স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে শ্বশুরের বাসা থেকে নিয়ে গেছে পুলিশ। আজ শনিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, মিতু হত্যার ঘটনা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে পুলিশ নিয়ে যায় বলে দাবি করেন শ্বশুর মোশাররফ হোসেন। বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে মোশাররফ বলেন, খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মইনুল হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে মতিঝিল জোনের উপকমিশনার (ডিসি) আনোয়ার হোসেন গতকাল দিবাগত রাত ১টা ৫ মিনিটে তাঁদের বাসায় যান। এরপর তাঁরা বাবুল আক্তারকে সঙ্গে নিয়ে যান। তাঁরা বলেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাবুলের সঙ্গে কথা বলতে চান।
মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, ‘আমরা মোবাইল ফোনে বারবার বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেনি। এমনকি ওসিও ফোন ধরেননি।’ এ বিষয়ে জানতে খিলগাঁও থানার ওসি কিংবা মতিঝিলের ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করে ইউএনবি। তবে কল রিসিভ হয়নি। গত ৫ জুন সকালে চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের কোপে নিহত হন বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ব্যাপারে তিনজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করা হয়। এ মামলার বাদী বাবুল আক্তার। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশে দায়িত্বে ছিলেন বাবুল আক্তার। সম্প্রতি এসপি পদে পদোন্নতি পেয়ে তিনি ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে আসেন। ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন তিনি।
মিতু হত্যাকাণ্ডে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের শনাক্ত ও জিজ্ঞাসাবদের জন্য বাবুল আক্তারকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকজন আসামির সামনে মুখোমুখি করে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।’ এসপি বাবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না, বা তাকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এ প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘এখনও বলার সময় হয়নি। শিগগিরই জানতে পারবেন।’
যেহেতু আসামিরা চট্টগ্রামেই আছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথামতো স্বভাবতই তাকে চট্টগ্রামেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে তার শ্বশুর বাড়ি খিলগাঁও মেরাদিয়া ১২০ নম্বর বাসা থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পুলিশের একটি বিশ্বস্তসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বাবুল আক্তারের শ্বশুরও পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এদিকে মিতু হত্যায় সরাসরি জড়িত সন্দেহে আবু মুছা (৪৫) ও এহতেশামুল হক ভোলা (৩৮) নামে দুই ব্যক্তিকে ইতোমধ্যেই আটক করেছে পুলিশের একটি ইউনিট। এরা দু’জনই এসপি বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়াটে খুনি হিসেবে তারা মিতুকে হত্যা করেছে অথবা সাহায্য করেছে। তাছাড়া মিতু হত্যায় যে অস্ত্রটি ব্যবহার হয়েছে, সেটি নাকি বাবুল আক্তরের সোর্স বিভিন্ন সময় ভাড়া দিতো।
এর মধ্যে আবু মুছা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী। অনেক সময় ভাড়াটে খুনি হিসেবেও কাজ করেন। এসপি বাবুল আক্তারের হাতে একবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন তিনি। অন্যদিকে ভোলাও একজন সন্ত্রাসী ছিলেন। এখন তিনি ৩৫ নম্বর বকশিরহাট ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে একাধিক মামলা। বেশ কিছুদিন ধরে দু’জনই বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করছেন। আর এসব বিষয় নিয়েই ডিবি পুলিশ বাবুল আক্তারের সঙ্গে কথা বলবে বলেই জানা গেছে। অবশ্য বাবুল আক্তারকে এ বিষয়ে ডাকলে নিজেই যেতে পারতেন, তাকে এতো রাতে কেন গাড়ি পাঠিয়ে আনা হলো বিষয়টি নিয়ে বেশ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। সন্দেহ দেখা দিয়েছে তার পরিবারেও।
খিলগাঁও থানার ডিউটি অফিসার আব্দুল কাদের বলেন, ‘এটা আমাদের নলেজে নেই। ডিবির কোনো টিম অভিযান চালালে সেটা তো আমাদের নলেজে থাকে না।’ এদিকে রামপুরা থানার ওসি (তদন্ত) সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমিও শুনেছি। তবে নিশ্চিত নই।’ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ, র্যাব, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিআই)। তবে মামলার মূল তদন্তে আছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যদিও সবগুলো সংস্থা মিলে এখন পর্যন্ত এ ঘটনার তেমন কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি।