জঙ্গি অর্থায়নের দায়ে সিঙ্গাপুরে বিভিন্ন মেয়াদে ৪ বাংলাদেশি শ্রমিককে কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির আদালত। গত এপ্রিলে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হচ্ছেন— রহমান মিজানুর, মিয়া রুবেল, মোহাম্মদ জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর ও সোহেল হাওলাদার ওরফে ইসমাইল হাওলাদার। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) প্রকাশিত সিঙ্গাপুরের ইংরেজি দৈনিক দ্য স্ট্রেইটস টাইমস এ খবর জানিয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনের (আএসএ) অংশ হিসেবে তাদের ২৪ থেকে ৬০ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এর আগে তাদের বিরুদ্ধে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন ও অর্থ সংগ্রহের অভিযোগ আনা হয়।
আদালতের রায় অনুযায়ী, রহমান মিজানুরকে ৫ বছর, মিয়া রুবেল ও মো. জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগরকে আড়াই বছর এবং সোহেল হাওলাদার ওরফে ইসমাইল হাওলাদারকে ২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। রায়ে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তারের দিন থেকে এ দণ্ড কার্যকর ধরা হবে।
জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে গত ২৭ মে ৬ বাংলাদেশি কর্মিকে গ্রেপ্তার করে দেশটির পুলিশ। দণ্ডিত এ চার বাংলাদেশি গত ৩১ মে আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয়। তাদের জবানবন্দি শুনে এ চার বাংলাদেশিকে দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। চারজনের মধ্যে জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগর ও রুবেল মিয়া জঙ্গি অর্থায়নে সংগৃহীত টাকা জমা রাখত। আদালতে উপস্থাপন করা নথিপত্রে বলা হয়, জাবেদ কায়সার হাজি নুরুল ইসলাম সওদাগরের কাছে ১ হাজার ৩৬০ মার্কিন ডলার নগদ পাওয়া যায়। এ টাকা ডলার তাকে দেন আরেক অভিযুক্ত রুবেল মিয়া।
আদালতে জবানবন্দিতে দৌলতুজ্জামান (৩৪) ও লিয়াকত আলী মামুন (২৯) জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে। দু’জনের অভিযোগ নিয়ে শুনানি আদালতে অপেক্ষমাণ। গত এপ্রিলে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে ৬ বাংলাদেশিকে আটক করে সিঙ্গাপুর পুলিশ। আটক ৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে গত ২৭ মে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনে পুলিশ। জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে আটক বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে গত ৮ এপ্রিল তদন্ত শুরু করে দেশটির পুলিশ।
আদালতে দাখিল করা পুলিশের বক্তব্যে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের নেতা রহমান মিজানুর ২০১৫ সালের এপ্রিলে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে শুরু করে। সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে পরিচয়ের পর সে ইসলামিক স্টেটের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়। এ নিয়ে একাধিক বৈঠকও করে তারা। ওই বৈঠকে আরও এক বাংলাদেশি উপস্থিত ছিল বলে আদালতে দাখিল করা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে পুলিশ। ওই ব্যক্তি সোহাগ ইব্রাহিম, যাকে ইতোমধ্যে পুলিশ আটক করেছে।
শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে বলা হয়, এরা বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি সংগঠনের (আইএস) সঙ্গে যোগসাযশে অশান্তি সৃষ্টি করতে চেষ্টা করছিল, সেজন্য অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি হওয়া বাঞ্ছনীয়। সিঙ্গাপুর পুলিশের তথ্য অনুয়ায়ী, জঙ্গি সম্পৃক্ততায় অভিযুক্ত ৬ বাংলাদেশি নিজেদের মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সদস্য দাবি করে জানিয়েছে, তারা দেশে ফিরে ‘সশস্ত্র পন্থায়’ বাংলাদেশে সরকার উৎখাত করে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়েছিল। সরকার উৎখাতের পর মধ্যপ্রাচের ইরাক ও সিরিয়ায় স্বঘোষিত ইসলামিক স্টেটের অধীনে বাংলাদেশ ভূখণ্ডকে খেলাফতের অংশ করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা।
উল্লেখ্য, গত মার্চ ও এপ্রিলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনে সিঙ্গাপুর পুলিশ জঙ্গি সম্পৃক্ততার অভিযোগে ১৩ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে। তদন্তে যথেষ্ট প্রমাণাদি না পাওয়ায় আটক ৫ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠায় সিঙ্গাপুর সরকার। দেশে ফিরলে বাংলাদেশের পুলিশ তাদের আটক করে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ২০১৫ সালে ৩৪ বাংলাদেশি নাগরিককে ফেরত পাঠায় সিঙ্গাপুর।