দুই খুনির ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারাগার ঘিরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আশপাশের সব দোকানপাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ জুলাই) রাত ১২টা ১ মিনিটে মো.সাইফুল ওরফে শহীদ এবং মো.শহীদুল্লাহ ওরফে শহীদ নামে দুই পেশাদার ছিনতাইকারীর ফাঁসি কার্যকরের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ।
রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক এবং জেল রোডে আরেকটি ছোট ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা। দুটি গাড়িতে চড়ে দুই প্লাটুন পুলিশ কারাগারের পুরো এলাকা ঘুরে টহল দিচ্ছে। সূত্রমতে, সার্বিক নিরাপত্তায় দুই প্লাটুন অর্থাৎ ৩০ জন পুলিশ কারাগারের সামনে মোতায়েন করা হয়েছে। থানা থেকে এস আই ও এএসআই মিলিয়ে আছেন ১০ জন। সব মিলিয়ে ৫০ জন পুলিশ সদস্য কারাগারে নিরাপত্তার দায়িত্বে আছেন।
কারাগারের সামনে থাকা কোতয়ালি থানার উপ-পরিদর্শক (এস আই) কাজী মাসুদ ইবনে আনোয়ার বলেন, দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরকে কেন্দ্র করে কারাগারের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ফাঁসির সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়া পর্যন্ত আমরা দায়িত্ব পালন করব। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারক করছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ এবং কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নূর মোহাম্মদ।
ফাঁসি কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা সাইফুল ওরফে শহীদ মিরসরাই উপজেলার উত্তর হাজীসরাই গ্রামের লেদু মিয়ার বাড়ির কামাল উদ্দিনের ছেলে। শহীদুল্লাহ ওরফে শহীদ একই উপজেলার মধ্যম সোনাপাড়া গ্রামের তাজুল ইসলামের ছেলে। কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০০১ সালের ৩১ মে রাতে মিরসরাই উপজেলা সদর থেকে একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে তিনজন ফটিকছড়ি যায়। ফটিকছড়িতে একটি নির্জন স্থানে চালক নাইনকা রবি দাশকে খুন করে ফেলে রেখে তারা অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যায়।
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগীয় উপ কারা মহাপরিদর্শক (ডিআইজি-প্রিজন) অসীম কান্ত পাল জানান, সিএনজি অটোরিকশা চালক নিখোঁজের ঘটনায় মিরসরাই থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলা নম্বর ০৮ (০৫) ২০০১। মরদেহ উদ্ধারের পর মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। মামলায় তিনজনকে আসামি করা হয়েছিল। ২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল তিন আসামিকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছিল। হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে সাজা বহাল থাকে। আপিল বিভাগে একজনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয় বলে জানান অসীম কান্ত পাল।
আপিল বিভাগে ফাঁসির দণ্ড বহাল থাকার পর সাইফুল ওরফে শহীদ এবং শহীদুল্লাহ ওরফে শহীদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়ে ব্যর্থ হন। প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ হওয়ার নথি চট্টগ্রাম কারাগারে এসে পৌঁছানোর পর তাদের ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আগে ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে স্ত্রী হত্যার দায়ে দণ্ডিত এক আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়েছিল। এর দশ বছর পর আরও দুজনের ফাঁসি কার্যকর হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে।
মাকু রবিদাসের ফাঁসি কার্যকরে থাকছেন যারা
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে এরই মধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। আনা হয়েছে মরদেহ বহনের ব্যাগ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে একটি অ্যাম্বুলেন্স। কাশিমপুর কারাগার থেকে আনা জল্লাদ রাজু প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পালন করবেন। কারাগারের বাইরের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে। মাকু রবিদাসকে শেষবারের মতো কৃতকর্মের জন্য দোষ স্বীকার করে ভগবানের কাছে প্রার্থনার সুযোগ দেওয়া হবে। এজন্য রাত সোয়া ৮টায় পুরোহিত অমৃত রাম ভট্টাচার্যকে কারাগারের ভেতরে নেওয়া হয়।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাকারের জেলার মাসুদ পারভেজ মঈন জানান, ফাঁসি কার্যকরের সময় ডিআইজি (প্রিজন) তৌহিদুল ইসলাম উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া উপস্থিত থাকবেন জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ আমিনুর রহমান, পুলিশ কমিশনারের পক্ষে উপ পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বাসুদেব বনিক, সিলেটের পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা, কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সগির মিয়া, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান, সহকারী সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান এবং অতিরিক্ত জেল সুপারসহ সংশ্লিষ্টরা।
মাকু রবিদাসের শেষ ইচ্ছা ‘বনফুলের মিষ্টি’
প্রতিবেশীকে হত্যার দায়ে মাকু রবিদাসের (৪৭) ফাঁসি কার্যকর হবে মঙ্গলবার (১২ জুলাই) রাত ১২টা ১ মিনিটে।এরই মধ্যে তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করেছে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। শেষ ইচ্ছা হিসেবে মাকু রবিদাস কারা কর্তৃপক্ষের কাছে বনফুলের মিষ্টি খেতে চেয়েছেন। তার ইচ্ছানুযায়ী এক কেজি বনফুলের মিষ্টি কিনে দেন কারা কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে নারকেল, ডাব, পোলাও খেতে চেয়েছেন মাকু রবিদাস। সেগুলোও নিজ খরচে কিনে এনে খেতে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাসুদ পারভেজ মঈন বলেন, শেষ ইচ্ছা পূরণের পাশাপাশি তার পরিবারের লোকজনের দেওয়া খাবার পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে খেতে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার রাত ৮টায় পরিবারের ৫ সদস্য তার সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা করে বের হয়ে যান। স্বজনদের মধ্যে ছিলেন মাকু রবিদাসের দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। মাকু রবিদাসের স্ত্রী প্রায় ৬ মাস আগে মারা গেছেন। ফাঁসি কার্যকরের পর কারাগারের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে মরদেহ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলেও জানান জেলার মাসুদ পারভেজ মঈন।