13-07-16-PM-7

বাংলাদেশে নবনিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ডলারের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে পারস্পরিক ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেদের মুদ্রা ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার ইগনোয়াতভ এ প্রস্তাব দেন।প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, জবাবে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটি দেখবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন।বৈঠকের পর প্রেস সচিব সাংবাদিকদের বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য জোরদারে বাণিজ্য বিষয়ে আন্তঃসরকার কমিশন শক্তিশালী করার ওপর জোর গুরুত্বারোপ করেন।

বিভিন্ন খাতে রাশিয়ার সঙ্গে অব্যাহত সম্পর্ক উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হলে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ আরো বাড়বে। বর্তমানে এই বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার।তিনি বলেন, রাশিয়া বাংলাদেশ থেকে চামড়াজাত পণ্য, মানসম্পন্ন চাল এবং আলু আমদানি করতে পারে এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে পারে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থন এবং যুদ্ধ পরবর্তী পুনর্গঠনে বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকা থেকে মাইন অপসারণে রাশিয়ানদের আত্মত্যাগ এবং যুদ্ধের পর দেশজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কথা স্মরণ করেন।রাষ্ট্রদূত গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশ যদি চায় তাহলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সহায়তা দেয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।

২০১৩ সালে শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের কথা স্মরণ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পেরে প্রেসিডেন্ট পুতিন খুশী এবং এর ফলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করে আলেকজান্ডার ইগনোয়াতভ বলেন, স্বাক্ষরের জন্য ঋণ চুক্তি প্রস্তুত করা হয়েছে।তিনি বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মানের প্রশংসা করেন এবং বলেন, রাশিয়ান বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।রাষ্ট্রদূত তার দেশের উন্নতমানের গম আমদানির জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী এবং মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

পরে বাংলাদেশে নিযুক্ত থাই রাষ্ট্রদূত মিস পানপিমন সুওয়াননাপঙ্গি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব বলেন, গুলশান হামলার পর ঢাকায় থাই দূতাবাস ভবন ঘিরে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেন থাই রাষ্ট্রদূত।এ ধরনের চ্যালেঞ্জিং অবস্থায় থাইল্যান্ড বাংলাদেশের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, যে ঘটনা ঘটেছে সে বিষয় আমরা সবাই অবহিত। তিনি বলেন, এ ধরনের জঘন্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আরো দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। একটি থাই কোম্পানীর অধীনে ঢাকা এলিভেটট এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের অগ্রগতি তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, থাই বিনিয়োগকারীরা এখনো বাংলাদেশকে বিনিয়োগের সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবে বিবেচনা করে। প্রেস সচিব বলেন, থাই রাষ্ট্রদূত দুধের জন্য বাংলাদেশ থেকে ব্লাক বেঙ্গল গোট আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার এ আগ্রহের বিষয় প্রশংসা করেন এবং এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের জন্য জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে জি-৭৭ গ্র“পের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় থাইল্যান্ডকে অভিনন্দন জানান। এই নির্বাচনে থাইল্যান্ডের অনুরোধে বাংলাদেশ প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেয়।বাংলাদেশ সফররত সৌদি আর্মড ফোর্সের ডেপুটি চিফ অব দ্যা জেনারেল স্টাফ এয়ার মার্শাল ফায়য়াদ বিন হামেদ-আল রুয়াইলি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।এয়ার মার্শাল ফায়য়াদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান আল সৌদের চিঠি হস্তান্তর করেন।

তিনি সম্প্রীতি মসজিদ-ই-নববীর কাছে হামলার ঘটনা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। তিনি বলেন, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সৌদি আরব আঘাত পেয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করেন।শেখ হাসিনা দুই পবিত্র মসজিদ সুরক্ষায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যে কোন ধরনের সহযোগিতা প্রদানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সচিব সুরাইয়া বেগম, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লে. জেনারেল মাহফুজুর রহমান এবং সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।