রাজধানীর গুলশানের রেস্তোরাঁয় ২০ জিম্মির মধ্যে ৭ জনকে গুলি করে ও কুপিয়ে এবং বাকিদের শুধু কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তে নিয়োজিত চিকিৎসক সোহেল মাহমুদ।বুধবার রাজধানীতে নিজ কার্যালয়ে গুলশান হামলায় নিহতদের ময়নাতদন্তের বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি এ তথ্য জানান।এ সময় তিনি আরো বলেন, জঙ্গিরা মেয়েদের ওপরও চড়াও হয়েছিল।তবে হামলাকারীরা কোনো ড্রাগ নিয়েছিল কিনা তা খতিয়ে দেখতে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয়েছে।নিহতদের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আগামী সপ্তাহে জমা দেয়া হবে বলেও জানান এই চিকিৎসক।
প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই (শুক্রবার) রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হত্যাযজ্ঞ চালায় জঙ্গিরা। ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি সংকটের রক্তাক্ত অবসান ঘটে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেনা নেতৃত্বাধীন সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে। অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের জঙ্গিরা আগেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছিল।
এ ২০ জনের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক ও ৩ জন বাংলাদেশি। উদ্ধার অভিযানে নিহত হয় আরও ছয় জন। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম দফা উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। আহত হন কমপক্ষে ৪০ জনঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে গুলশান হামলায় নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ।
ঢামেক-এর তৃতীয় তলায় নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, গুলশান থানা পুলিশের নির্দেশে হামলায় নিহত ২৬ জনের ময়নাতদন্ত করি সিএমএইচে। এর মধ্যে পাঁচজন জঙ্গি রয়েছে।নিহত জঙ্গিদের প্রত্যেকের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে তিনজনের শরীর বোমার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে একজনের হাতের কিছু অংশ, অন্যজনের হাত বিচ্ছিন্ন এবং আরেকজনের শরীরের একপাশ থেতলে গেছে।নিহত জিম্মিদের ময়নাতদন্ত প্রসঙ্গে ডা. সোহেল বলেন, ২০ জনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেছি। এরমধ্যে সাতজনের শরীরে ৮টা ও একজনের শরীরে দুইটা গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।পেছন থেকে তাদের ঘাড়ে গুলি করা হয়েছে। প্রত্যেকের শরীরে রয়েছে ধারালো অস্ত্রের আঘাত। তবে অবন্তী কবিরকে মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে’ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন তিনি।
ডা. সোহেল বলেন, সবার ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিহত জিম্মি নারীদের সেক্সুয়াল অ্যাসাল্ট করা হয়েছে কিনা-এজন্যে হাই ভ্যাজিনাল স্বব (ঐরময াধমরহধষ ংধিন) সংগ্রহ করেছি।হামলার আগে নিহত জঙ্গিরা শক্তিবর্ধক কোনো ড্রাগ সেবন করেছিলো কিনা-তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’ যোগ করেন তিনি।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে আগামী সপ্তাহে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন ডা. সোহেল মাহমুদ।গত ০১ জুলাই (শুক্রবার) রাতে গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিজান বেকারিতে (স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ) একদল সন্ত্রাসী বেশ কয়েকজন দেশি-বিদেশিকে জিম্মি করে।খবর পেয়ে ওই রেস্তোরাঁয় অভিযানে গেলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরদিন অর্থাৎ ২ জুলাই সকালে কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ওই রেস্তোরাঁর নিয়ন্ত্রণ নেয় নিরাপত্তা বাহিনী।এ সময় ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ১৩ জন জিম্মিকে। অভিযানে পাঁচ জঙ্গি নিহত হলেও একজনকে জীবিত অবস্থায় আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। নিহত জিম্মিদের মধ্যে নয়জন ইতালির, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতের নাগরিক। বাকি তিনজন বাংলাদেশি। এর একজনের আবার যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিকত্ব রয়েছে।