29-06-16-PM_Parliament-5

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন,বেগম খালেদা জিয়া রোজা-রমজানের দিন ইফতার পার্টিতে গিয়ে নতুন নতুন গিবত গাওয়া, মানুষের বদনাম করা, মিথ্যা ও অসত্য কথা বলে যাচ্ছেন। জনগণ এর বিচার করবে।তনি বলেন, রোজা রমজানের দিন আমরা ইফতার পার্টিতে গিয়ে আল্লাহ রসূলের নাম নেই। আর তিনি প্রতিদিন ইফতার পার্টিতে গিয়ে নতুন নতুন গিবত গাওয়া, মানুষের বদনাম করা, মিথ্যা ও অসত্য কথা বলে যাচ্ছেন। আমি এর বেশি কিছু বলতে চাই না। জনগণই এর বিচার করবে।তিনি বুধবার সংসদে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশে কোন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের স্থান হবে না। বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কেউ অন্য কোথাও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে পারবে না। এ ব্যাপারে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে।তিনি বলেন, কিছু কিছু ঘটনা ঘটেছে, সাথে সাথে এগুলোর তদন্ত করা, অপরাধীদের গ্রেফতার করা এবং তাদের বিচারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা যথেষ্ট তৎপর রয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা হলো বিএনপি-জামায়াত যেভাবে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে এর চেয়ে বড় সন্ত্রাসী কাজ আর কি হতে পারে। এর পর গুপ্তহত্যা যেটা আমরা আগেই সন্দেহ করেছিলাম হঠাৎ কেন এ গুপ্তহত্যা। মাদারীপুরে একজন শিক্ষককে হত্যার উদ্দেশে যে আঘাত করেছে জনগণ সাহসের সাথে আঘাতকারীকে ধরে ফেলেছেন। তাকে নিয়ে অভিযানের সময় বন্দুকযুদ্ধে সে মারা যায়। যে লোকটা একজন কলেজ শিক্ষককে মারতে গিয়ে জনগণের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে, তার জন্য খালেদা জিয়ার এতো মায়া-কান্না? তার মানে কি দাঁড়াচ্ছে। হাড়ির ভাত সিদ্ধ হলো কি না একটা টিপলেই বুঝা যায়। এই একটা ঘটনা থেকেই বুঝা যায় গুপ্তহত্যার সাথে যে তার সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা করে তারা যখন জনগণের রুদ্ররোষে শিকার হয়েছে তখন গুপ্তহত্যা করে তারা দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করতে চাচ্ছে।শেখ হাসিনা বলেন, বাজেট জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটি দলিল। এ লক্ষ্যে প্রতিবছর বাজেট উপস্থাপন করা হয়। বাজেটে সরকারের নিজস্ব চিন্তা চেতনা প্রতিফলন হয়।

তিনি বলেন, সরকার ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০০৫-৬ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এই সক্ষমতা সরকার অর্জন করেছে সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের মাধ্যমে। বৃহৎ বাজেট উপস্থাপনের সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি সরকার তা বাস্তবায়নের সক্ষমতাও আমরা অর্জন করেছি। এ ক্ষেত্রেও রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আগে বাজেট পেশ করতে হলে অন্যের কাছে হাত পাততে হতো। এই পরনির্ভরশীলতা এখন কমেছে। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সক্ষমতাও অর্জন করেছি। আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে আমরা নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি। মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমরা বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব মন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পেরেছে। এই ৬ শতাংশের বলয় থেকে বেরিয়ে এসে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ৭ দশমিক ২ ভাগ প্রবৃদ্ধির টার্গেট ধরা হয়েছে। আশা করি আমরা তা অর্জন করতে পারবো। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষের কল্যাণ হয়। জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। এই স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যই ছিল দেশের মানুষের কল্যাণ ও তাদের ভাগ্য পরিবর্তন। আমরা জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যেই কাজ করছি।তিনি বলেন, দারিদ্রের হার কমিয়ে ২২ দশমিক ৪ ভাগে নামিয়ে আনা হয়েছে। যা এক সময় প্রায় ৫৭ ভাগ ছিল। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল। ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্রের হার আরো ৮ থেকে ৯ ভাগ কমে আসবে। জনগণের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, রিজার্ভ বেড়েছে। মানুষ অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট স্বচ্ছলতা অর্জন করেছে। মানুষের খাদ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি জনগণের পুষ্টি সমস্যার সমাধান হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বিশেষ করে মহিলাদের গড় আয়ু বেড়েছে বেশি। মহিলাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টি নিশ্চিত করা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফরে এখন খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে দেশ খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। খাদ্য আমদানির পরিবর্তে দেশ এখন খাদ্য রপ্তানী করছে।
তিনি বলেন, দেশ এখন ১৪ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। দেশের ৭৬ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা হবে।

কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের কোন ক্ষতি করবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যদি পরিবেশের কোন ক্ষতি করার সম্ভাবনা থাকতো তাহলে আমরা এই প্রকল্প গ্রহণ করতাম না। সুতরাং এটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। এ ছাড়া পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়েও চিন্তার কোন কারণ নেই। আধুনিক ব্যবস্থাপনায় চেরনবিল দুর্ঘটনার মতো কোন দুর্ঘটনার সম্ভাবনা নেই। গ্যাসের চাহিদা মেটানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্যাস সমস্যা সমাধানে নতুন নতুন কুপ খনন ও এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে যোগাযোগ ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-খুলনা চার লেনের কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ও মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহা সড়ক চার লেনে উন্নীত করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হচ্চে। ভবিষ্যতে ঢাকার যানজট নিরসনে পাতাল রেল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হবে।

স্বাস্থ্য সেবায় গৃহীত সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কমিউিনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ৩০ প্রকার ওষুধ এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার ফলে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার অনেক কমেছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। দেশের প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল স্থাপন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। এ লক্ষ্যে আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের সরকার ঘরবাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। একটি বাড়ি একটি খামারের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র সঞ্চয় বাড়ানোর জন্য পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তবায়িত হয়েছে। ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ১৬ কোটি মানুষের দেশে ১৩ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ মোবাইল ব্যবহার করছে। প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপন করা হবে। যশোর ও গাজিপুরে হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে। পবিত্র কুরআন শরীফও ডিজিটাল সংস্করণ করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার হার এখন ৭১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এই হার আরো বৃদ্ধি পাবে। সরকার বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে বই দিয়েছে। উপবৃত্তি এখন শুধু স্কুল পর্যায়ে নয় উচ্চ শিক্ষা স্তর পর্যন্ত দেয়া হচ্ছে। প্রথম শ্রেণি থেকে ডিগ্রী পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থী এখন বৃত্তি পাচ্ছে।

খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ রেকর্ড করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিঠা পানির মৎস উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে। আমাদের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন যে, খেসারী ডালে এখন আর লেথারজি হয় না।

সরকারি কর্মচারিদের বেতন প্রায় ১২৩ ভাগ বাড়ানো হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীর আর কোন দেশ সরকারি কর্মচারিদের জন্য এমন সুযোগ দিতে পারেনি।তিনি বলেন, সরকার প্রতিরক্ষা সেক্টরকে অনেক বেশি শক্তিশালী করেছে। আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী পৃথিবীর যেকোন দেশের বাহিনীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। সেনাবাহিনীর অনেকেই আগে সরকারের ক্ষমতায় ছিলেন। কিন্তু তারা সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে কিছুই করেননি। বরং তারা সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করেছেন ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে। আওয়ামী লীগ সশস্ত্র বাহিনীকে একটি আধুনিক, সুসজ্জিত ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ ও বান্তবায়ন করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ৫২ হাজার ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের সমস্যার সমাধান হয়েছে ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে। তারা এখন শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। ভারতের সাথে ছিটমহল বিনিময়ে ১০ হাজার ৫০ একর জমি বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে যুক্ত হয়েছে। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে আমরা গঙ্গার পানি চুক্তি ও পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেছিলাম।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাসÍবায়নের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিকভাবে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে এবং দেশের মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন হবে, মানুষ উন্নত জীবন পাবে।পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নয়নের অর্থনীতির পূর্বশর্ত হচ্ছে সে দেশের পুঁজিবাজার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন ও দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন অর্জনের জন্য রাজস্ব রায় বাড়ানো কোন বিকল্প নেই।তিনি বলেন, বর্তমান আয়কর আইনে গার্মেন্টস, গার্মেন্টসের কটন, এক্সসরিজ, পাট ও পাটজাত পণ্য, শাক-সবজি, লেদার গুডস, হিমায়িত পণ্য, প্যাকেটজাত খাদ্য পরিমাণসহ অন্যান্য রফতানি পণ্যের ওপর ০.৮০ হারে উৎসে আয় কর্তনের বিধান রয়েছে। প্রজ্ঞাপণ জারির মাধ্যমে রফতানির ওপর উৎস কর হারকে ০.৮০ থেকে ০.৬০ করা হয়েছে। এটি ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর রাখার প্রস্তাব করছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার বিভিন্ন কার্যকর ও যথোপযুক্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।তিনি সংসদে সরকারি দলের সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা পূর্বের মেয়াদে জনগণের অভূতপূর্ব রায় নিয়ে ৬ জানুয়ারি ২০০৯-এ সরকার গঠন করে। এ গণরায়ের ভিত্তি ছিলো ‘রূপকল্প-২০২১’, দিন বদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচির প্রতি জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন।তিনি বলেন, যখন আমরা ২০০৯-এ সরকার গঠন করি সারা বিশ্ব ছিল তখন অর্থনৈতিক মন্দাগ্রন্ত। দেশের অর্থনৈতিক অব¯’াও ছিল মন্দা কবলিত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক প্রগতিশীল আধুনিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মসূচি গ্রহণ করি।

তিনি বলেন, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা ও মজবুত করার লক্ষ্যে সামগ্রিক অর্থনীতির প্রধান বিষয় যেমন- মোট দেশজ আয়, প্রবৃদ্ধি, রফতানি আয়, কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাসে আমরা অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হই। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৫ সালের নমিনাল জিডিপি’র ভিত্তিতে বিশ্বে ৪৬তম এবং ক্রয়ক্ষমতা সমতার জিডিপির ভিত্তিতে ৩৪তম স্থান অধিকার করেছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান পদক্ষেপ এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প হিসেবে ‘বাংলাদেশ প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০-২০২১)’ প্রণয়ন করে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়। এ পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ অর্জনে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১১-১৫) বাস্তবায়িত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ৭ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে এবং ২০১৮ সাল নাগাদ এ সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের সাহসী নেতৃত্ব ও দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়েছে।

তিনি সংসদে স্বতন্ত্র সদস্য মো. রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের স্বার্থে ভাঙ্গা-বরিশাল সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের জন্য এডিবির অর্থায়নের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি ও ডিটেইলড ডিজাইন সমাপ্ত হয়েছে। বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির জন্য পিডিপিপির অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রযেছে। ইতোমধ্যে ঢাকা-খুলনা (এন-৫) মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে (ইকুরিয়া-বাবুবাজার লিংক সড়কসহ) মাওয়া পর্যন্ত এবং পাঁ”চর-ভাঙ্গা অংশে ধীর গতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ৪-লেন উন্নীতকরণের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প একনেক কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্প দু’টি বাস্তবায়িত হলে ঢাকা বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ সহজতর হবে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, বরিশালে ২টি সরকারি ও ২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তাই বরিশালে কোন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব এ্যানিম্যাল সায়েন্স এন্ড ভ্যাটেরিনারী মেডিসিনকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের পরিকল্পনা সরকারের আপাততঃ নেই। উল্লেখ্য, কারিগরি শিক্ষার প্রসারে বরিশালে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের কাজ সমাপ্তির পথে রয়েছে। এছাড়া বরিশাল বিভাগে বর্তমানে ৪টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ৬টি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ এবং বেসরকারিভাবে পরিচালিত ১৩০টি এমপিওভুক্ত কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের বর্তমান প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে পদ্মা সেতু, রেল যোগাযোগ ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম আমরা গ্রহণ করেছি। বিভিন্ন খাতে গৃহীত উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনাসমূহ এ সংসদে উপস্থাপন করছি।

তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ এবং শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে গৃহীত প্রকল্প- জেলা সড়ক উন্নয়ন (বরিশাল জোন), বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে পায়রা নদীর উপর পায়রা সেতু (লেবুখালী সেতু) নির্মাণ, খুলনা (রূপসা)-শ্রীফলতলা-তেরখাদা সড়ক (জেড-৭০৪১) উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ্ছাড়াও দক্ষিণ অঞ্চলের উন্নয়নে আরো অনেক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে।