sim-card-id-card-jobbar

বেতনভুক্ত কর্মী ও কমিশন এজেন্টদের চাপ দিয়ে আঙুলের ছাপ জালিয়াতি করে হাজার হাজার সিম অবৈধভাবে নিবন্ধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।বুধবার বেসরকারি মোবাইল অপারেটর কোম্পানি এয়ারটেলের কয়েক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে।অন্য অপারেটরগুলোরও তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ।এয়ারটেলের তিন জন টেরিটোরি ম্যানেজার ও ১৮ জন কমিশন এজেন্টকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছাপ জালিয়াতির তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সকালে তেজগাঁও পুলিশের উপ কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার। মোবাইল সিমের নিবন্ধন জালিয়াতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকায় ২২ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার ঢাকার আদাবর-শ্যামলী ও তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়।পুলিশ বলছে, আটক সবাই একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের মধ্যে ওয়াহিদ নামের একজন এয়ারটেলে কাজ করেন। ওই অপারেটরের কয়েকজন ডিস্ট্রিবিউটর ও রিটেইলারও এর জড়িত। তবে তারা কীভাবে ওই জালিয়াতি করছিল, কীভাবে তাদের সন্ধান মিলল, সে বিষয়ে কোনো তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

বুধবার সংবাদ সম্মেলেনের মাধ্যমে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে ওয়াহিদুল ইসলাম জানান।তবে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আটক ব্যক্তিরা ‘প্রি অ্যাক্টিভেটেড’ ও আগেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত সিম বিক্রি করে আসছিলেন। আদাবর ও শ্যামলী এলাকা থেকে ওই রকম সিমসহ তাদের কয়েকজনকে আটক করা হয়। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের পরও দেশের বিভিন্ন স্থানেই পাওয়া যাচ্ছে আগে থেকে চালু মোবাইল সিম।গত ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেশে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সিম পুনঃনিবন্ধন প্রক্রিয়া চলে। সে অনুযায়ী এখন আর আঙুলের ছাপ না দিয়ে নতুন সিম কেনা যাবে না।ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪ জুন পর্যন্ত মোট ১১ কোটি ৬০ লাখের মত সিম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছে।নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি’র হিসাবে গত এপ্রিল শেষ নাগাদ গ্রাহকের হাতে থাকা মোবাইল সিমের সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ২০ লাখের মত।এ হিসাবে এখনো দেড় কোটির বেশি সিম নিবন্ধিত না হওয়ায় ঘোষণা অনুযায়ী বন্ধ রয়েছে।

তবে গ্রাহকরা ইচ্ছা করলেই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করে সেই সিম উত্তোলন করতে পারছেন।এর বাইরেও সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি দোকানে জাতীয় পরিচয়পত্র ও আঙুলের ছাপ ছাড়াই সিম বিক্রির তথ্য পাওয়ার পর অভিযান শুরুর কথা জানায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি ও পুলিশ।তিনি জানান, আঙুলের ছাপ নিয়ে গ্রাহকদের অজ্ঞাতে অন্য সিম নিবন্ধনের অভিযোগে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা থেকে এয়ারটেলের তিন কর্মকর্তাসহ মোট ২১ জনকে আটক করে পুলিশ।

তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিসি বলেন, এয়ারটেল কর্তৃপক্ষ ব্রিফিং করে এদেরকে প্রতিদিন ৪শ থেকে ৫শ সিম অন্য গ্রাহকের অঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধনের জন্য চাপ দেয়। এর ভিত্তিতেই এয়ারটেলের বেতনভুক্ত কর্মকর্তা ও এজেন্টরা অন্যের ছাপ দিয়ে জালিয়াতি করে হাজার হাজার সিম রেজিস্ট্রেশন করিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এয়ারটেলের কোন স্তরের কর্মকর্তারা এই অবৈধ সিম নিবন্ধনের সাথে জড়িত, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা শুধু এয়ারটেলের অবৈধ সিম নিবন্ধনের প্রমাণ পেয়েছি। পরবর্তীতে আমরা অন্য অপারেটরেরগুলোও খতিয়ে দেখবো।তিনি বলেন, অনিবন্ধিত সিমের চেয়ে নিবন্ধিত সিম বেশি দামে বিক্রি করে এভাবে আঙুলের ছাপ জালিয়াতি করে সিম নিবন্ধন করা হয়েছে বলে আটকরা জানিয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে বিটিআরসির স্পেকট্রাম পরিচালক লেফটেনেন্ট কর্নেল মঈন বলেন, ‘বিটিআরসি আইন অনুসারে এই অবৈধ প্রক্রিয়ায় সিম নিবন্ধনে এয়ারটেল কর্তৃপক্ষের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।তিনি আরো বলেন, আঙুলের ছাপ জালিয়াতির অভিযোগ প্রথমে চট্টগ্রামে পাওয়া যায়। এবার ঢাকাতে পাওয়া গেলো। এই বিষয়টি নিয়ে আমরা পরিচালক পর্যায়ে বৈঠক করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।