ডোপ কলঙ্কিত রাশিয়া বড় শাস্তির মুখেরাশিয়ার গৌরবোজ্জ্বল ক্রীড়া ঐতিহ্য চিরকালের মতো কলঙ্কিত হয়ে গেল এ দিন! রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক ডোপিংয়ের অভিযোগ নিয়ে ওয়াডার তদন্ত-রিপোর্টে এ দিন সরাসরি কাঠগড়ায় উঠল ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১১ থেকে অন্ততপক্ষে ২০১৫ পর্যন্ত রাশিয়া ধারাবাহিক ভাবে ডোপ করা অ্যাথলিটদের আড়াল করে এসেছে এবং তা হয়েছে সরকারের প্রত্যক্ষ মদতেই। শুধু অ্যাথলেটিক্স নয়, প্রায় সব ধরনের খেলাতেই চলেছে এই নির্লজ্জ চুরি।

রিপোর্ট প্রকাশের পর আলোড়িত ক্রীড়া বিশ্ব। মারিয়া শারাপোভার মতো রুশ মহাতারকা ক্রীড়াবিদ ডোপিংয়ে ধরা পড়ার কথা শিকার করায় সাড়া পড়েছিল টেনিস দুনিয়ায়। এখন বলা হচ্ছে, অলিম্পিক্স আন্দোলনের ভিতটাই নড়িয়ে দিয়েছে রাশিয়া। রিও অলিম্পিক্স-সহ সব ধরনের খেলার আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকেই রাশিয়াকে নির্বাসনে পাঠানোর জোরদার দাবি তুলেছে ওয়াডা। ক্ষুব্ধ আন্তর্জাতিক অলিম্পিক্স সংস্থা। সাফ জানিয়েছে, দোষ প্রমাণ হলে রাশিয়াকে কঠোরতম শাস্তিই পেতে হবে।

image (1)

চলতি বছরের মে মাসের মাঝামাঝি সব অভিযোগের কেন্দ্রে থাকা মস্কো গবেষণাগারের প্রাক্তন প্রধান গ্রিগরি রডচেনকভ রাশিয়ায় ব্যাপক ডোপিংয়ের অভিযোগ তোলেন। এর পর মুখ খোলেন আরও কয়েক জন রুশ অ্যাথলিট। যার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অ্যাথলেটিক্স সংস্থা আগেই অনির্দিষ্টকালের জন্য রাশিয়াকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিল। তবে ওয়াডা তাদের নিজস্ব তদন্ত শুরু করে রিচার্ড ম্যাকলারেন নামে কানাডার আইন বিশেষজ্ঞের নেতৃত্বে। সেই রিপোর্ট প্রকাশ হয়েছে এ দিন।

সাতানব্বই পাতার রিপোর্টে ম্যাকলারেন জানিয়েছেন, ২০১০ ভ্যাঙ্কুভার শীত অলিম্পিক্সের পরেই ডোপিং লুকনোর বিস্তারিত কর্মসূচি তৈরি করে ফেলে রাশিয়া। নাম দেওয়া হয় ‘ডিস্যাপিয়ারিং পজিটিভ মেথডোলজি’। এই ব্যবস্থায় ডোপিং শুরু করার আগে মূত্রের নমুনা আগাম সংগ্রহ করে রাখা হত। পরে প্রতিযোগিতায় সংগ্রহ করা নমুনার সঙ্গে সেটা বদলে দেওয়া হত। এ ছাড়াও পরীক্ষার নামে চলত ধাপ্পাবাজি। গোটা প্রক্রিয়াটাই ক্রীড়া মন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণ এবং তদারকিতে চলত বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।

২০১১ থেকে ২০১৫-র মধ্যে কমকরে আঠাশটি খেলায় তিনশোরও বেশি খেলোয়াড়ের নমুনায় এমন কারচুরি করা হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। সোচি শীত অলিম্পিক্স, লন্ডন অলিম্পিক্স, ২০১৩ মস্কো ট্র্যাক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ২০১৫ সাঁতার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মতো সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার মঞ্চেও রুশ ক্রীড়া মন্ত্রকের নির্দেশে ডোপ পরীক্ষায় কারচুপি হয়েছে। রুশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন নির্বাসিত থাকায় রাশিয়ার অ্যাথলিটদের রিওয় নামা এমনিতেই অনিশ্চিত। তবে রিওর জন্য আটষট্টি জনের অ্যাথলেটিক্স দল গড়ে ল্যুসানের সর্বোচ্চ ক্রীড়া ট্রাইব্যুনালে গিয়েছে রাশিয়া। রায় বেরনোর কথা বৃহস্পতিবার। তার আগে এ দিনের রিপোর্টে ছবিটাই পাল্টে গিয়েছে আমূল। শুধুমাত্র অ্যাথলেটিক্স দল নয়, রিও গেমস থেকে নির্বাসনের খাঁড়া ঝুলছে গোটা রাশিয়ার উপরেই।