প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস প্রতিরোধে দেশের জনগণকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেছেন, দেশের মানুষ যদি রুখে দাঁড়ায় তাহলে এদেশে জঙ্গি সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান হবে না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুললে কিন্তু এটা থামবে। ঠিক যেমনটি মাদারিপুরে হয়েছে। একজন অধ্যাপককে হত্যা প্রচেষ্টা জনগণ ঠেকিয়ে দিয়ে সন্ত্রাসীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। কাজেই এইভাবেই সকলকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়নের দিকে আমরা যেমন এগিয়ে যাচ্ছি তেমনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের একটা সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে, ঠিক সে সময় এ সমস্ত ঘটনা- প্রতিটা কাজই কিন্তু একটা হোঁচট খেয়ে যায়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এক অনুষ্ঠানে বোতাম টিপে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক এবং জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ জাতীয় মহাসড়ক দু’টি চারলেন মহাসড়কের ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে নবনির্মিত মহাসড়ক দু’টি উদ্বোধন করেন।অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সেনাবাহিনী প্রধান আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ের সর্Ÿোচ্চ কর্মকর্তাবৃন্দ, কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীগণ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত তথ্য চিত্র এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রাণালয় সুত্র জানায়, ২০০৬ সালে সরকার ২ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চট্টগ্রাম নগরী গেট পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক সম্প্রসারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম চারলেন মহাসড়ক প্রকল্প অনুমোদন করে। পরবর্তীতে ১৯২ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার সড়কটির সম্প্রসারণ কাজে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা হয়। প্রকল্পটিতে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি অর্থায়ন করছে জাপান ঋণ মওকুফ তহবিল-জেডিসিএফ।প্রকল্পের আওতায় ২৩টি সেতু, ২৪২টি কালভার্ট, ৩টি রেলওয়ে ওভারপাস, ১৪টি সড়ক বাইপাস, ২টি আন্ডারপাস, ৩৪টি স্টীল ফুটওভারব্রীজ এবং ৬১টি বাস-বে নির্মাণ করা হয়েছে।
অপরদিকে, ময়মনসিংহ থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়কের চারলেনে উন্নীতকরণের ফলে ময়মনসিংহ বিভাগ ও গাজীপুর জেলা থেকে কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য রাজধানীতে দ্রুত সড়ক পথে পরিবহনে সহজ হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পূর্বে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াত করতে প্রায় চার ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হতো। এখন ভ্রমণ সময় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কটিতে মিডিয়ান নির্মাণসহ ১৫৫টি কালর্ভাট, ৫টি নতুন সেতু, ১টি ফ্লাইওভার, ১টি রেলওভার পাস, পথচারীদের নিরাপদ সড়ক পারাপারের লক্ষ্যে ৪টি স্টীল ফুটওভার ব্রীজ নির্মাণ করা হয়েছে।
সড়কটির নূন্যতম প্রশস্ততা ২১ দশমিক ২ মিটার এবং বাজার ও বাণিজ্যিক অংশে প্রশস্ততা প্রায় ২৫-৩৫ মিটার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এ সড়কের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাস-বেসহ ৩ হাজার ৪২৫ মিটার কংক্রিট পেভমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। যানবাহন চালকসহ সড়ক ব্যবহারকারীদের ভ্রমণ নিরাপদ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সাইন সিগন্যাল স্থাপন করা হয়েছে।সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এসডব্লিউও (পশ্চিম) যৌথভাবে প্রকল্পটি ৪টি প্যাকেজে বাস্তবায়ন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারলেনে উন্নীত সড়ক দু’টি সরকারের পক্ষ থেকে এই দু’টি রুটের যাত্রীদের জন্য ঈদ উপহার।তিনি বলেন, ব্যয়বহুল এবং শ্রমসাধ্য এই কাজের উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে ৪-লেনে উন্নীত আরও ২৭৮ কিলোমিটার মহাসড়ক আমাদের জাতীয় মহাসড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হল। যা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সামনেই ঈদ।ঢাকা মহানগরীতে বসবাসকারী অধিকাংশ কর্মজীবী মানুষ ঈদের ছুটিতে যাবেন গ্রাম-গঞ্জে, নিজ বাড়িতে। এ দু’টি মহাসড়ক ৪-লেনে উন্নীতকরণের ফলে এ রুটে যাতায়াতকারী ঘরমুখো মানুষের ভ্রমণ পূর্বের যে কেন সময়ের তুলনায় নির্বিঘœ ও সহজ হবে। এটি নিঃসন্দেহে দেশবাসীর জন্য একটি সু-খবর।তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মহাসড়ক নেটওয়ার্কে চিহ্নিত ১৪৪টি দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে যানবাহন চলাচল নিরাপদ করার নিমিত্তে গতিরোধকসহ নানা প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। এতে সড়ক দূর্ঘটনা এবং প্রাণহানি অনেকাংশে কমে আসবে।অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো একান্ত জরুরি বলেও এ সময় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, আমরা সব ধরনের আর্থ-সামজিক সূচকে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছি। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে ২২ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলার। প্রায় দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করেছি। ৫ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত ৭ বছরে আমরা বাজেটের পরিমাণ প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি করেছি। নিজস্ব অর্থ থেকে বাজেটের ৯০ শতাংশ বাস্তবায়ন হচ্ছে। সমগ বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আমাদের আত্মবিশ্বাস আছে- বাংলাদেশকে আমরা আরো এগিয়ে নিতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য হল, দেশ যখন এগিয়ে যায় মানুষ যখন খুব আনন্দে উচ্চসিত হয়, ঠিক সেই সময় জানিনা কেন যেন আমাদের ওপর এক একটা আঘাত চলে আসে।
এ প্রসঙ্গে তিনি গতরাতে গুলশানের একটি বিদেশি মালিকানাধীন রেষ্টুরেন্ট হলি অর্টিজান বেকারীতে জিম্মী পরিস্থিতির উল্লেখ করে বলেন, আমি জানি আপনারা খুব উদ্বেগের সঙ্গে রয়েছেন। গত রাতে এশার নামাজের পর পর কিছু সন্ত্রাসী তারা গুলশানের হলি আর্টিজান রেষ্টুরেন্টে ঢুকে সেখানে যারা ছিল তাদেরকে জিম্মী করে ফেলে। আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অতন্ত তৎপর ছিল। যে মুহুর্তেই ঘটনাটি ঘটেছে টহল পুলিশ তৎক্ষণাৎ সেখানে চলে যায় এবং আমাদের থানা পুলিশও চলে আসে এবং তারা যখনই অ্যাকশন নিতে চায় তখনই সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় দু’জন পুলিশ অফিসার মারা যায় এবং প্রায় ৩০ জনের মত আহত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,যা হোক আমরা সেখানেই থেমে থাকিনি..তাদের উপস্থিতির জন্যই সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়নি। তারা সেখানেই আটকা থাকে। এর মাঝেই আমরা সেনাবাহিনীকে ডাকি এবং সেনাবাহিনীর যে প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ান, সিলেট থেকে সে ব্যাটালিয়ান আনা হয়। সাভার থেকে কমান্ডো,ক্যান্টনমেন্ট থেকে কমান্ডো নিয়ে আসা হয়। সেবাহিনীর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পুলিশ, র্যাব,বিজিবি-তারাও সেখানে প্রস্তÍুত থাকে এবং এই সন্ত্রাসীদের দমন করার, এদের হাত থেকে মানুষদের বাঁচানোর পরিকল্পনা আমরা নেই। এগুলো করতে করতে রাত যখন ৪টা তখন সকলে মিলে, আমাদের সেনা প্রধানও এখানে আছেন (অনুষ্ঠানে উপস্থিত)। সকলেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন।
গুলশান ২ সং সড়কের হলি আর্টিজান বেকারীতে গতরাতের রুদ্ধশ্বাস জিম্মী পরিস্থিতি সফল ভাবে শেষ করে ১৩ জনকে জীবিত উদ্ধার এবং ৬ সন্ত্রাসীকে হত এবং একজনকে গ্রেফতারের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেনা, নৌ,বিমানবাহিনী,পুলিশ,র্যাব,বিজিবি সহ সকল আইনশৃন্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অভিনন্দন জানান। বেসরকারী টিভি চ্যানেলগুলোর সরাসরি সম্প্রচার এসব সন্ত্রাসী ঘটনার ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের জন্য সুবিধাজনক হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এসব ঘটনা বিশ্বের অন্যান্য স্বনামধন্য চ্যানেল ও বার্তা সংস্থার মত সরাসরি সম্প্রচার থেকে বিরত থেকে সংশ্লিষ্ট চ্যানেল মালিক ও কতৃর্পক্ষের প্রতি আইন শৃন্খলা রক্ষাারী বাহিনীর পরামর্শ মেনে চলার আহবান জানান।প্রধানমন্ত্রী বলেন,র্যাব অপারেশনে যাচ্ছে সেটা টিভিতে দেখা্েচ্ছ। তারা কোথায় দাঁড়িয়ে অপারেশনের জন্য তৈরী হচ্ছে সেটাও দেখাচ্ছে ।
তিনি বলেন,যে টেলিভিশনগুলি এগুলো দেখায়, তারা কি একবার চিন্তা করেনা যে, ভিতরে যারা সন্ত্রাসী মানুষগুলোতে জিম্মী করে রেখেছে তরাওতো এগুলো দেখছে। এগুলো দেখার মধ্য দিয়ে তারা পরবর্তী পদক্ষেপ কি নেবে সেটাও তারা ঠিক করে ফেলছে। কাজেই কোন প্রিপারেশনই নেয়া যাচ্ছে না, সবকিছুই টেলিভিশনে এসে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই ফাঁস হয়ে যাচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঠিক এই ঘটনা আমরা দেখেছিলাম বিজিবি’র (সাবেক বিডিআর) বিদ্রোহের সময়। তখন আমরা যে অপারেশন চালাই তখনও এই একই অবস্থা আমরা দেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি টিভি চ্যানেল মালিক এবং কতৃর্পক্ষের কাছে উদাত্ত আহবান জানান,‘যারা টিভির মালিক বা কতৃর্পক্ষ রয়েছেন তাদের প্রতি আহবান জানাবো অপনারা দেখেন সিএনএন’এ আমেরিকায় প্রায় ৩০ জন মানুষকে মেরে ফেলে দিল (সমকামীদের সাম্প্রতিক নাইটক্লাবে হামলা), একটা লাশের ছবি বা এক ফোঁটা রক্তের ছবি কিন্তু তারা দেখায়নি। না সিএনএন না বিবিসি না অন্য কোন মিডিয়া বা কোন চ্যানেল।আমাদের দেশে ছবি দেখাবোর জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিন্তু এটার একটা প্রভাব একটা ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে অসুস্থ মানুষ বা প্রেগন্যান্ট মহিলা-তাদের ওপর কি প্রভাবটা পড়তে পারে সেই চিন্তাটাতো করা উচিত। আর দ্বিতীয় কথা, যখন কোন সন্ত্রাস দমনের জন্য আমরা অপারেশনে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি তার প্রতিটা পদক্ষেপ যদি টেলিভিশন রিলে করা শুরু করতে থাকে তাহলে কি করে সেই অপারেশন সাকসেসফুল হবে ?
তিনি বলেন,যা হোক আমরা বাধ্য হয়েছিলাম-এখানকার ইন্টারনেট, ক্যাবল লাইন,ভাইবার, ওয়েব- ঐখানকার সব সংযোগ বন্ধ করে ঐ এলাকা পুরো বন্ধ করে দিতে। টিভি চ্যানেলগুলোকে অনেক রিকোয়েস্ট করে তাদের সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করাতে।প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন- কিছু কিছু টেলিভিশনতো শুনতেই চায় না (সরাসরি সম্প্রচার বন্ধের অনুরোধ),..কারা কারা শুনতে চায়না সেটা আমার খেয়াল আছে। আমি এটা ভবিষ্যতে দেখব।শেখ হাসিনা বলেন, এই প্রাইভেট টিভি চ্যানেল আমার হাতে দেয়া, আমি দিতেও যেমন পারি, নিতেও তেমন পারি।
তিনি আরও বলেন,কাজেই আমার কাজে যারা বাধা দেবে সেটা তখন ও সহ্য করা হবে না। কাজেই ভবিষ্যতে আমি বলব,শতর্ক হবার জন্য। কারণ এটা একটা ছেলে খেলা না।..তারপর ঘটনার অলোচনা। কি হল না হল বলতে গিয়ে মানুষ বিভ্রান্ত করা, কেন ? আমরা এই অপারেশেনটা সফল করতে পেরেছিলাম কাণ আমরা কল সংযোগ বন্ধ করতে পেরিছিলাম। ঐ এলাকার ৪ কিলোমিটারের মধ্যে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পুরো এলাকাটা সিল করে এই কমান্ডা অপারেশনটা হয়। যে কারণে আমরা এটা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছি। অন্তত কিছু লোক আমরা বাঁচাতে পেরেছি আর সন্ত্রাসীদের খতম করতে পেরেছি। সুতরাং এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে না ঘটে আমরা সেটাই চাই। বরং বিভিন্ন টেলিভিশন, রেডিও,মিডিয়া সোশ্যাল মিডিয়া সবাইকে আমি এটাই বলব- সন্ত্রাসের পথ যেন মানুষ পরিহার করে। প্রয়োজনে সেই প্রচারটা যেন খাল ভাবে করাা হয়। সন্ত্রাসের খারাপ দিকটা প্রচার করেন, যেন ছেলে-মেয়েরা এদিকে না যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অল্প বয়সে তারুণের একটা উদ্দীপনা থাকে কাজেই সে সময় তাদের বিভ্রান্ত করা বা বিপথে নেয়া অনেক সহজ। বিপথে যেন না যায় সেটা দেখা সকলেরই দায়িত্ব। কাজেই আমি মনে করি সমগ্র বাংলাদেশে জনমতটা আরো শক্ত করে তুলে ধরা উচিত। আর এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যারাই জড়িত থাকবে এখানে জনগণকেই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ প্রতিরোধ গড়ে তুললেই কিন্তু এটা থামবে। ঠিক যেমনটি মাদারিপুর হয়েছে। একজন অধ্যাপককে হত্যা প্রচেষ্টা জনগণ ঠেকিয়ে দিয়ে সন্ত্রাসীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। কাজেই এইভাবেই সকলকে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ বাংলাদেশে উন্নয়নের দিকে আমরা যেমন এগিয়ে যা”িছ তেমনি তেমনি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের একটা সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হচ্ছে ঠিক সে সময় এ সমস্ত ঘটনা- প্রতিটা কাজই কিন্তু একটা হোঁচট খেয়ে যায়।এসব সন্ত্রাসীদের দেশপ্রেম, মানবতা, ধর্ম-কোন কিছুই নেই বলে তিনি এদের ধীক্কার জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না রমজান মাসে একজন মুসলমান যখন নামাজ পড়বে। এশার আজান হয়েছে অথচ আজান উপেক্ষা করে এরা গেল মানুষ খুন করতে-তাহলে মেন মুসলমান তারা। এটা হল বড় প্রশ্ন তারা মেন মুসলমান ? কেমন ধর্ম তারা রক্ষা করল ? ..তারা নামাজ রেখে মানুষ খুন করতে চলে গেল! আর সেখানে নিজেরাও বাঁচতে পারল না, তাদেরকেও মরতে হল। তাদের পরিবার-তারাই বা কি পেল ।প্রধানমন্ত্রী এ সময় আক্ষেপ করে বলেন, তাহলে কেন যে এ ধরনের সন্ত্রাসের পথে মানুষ যায় সেটা আমার বোধগম্য নয় এবং ভোবে তারা হত্যাগুলি করেছে, সেগুলি দেখা যায় না। যেমন একটা জিঘাংসা-প্রতিহিংসা চরিতার্থ করেছে। একটা মানুষ অপর একটা মানুষের ওপরে কি করে এভাবে আক্রমন করে ? আর তাও এই পবিত্র রমজান মাসে। আসলে এরা কোন ধর্মেই বিশ্বাস করে না। এদের কোন ধর্মই নেই। এই সন্ত্রাসটাই এদের ধর্ম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে সরকার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ এর লক্ষ্য অর্জন, জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ২০৩০ অজর্ন এবং ২০৪১ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মান করে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসাবে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার তাঁর রাজনৈতিক অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করেন।