11-07-16-Home Minister_ Nisha Desai Biswal-9

জঙ্গিবাদ নিয়ে সরকার তার অতীত অবস্থান থেকে সরে এসেছেÑজানিয়েছেন মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই।মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন।মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সরকার এখন মনে করছে এসব হামালার সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদের সম্পৃক্ততা রয়েছেÑএটি একটি ইতিবাচক দিক।জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের প্র্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার বলেছে অভ্যন্তরীণভাবে এই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় কি কি সামর্থ্য রয়েছে তা যাচাই করেই প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নেয়ার উদ্যোগ তারা হবে।এদিকে, দুই দিনের ঢাকা সফর শেষে মঙ্গলবার দুপুরে কলম্বো রওনা হওয়ার আগে এক টুইটার বার্তায় তিনি বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তার আলোচনার বিষয়বস্তু জানান।

এক টুইট বার্তায় এ সফরকে খুব গুরুত্বপূর্ণ অভিহিত করেছেন নিশা দেশাই।সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একযোগে কাজ করবে বলেও টুইট বার্তায় জানান তিনি। আরেক টুইটে গুলশান হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কথাও উল্লেখ করেন তিনি।এর আগে সোমবার বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে কারিগরি এবং প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার কথা জানান নিশা।সন্ধ্যায় গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সফররত মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল এ কথা জানান।

ওই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন-সন্ত্রাসের ভিকটিম আমি নিজেও।
গুলশান হামলার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেখা গেছে এসব ঘটনায় বড় লোকের ছেলেরা জড়িতÑ এর শিকড় খুঁজে বের করতে হবে। কারা তাদের রিক্রুট করে, এর পেছনে কারা আছে-তাও খুঁজে বের করতে হবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে, তা নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল।

গুলশানের ক্যাফে এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশ সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন বিসওয়াল।তিনি টুইটারে লিখেছেন, সন্ত্রাসী হামলা ঠেকানো এবং এসব ঘটনা তদন্তে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীকে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।বিসওয়ালের সঙ্গে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী তথ্য বিনিময়ের উপর জোর দেন বলে তার প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তার প্রস্তাব বিসওয়াল দিয়েছেন। বাংলাদেশ যেভাবে চাইবে, সেভাবে সহায়তা দিতে তারা রাজি।

এদিকে তালেবান, আল কায়দা, আইএসের মতো সংগঠনগুলো গঠনে মদদ দেওয়ার যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে তাদের সহায়তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানিয়েছে দুই বাম দল সিপিবি-বাসদ।গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় নিহতদের মধ্যে এক বাংলাদেশি ছিলেন, যার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও ছিল। ঢাকায় আসার পর সোমবার সকালে বিসওয়াল হলি আর্টিজান পরিদর্শন করেন।ঢাকা সফরকে গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে বিসওয়াল তার টুইটার বার্তায় লিখেছেন, বাংলাদেশে গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর শেষ করলাম। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং বাংলাদেশের পাশে থাকার বিষয়টি আমি জানিয়েছি।জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সহযোগিতার প্রস্তাব দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা নিশ্চিত সন্ত্রাসীরা বিজয়ী হবে না।

আমাদের কাছে গোয়েন্দা তৎপরতা এবং তথ্য আছে। যারা আমাদের সমাজে সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা করছে, তাদেরকে পরাজিত করার মতো প্রশিক্ষণ এবং সক্ষমতা আমাদের আছে। আমরা আমাদের কমিউনিটি এবং তরুণদের নিয়ে কাজ করব, যাতে তারা সঠিক পথ খুঁজে পায়।গুলশানে হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি তার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার পক্ষে থেকে শেখ হাসিনাকে ফোন করে তদন্তে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে চ্যালেঞ্জ আখ্যায়িত করে এর বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতির বিষয় জানানোও তার সফরের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বলে জানান বিসওয়াল।এর আগে দুইদিনের সফরে রোববার সকালে ঢাকা আসেন নিশা। সফরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, ১ জুলাই (শুক্রবার) রাত পৌনে ৯টার দিকে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হত্যাযজ্ঞ চালায় জঙ্গিরা। ১২ ঘণ্টার শ্বাসরুদ্ধকর জিম্মি সংকটের রক্তাক্ত অবসান ঘটে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সেনা নেতৃত্বাধীন সমন্বিত অভিযানের মাধ্যমে। অভিযান শেষে ঘটনাস্থল থেকে ২০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়, যাদের জঙ্গিরা আগেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছিল।এ ২০ জনের মধ্যে ১৭ জন বিদেশি নাগরিক ও ৩ জন বাংলাদেশি। উদ্ধার অভিযানে নিহত হয় আরও ছয় জন। এর আগে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথম দফা উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। আহত হন কমপক্ষে ৪০ জন।