নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের বিচার শুরু

আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামকে অপহরণের পূর্বে তাকে আদালতপাড়ায় পাঞ্জাবি ও পাগড়ি পরে এক র‌্যাব সদস্য অনুসরণ করেছিল। এ সময় পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে আটক করা হয়। পরে র‌্যাব সদস্য পরিচয় দিলে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ সদস্যরা।সোমবার (১১ জুলাই) সকালে এসব তথ্য দিয়ে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।

এর আগে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা হতে বেলা ১২টা পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত ২৩ আসামির উপস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালতে মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তা এবং বিজিবি ও পুলিশ সদস্যসহ ৭ জনের সাক্ষ্য ও জেরা গ্রহণ সম্পন্ন হয়। এসময় সাক্ষীদের দায়িত্ব ও ঘটনা সম্পর্কে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবীরা। পরে আদালত আগামী ১৬ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন।নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন জানান, সোমবার ৮ জনকে সাক্ষ্য প্রদানের আহ্বান থাকলেও ৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

সাক্ষ্য প্রদানকারীরা হলেন- তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে মোবাইল ফোনের কললিস্ট প্রদানকারী এয়ারটেল কর্মকর্তা শাহরিয়ার আহম্মেদ, বাংলা লিংক কর্মকর্তা হোসনে আরা হক, তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবির কনস্টেবল সাইফুল ইসলাম, ডিবি কার্যালয়ের ঝাড়ুদার মেহেদী হাসান মিন্টু, পুলিশ কনস্টেবল ওমর হাওলাদার, কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম, তৎকালীন র‌্যাব- ১১ এর সদস্য বর্তমানে বিজিবি যশোর অঞ্চলে কর্মরত হাবিলদার কামালউদ্দিন।

এর মধ্যে গ্রামীণ ফোনের কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহম্মেদের বদলে মশিউর রহমান এসেছিলেন। এজন্য তার সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। ইশতিয়াক আহম্মেদ বর্তমানে গ্রামীণ ফোনে চাকুরীরত নেই। তবে তাকে খুঁজে বের করে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ১৬ জুলাই পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে জানান অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন।

ওয়াজেদ আলী খোকন আরো জানান, মোবাইল কোম্পানির কর্মকর্তারা মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে আসামিদের কল রেকর্ডস সরবরাহের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনার দিন আদালতপাড়ায় নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামদের অনুসরণকারী এক র‌্যাব সদস্যকে শনাক্ত করার বিষয়টি তুলে ধরেন।

সাক্ষ্য দেয়ার সময় বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা আদালতকে জানান, ঘটনার দিন ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ অন্যরা নারায়ণগঞ্জের আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন। তখন তাদের পাঞ্জাবি ও পাগড়ি পরিহিত এক ব্যক্তি অনুসরণ করছিল। এসময় পুলিশ সদস্যদের সন্দেহ হলে তাকে সেরেস্তার কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে আটককৃত ব্যক্তি নিজেকে র‌্যাব সদস্য তৈয়ব বলে পরিচয় দেন। তার পরিচয় শনাক্ত করার জন্য তৎকালে আদালতে সাক্ষী দিতে আসা র‌্যাব সদস্য বর্তমানে বিজিবি যশোর অঞ্চলে কর্মরত হাবিলদার কামালউদ্দিনকে ডেকে আনা হয়। এরপর তৈয়বের পরিচয় শনাক্ত হলে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ সদস্যরা।

উল্লেখ্য, সাত খুনের ঘটনায় দু’টি মামলা হয়। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ে জামাতা বিজয় কুমার পাল ও অপর বাদী নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি। দুটি মামলাতেই অভিন্ন সাক্ষী হলো ১২৭ জন করে। এ পর্যন্ত ৮০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়েছে।

২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন ও গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম এবং আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম অপহৃত হন।

পরে ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ছয়জনের ও ১ মে একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্ত শেষে প্রায় এক বছর পর গত ৮ এপ্রিল নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি সাত খুনের দুটি মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২৩ জন কারাগারে আটক রয়েছেন। আর চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে এখনো ১২ জন পলাতক রয়েছে।