লড়াকু ওসি মুর্শেদসম্মুখ লড়াইয়ে লিপ্ত থেকে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠিন আক্রমণ গড়ে তুলেছিলেন। গুলি ছোড়ার সময় নিজের নিরাপত্তার বিষয়টিও তার কাছে হয়ে উঠেছিল ‘গৌণ’। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ছাড়াই জানবাজির লড়াইয়ে তার নেতৃত্বাধীন পুলিশ দল শেষতক কোণঠাসা করে জঙ্গিদের। পুলিশের গুলিতে এক জঙ্গি নিহত হয়, জীবিত ধরা পড়ে একজন।
একেবারে সামনে থেকে এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন নীল পাঞ্জাবি আর জিন্স প্যান্ট পরিহিত মো: মুর্শেদ জামান। কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তিনি। তার সাহস ও বীরত্বে পুলিশ সদস্যরাও হয়ে ওঠেন উজ্জীবিত। চাইনিজ রাইফেল হাতে তার বুক চিতিয়ে লড়ার মানসিকতা হয়ে ওঠে পুরো অভিযানের প্রাণশক্তি।
ঈদের দিন বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার অদূরে শহরের আজিমউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে পুলিশের ওপর হামলা সশস্ত্র হামলা চালায় জঙ্গিরা। খবর পেয়েই জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ‘ডু অর ডাই’ চেতনা নিয়ে লড়াই শুরু করেন কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: মুর্শেদ জামান।
জঙ্গিদের প্রতিরোধে প্রায় দু’ঘণ্টাব্যাপী শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের এক মিনিট ৪ সেকেন্ড’র একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
আর সেই থেকে কিশোরগঞ্জ তো বটেই, অধুনালুপ্ত বৃহত্তর ময়মনসিংহ ছাপিয়ে ‘টক অব দ্য টাউন’ হয়ে উঠেন ২০০৫ সালে পুলিশ বাহিনীতে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে যোগ দেয়া ময়মনসিংহের সন্তান মুর্শেদ জামান। ওই ভিডিও ক্লিপসে দেখা যায়, একটি চাইনিজ রাইফেল হাতে পুলিশ সদস্যদের নিয়ে গলির ভেতর দিয়ে কিছু পথ হেঁটে যাচ্ছেন কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো: মুর্শেদ জামান। এরপরই তাদের থেকে একটু সামনে এগিয়ে অনবরত গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে সামনে এগুতে থাকেন তিনি।
এরপর একটি বাড়ির গেটের ভেতর বা বাইরে গিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করেন। এ সময় তার পেছনের পুলিশ সদস্যরা তাকে কাভার করার জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ অ্যাকশনেই গুলিতে মারা যায় জঙ্গি আবীর। আর ধরা পড়ে জঙ্গি শফিউল। রোববার (১০ জুলাই) বিকেলে মোবাইলফোনে ওই অ্যাকশনের বর্ণনা দেন ওসি মুর্শেদ। তিনি বলেন, শোলাকিয়া মাঠেই ডিউটি করছিলাম। হঠাৎ ওয়ারলেসে মেসেজ পাই, ‘আমরা আক্রান্ত হয়েছি। আমাদেরকে বাঁচান।’
পরে এসপি’র নির্দেশে আমি ও কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দৌড়ে ঘটনাস্থলে যেতে থাকি। আক্রান্ত একজন আমাকে বলে, ওরা আমাদের বোমা মেরেছে। চাপাতি দিয়ে কুপিয়েছে। এক কনস্টেবলের চাইনিজ রাইফেল নিয়ে আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে জঙ্গিদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকলে এক সময় ওরা পিছু হটে একটি গলিতে আশ্রয় নেয়। আমি গলিটাকে লক্ষ্য করে আবারো গুলি ছুঁড়তে থাকি। পুলিশ সদস্যদের ‘কাভার’ নিয়ে এগুতে থাকি। সহকর্মীদের রক্ত ও তাদের অবস্থা দেখে মাথায় শুধু কাজ করছিল, ওদেরকে পালাতে দেয়া যাবে না। নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার মতো সময় ছিল না। হয় মারবো নইলে মরবো এ ভাবনাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। তিনি বলেন, পুলিশের প্রাণের বিনিময়ে ওদের বড় ধরনের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
Image & Video : banglanews24