তোফায়েল

ক্রেতাদের শর্ত পূরণ না হওয়াসহ নানা কারণে ৭৯০টি তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।সোমবার কুড়িগ্রাম-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম মাঈদুল ইসলামের এক প্রশ্নে তিনি এ তথ্য জানান।বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে পাঁচ হাজার ১৯০টি গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি রয়েছে। এর মধ্যে চার হাজার ৮৩৪টি রপ্তানিমুখী। এসব ফ্যাক্টরি তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে।রপ্তানিমুখী তিন হাজার ৭৪৬টি কারখানার অগ্নি, বৈদ্যুতিক ও ভবনের প্রাথমিক নিরাপত্তা যাচাই সম্পন্ন হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এই যাচাইকালে নিরাপত্তাজনিত কারণে ৩৯টি কারখানা সম্পূর্ণ ও ৪২টি আংশিক বন্ধ করা হয়েছে।২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল ভয়াবহ রানা প্লাজা ধসে সেখানে থাকা পাঁচটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ ১১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।

ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে কারখানার কর্মপরিবেশ ও কর্মীদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনায় আসে। বাংলাদেশ থেকে সস্তায় পোশাক কিনে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে মোটা মুনাফা করলেও শ্রমিকদের পরিস্থিতি আমলে না নেওয়ায় নামি আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলোও সমালোচনায় পড়ে। সেই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের পোশাকের আন্তর্জাতিক ক্রেতারা দুটি সংগঠন তৈরি করে কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা উন্নয়নে চুক্তি করে। সংগঠন দুটি ২০১৩ সালের জুলাই মাসে ৫ বছর মেয়াদে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ, নিরাপত্তা উন্নয়ন ও শ্রমিক সংগঠনগুলার উন্নয়নে কাজ শুরু করে।

মাঈদুল ইসলাম সংসদে বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চান- ক্রেতাদের আরোপিত শর্ত পূরণ না হওয়ায় বা অন্য কোনো কারণে কতগুলো পোশাক কারখানা বন্ধ আছে?জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় উদ্যোগ, অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের তত্ত্বাবধানে রপ্তানিমুখী ৩৯টিসহ অন্যান্য কারণে মোট ৭৯০টি ফ্যাক্টরি বন্ধ রয়েছে।ওয়াসিকা আয়শা খানের প্রশ্নে তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করে ২৫ হাজার ৪৯১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে ২৩ লাখ ৭৬২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে।

সরকারদলীয় সাংসদ এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টিসহ বিশ্বের মোট ৫২টি দেশে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা পাচ্ছে। চিলিতে বাংলাদেশের সব পণ্যর শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে।ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নরওয়ে সুইজারল্যান্ড, জাপান ও তুরস্কে অস্ত্র ও গোলাবারুদ, কানাডায় অস্ত্র, গোলাবারুদ, হাস-মুরগী, দুগ্ধজাত পণ্য ও ডিম এবং ভারতে মাদক ও তামাক জাতীয় ২৫টি পণ্য ছাড়া সব পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার সুবিধা রয়েছে।

এছাড়া ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও আফগানিস্তানে সাফটা ও সাপটা তালিকাভুক্ত পণ্য, আমেরিকায় আট হাজার ৬২০টি, চীনে চার হাজার ৭৮৮টি, দক্ষিণ কোরিয়ায় আট হাজার ৭৭৮টি, থাইল্যান্ডে ছয় হাজার ৯৯৮টি, মালয়েশিয়ায় ২৯৭টি এবং রাশিয়া, বেলারুশ ও কাজাখস্তানে ৭১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে। নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নে তোফায়েল আহমেদ বলেন, মন্দাভাব থাকলেও বাংলাদেশ ইউরোপের ২৮টি দেশে ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত যথাক্রমে ১১ হাজার ৯৫১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার, ১২ হাজার ৭৪০ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন, ১৩ হাজার ৯৭৬ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন, ১৬ হাজার ৪০৩ দশমিক ৮৬ মিলিয়ন এবং ১৭ হাজার ৩৫ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। সবমিলিয়ে ৭২ হাজার ১০৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।