রাশেদ খান মেনন

কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ‘ক্রসফায়ারে’ জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বলতা বলে মনে করেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে, ‘ক্রসফায়ারে’ জঙ্গি নিহত হচ্ছে।এই ‘ক্রসফায়ার’ জঙ্গি সমস্যার সমাধান নয়।এটি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা ও দুর্বলতা।মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় বিমানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ক্ষমতাসীন ১৪ দলের অন্যতম দল ওয়ার্কার্স পার্টিরও সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ব্লগার হত্যার পর ধর্মের বিরুদ্ধে আঘাত সহ্য করা হবে না ঘোষণা দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ধর্মবিরোধী লেখা খুঁজে বেড়ানোর সমালোচনা করে বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ধর্মের বর্ম পরে জঙ্গিবাদ ঠেকানো যাবে না।

জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় সম্প্রতি কথিত বন্দুকযদ্ধে জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনাকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘দুর্বলতা’ বলেও আখ্যা দেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি। মেনন বলেন, আমরা দেখি যখনই কোনো ব্লগার নিহত হন, তখনই পুলিশ কর্তৃপক্ষ তিনি ধর্মবিরোধী কিছু লিখেছেন কী না সেটা খুঁজে বেড়ান। কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে উচ্চারণ করা হয় ধর্মকে আঘাত করে এমন কিছু সহ্য করা হবে না। এটা ঠিক যে ধর্মবিরোধী কোনো কিছু লেখা উচিত নয়। তেমনি আবার কেউ নিহত হওয়ার পর একথা উচ্চারিত হলে ওই হত্যা জাস্টিফায়েড হয়ে যায়।ধর্মকে বর্ম করে ধর্মের ধ্বজাধারী খুনী জঙ্গিদের বিরত করা যাবে না। বরং তাদের কাছে আত্মসমর্পণই করা হবে।

গতবছর ফেব্র“য়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার পর একই কায়দায় খুন হন অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ওয়াশিকুর রহমান বাবু, ব্লগার অনন্ত বিজয় দাশ, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় নীলয়, অভিজিতের বইয়ের প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন এবং গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমুদ্দিন সামাদ।এর আগে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবিতে ২০১৩ সালের ফেব্র“য়ারিতে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর কয়েক দিনের মাথায় খুন হয়েছিলেন ব্লগার রাজীব হায়দার।অভিজিৎ মুক্তমনা নামে একটি ব্লগসাইট চালাতেন, যেখানে এদের মধ্যে অনন্তও লেখালেখি করতেন।সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন সম্পর্কে মেনন বলেন, সামরিক সরকার এবং বিএনপি-জামায়াতের ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে লড়াই করে অবাধ নির্বাচনের ঐতিহ্য আমরা কায়েম করেছিলাম। কিন্তু এবারের ইউপি নির্বাচন সে ঐতিহ্য ধ্বংস করেছে। আর নির্বাচন কমিশন বসে বসে সেই ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে।নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ওপর গুরুত্বারোপ করে মেনন বলেন, ‘নির্বাচনব্যবস্থা পুনর্গঠন করা না গেলে গণতন্ত্র বিপন্ন হবে। সব অর্জন ব্যর্থ হবে। তাই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ শক্তিশালী করতে হবে। অর্থ আর অস্ত্রের নিয়ন্ত্রণমুক্ত রাখতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলের অর্থবহ সংলাপের প্রস্তাব করেন।

রাশেদ খান মেনন আরও বলেন, দেশে আইএস নেই, তবে তাদের অনুগামী রয়েছে। তারাই গুপ্তহত্যা চালাচ্ছে। তাদের গুপ্তহত্যার শিকার হয়েছেন পুরোহিত, যাজক, বৌদ্ধভিক্ষু, মাজারের খাদেম, পীর, বাউল গবেষক, শিক্ষকসহ সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ। এই আক্রমণ কোনো একক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, সমগ্র বাংলাদেশের ওপর। এই আক্রমণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি সাম্প্রদায়িক আবহ তৈরি করা হচ্ছে। এটি দুর্ভাগ্যজনকভাবে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভেতরে সাম্প্রদায়িকতা ঢুকেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, প্রশাসনের মধ্যেও এর ছাপ পড়েছে। যখনই কোনো ব্লগার নিহত হন, তখনই পুলিশ ধর্মবিরোধী কিছু লিখেছেন কি না খুঁজে বেড়ান। এটা ঠিক যে ধর্মবিরোধী কোনো কিছু লেখা উচিত নয়। তেমনি কেউ নিহত হওয়ার পর ধর্মবিরোধী লেখার বিষয়টি উচ্চারিত হলে ওই হত্যা যথার্থ হয়ে যায়।বিমানমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে, কিন্তু সেটি জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ। বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় শতভাগ পাস ও জিপিএ-৫-এর ছড়াছড়ির যে উচ্ছ্বাস তৈরি করেছিল, তা এখন নিদারুণ উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পরীক্ষাব্যবস্থা ফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। এখান থেকে শিক্ষাব্যবস্থাকে উদ্ধার করে শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে হবে।

নিজের মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান নিয়ে মেনন বলেন, ২০০৭ সালে কোনো প্রকার সমীক্ষা ছাড়াই তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশ বিমান করপোরেশনকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর করে। শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও মন্ত্রণালয়ের এর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অথচ প্রতিটি ক্ষেত্রেই মন্ত্রণালয়কে বিমানের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। বিমান কোম্পানি আইন অনুযায়ী পরিচালিত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি কোম্পানি আইন বা করপোরেশন আইন কোনোটিতেই পরিচালিত হচ্ছে না। অর্থাৎ, বিমানের আইনিশূন্যতা বিরাজ করছে।