টি করে মানসিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এর মূল কারণ খুঁজে বের করতে হবে’।

প্রতিটি বাহিনীকে আধুনিক প্রযুক্তি সর্ম্পকে জ্ঞান অর্জন, প্রশিক্ষণ গ্রহণ এবং ব্যবহারে পারদর্শিতা অর্জনের তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাহিনীগুলোকে প্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শী করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান তিনি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সফিকুর রহমান।

মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন বাহিনী প্রধানসহ এসএসএফ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এসএসএফ সদস্যদের পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।