ঈদের সিনেমায় মণিহার জমজমাট

ঈদে যশোরের মণিহার প্রেক্ষাগৃহ জমজমাটভাবে ব্যবসা করেছে। বহু দিন পর সিনেমা হল মুখি হয়েছে যশোরের মানুষ। এবছরই এই সিনেমা হলটি দর্শকদের কাছে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করেছে। শুধু তাই নয়, ব্লাকেও টিকিট কিনে সিনেমা দেখেছে দর্শকরা। আবার অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে গেছে বাড়িতে।

যশোর মণিহার সিনেমা হলে এ বছর ঈদে মুক্তি পেয়েছে ‘বাদশা দ্য ডন’। বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এ সিনেমাটি ভালোভাবে গ্রহণ করেছে যশোরে দর্শকরা। প্রতিদিন উপচে পড়া দর্শকদের ভিড় ছিল এ সিনেমা হলে।

এ বছর সিনেমা হলে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট যশোরের সভাপতি ডি এম শাহিদুজ্জামান বলেন, সুস্থ্য ছবি ও ভালো পরিবেশ হওয়ার কারণে মানুষ সিনেমা হল মুখি হচ্ছে। বিনোদন থেকে মানুষ সরে যায়নি। দীর্ঘদিন ভালো মানের সিনেমা তৈরি না হওয়ার কারণে আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো আবদ্ধ হয়ে পড়েছিল। তাদের কাছে একমাত্র টেলিভিশনই ছিল বিনোদনের মূলকেন্দ্র বিন্দু। কিন্তু এবার রুচি সম্মত সিনেমা তৈরি হওয়ার কারণে মানুষ হল মুখি হয়েছে। একই সাথে সিনেমা হলে ভালো পরিবেশও তৈরি হয়েছে।

তবে সুধী মহল মনে করছে, প্রতি বছর ঈদের সময় পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এ বছর যশোরে সেরকম কোন অনুষ্ঠান হয়নি। ঈদের দিন কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়ায় যে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে সে কারণে কেউ অনুষ্ঠান করতে সাহস পায়নি। যে কারণে মানুষ সিনেমা হল মুখি হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন পর হলে বসে সিনেমা দেখেছে।

মণিহার সিনেমা হলে ছবি দেখতে আসা যশোর উপশহর ডিগ্রি কলেজের অনার্স পড়–য়া শিক্ষার্থী মাসুদ পারভেজ জানান, অনেক দিন পর এবার ঈদে মণিহারে সিনেমা দেখতে এসেছিলাম। কিন্তু ৫০ টাকার টিকিট ব্লাকে ৬০ টাকা দরে কিনে সিনেমা দেখতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সিনেমাটি দেখে টাকা উসুল হয়েছে। ভালো লেগেছে সিনেমাটি। এ রকম সিনেমা হলে প্রদর্শন করা হলে মানুষ আবার সিনেমা হল মুখি হবে বলে তিনি জানান।

যশোর সরকারি এম এম কলেজের শিক্ষার্থী সজিব জানান, রোববার রাতে নাইট শো সিনেমা দেখতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। কারণ সিনেমা হলে গিয়ে কোন টিকিট পাননি। তার সাথে আসা তার বন্ধু তৌহিদুল ও মাহবুবও ফিরে এসেছে।

তিনি বলেন, অনেক দিন পর বাংলাদেশের সিনেমা যেন আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ঈদের এই জমজমাট ভাবে কেটে গেলে বন্ধুদের নিয়ে আবার সিনেমাটি দেখতে যাবেন বলে তিনি জানান।

মণিহার সিনেমা হলের কর্মকর্তা প্রদীপ দাস জানান, এ বছর মণিহারে ব্যবসা সফল হয়েছে। সিনেমা ব্যবসারা মন্দাভাব কেটে গেছে। প্রতিদিন প্রচুর দর্শক আসছে সিনেমা দেখতে।

তিনি বলেন, এ বছর দর্শকরা ‘বাদশা দ্য ডন’ সিনেমাটি ভালোভাবে গ্রহণ করেছে। যে কারণে মানুষ সিনেমা দেখতে আসছে।

তিনি আরও বলেন, এ বছর ঈদে মানুষ লং টাইম ছুটি পেয়েছে। এ কারণে প্রিয়জনদের সাথে বিনোদন উপভোট করতে সিনেমা হলে এসেছে।

কালোবাজারে টিকিট বিক্রি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুপুরের টাইমে প্রচুর দর্শক হয়। এ কারণে টিকিট কালোবাজারে বিক্রির সম্ভববনা থাকে।

খোঁজনিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে যশোর জেলায় ৫টি সিনেমা হল চালু রয়েছে। এরমধ্যে মণিরামপুরে দুটি, শার্শার বাগআঁচড়ায় একটি, অভয়নগরের নওয়াপাড়ায় একটি ও যশোর শহরে মণিহার সিনেমা হলটি। মণিরামপুরের পূরবী সিনেমা হলে ঈদ উপলক্ষে প্রদর্শিত হচ্ছে ‘রানা পাগলা দ্য মেন্টাল’ এবং মধুমতি সিনেমা হলে প্রদর্শিত হচ্ছে ‘স¤্রাট’। শার্শার বাগআঁচড়ায় ময়ূরী সিনেমা হলে প্রদর্শন হচ্ছে ‘শিকারী’। নওয়াপাড়ার বর্ণালী সিনেমা হলে ঈদ উপলক্ষে মুক্তি পেয়েছে বাদশা। আর যশোর শহরের দেশের অন্যতম সিনেমা হল মণিহার এ দেখানো হচ্ছে বাদশা দ্য ডন।

তবে সিনেমা হল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বাদশা দ্য ডন’ ও ‘শিকারী’ এবছর ব্যবসা সফল হয়েছে। আর ‘মেন্টাল’ ও ‘স¤্রাট’ ভালো ব্যবসা করতে পারেনি।