লিয়নের মেসির রেকর্ড গড়ার দিনে যুক্তরাষ্ট্রকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে কোপা আমেরিকার ফাইনালে পৌঁছে গেছে আর্জেন্টিনা। ৩২ মিনিটে দূর্দান্ত এক কার্লিং ফ্রি-কিকে দলকে দ্বিতীয় গোল উপহার দিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৫৫ আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড গড়েছেন সুপারস্টার মেসি। আর মেসির এই অনবদ্য রেকর্ডের মধ্য দিয়েই হাউস্টোনের এনআরজি স্টেডিয়ামে প্রায় ৮০ হাজার দর্শকের সামনে স্বাগতিকদের আর্জেন্টিনা বধের স্বপ্নও শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে ২৩ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর স্বপ্নে বিভোর মেসির আর্জেন্টিনা এখন দীর্ঘদিনের প্রতীক্ষার অবসান ঘটানোর থেকে আর মাত্র এক ম্যাচ দুরে রয়েছে। এই নিয়ে চলতি কোপা আসরে পাঁচবারের বিশ্বসেরা খেলোয়াড় মেসির গোলসংখ্যা দাঁড়ালো পাঁচ।
বরাবরের মতই মেসি শুধুমাত্র নিজে গোল করেই থেমে থাকেননি, আর্জেন্টিনার প্রথম গোলের মূল কারিগরও তিনিই। ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটের মধ্যেই দূর্দান্ত এক পাসে এজেকুয়েল লাভেজ্জিকে দিয়ে দলকে এগিয়ে দিয়েছেন। এরপর ৫০ মিনিটে গঞ্জালো হিগুয়েইনকে দিয়ে করিয়েছেন তৃতীয় গোল। ম্যাচ শেষের চার মিনিট আগে হিগুয়েইনের দ্বিতীয় গোলেও তার ভূমিকা ছিল। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ গোলের অনন্য এক রেকর্ড গড়া মেসি সতীর্থদেরই এই কৃতিত্ব উৎস্বর্গ করেছেন। ম্যাচ শেষে উচ্ছসিত মেসি বলেন, ‘প্রথম দিন থেকেই আমরা সবাই ভাল খেলেছি এবং ফাইনালে যাওয়াটা আমাদের প্রাপ্য ছিল। রেকর্ড গড়তে পেরে আমি আনন্দিত। আর এটা সম্ভব করে তুলেছে আমার সতীর্থরা। তাদের সাথে খেলতে পেরে আমি সত্যিই দারুন খুশী। এটা আমি তাদের জন্য উৎস্বর্গ করছি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কোচ ইয়র্গেন ক্লিন্সম্যান বলেছেন তার দল আর্জেন্টিনাকে যথাযথ সম্মান দেখিয়েছে বলেই হয়ত একটি শটও আজ নির্দিষ্ট লক্ষ্যে মারতে পারেনি। তিনি বলেন, আমি খেলোয়াড়দেরকে বলেছি এখানে ভয় পাবার কিছু নেই। আমাদের এসব ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের অবশ্যই মাথা উঁচু করে মাঠ থেকে বের হওয়া উচিত। আর্জেন্টিনা কার্যতই একটি বিশেষ দল। নিউ জার্সির ইস্ট রাদাফোর্ডে রোববারের ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ চিলি অথবা কলম্বিয়ার মধ্যে বিজয়ী দল। ২০১৫ সালের কোপা আমেরিকা ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপের পরে বড় কোন টুর্নামেন্টে দুই বছরে এটা আর্জেন্টিনার তৃতীয় ফাইনাল।
ম্যাচের শুরুতেই গোল হজম করে মূলত ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। গোল এরিয়ার মধ্যে অনেকটা ফাঁকায় দাঁড়ানো মেসির প্রথম সুযোগের পাসে মিডফিল্ডার লাভেজ্জি দলকে এগিয়ে দেন। পাঁচ মিনিট পরে এভার বানেগার ব্যাকহিলে মার্কোস রোহো মেসিকে ক্রস করেন। কিন্তু সেই শটে ব্যবধান দ্বিগুন করতে ব্যর্থ হন মেসি। যদিও এজন্য বেশীক্ষন অপেক্ষা করতে হয়নি কাতলান তারকার। যুক্তরাষ্ট্রের বিধ্বস্ত রক্ষনভাগকে ফাঁকি দিয়ে দলের দ্বিতীয় গোল আদায় করে নেয়াটা আর্জেন্টিনার জন্য সময়ের ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। ৩২ মিনিটে দূর্দান্ত এক ফ্রি-কিকে গোল দিয়ে আর্জেন্টিনার হয়ে নতুন এক রেকর্ড গড়েন মেসি।
বিরতির পরে অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ওনডোলোস্কির স্থানে ক্লিন্সম্যান আক্রমভাগে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের তরুন ফরোয়ার্ড ক্রিস্টিয়ান পুলিসিসকে মাঠে নামান। যদিও মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই গোল ব্যবধান বেড়ে দাঁড়ায় ৩-০। আরেকবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যমাঠের ব্যর্থতায় লাভেজ্জি বাম দিক থেকে পেনাল্টি এরিয়ার মধ্যে হিগুয়েইনকে লক্ষ্য করে বল বাড়িয়ে দেন। নাপোলির এই ফরোয়ার্ডের প্রথম শটটি আটকে দেন গুজান, কিন্তু ফিরতি বলে আর ভুল করেননি অভিজ্ঞ এই আর্জেন্টাইন। ম্যাচ শেষের চার মিনিট আগে মেসির সহায়তায় নিজের দ্বিতীয় গোল পূর্ণ করেন হিগুয়েইন।