মীর কাসেমের আপিল শুনানি বুধবার পর্যন্ত মুলতবি

মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যু পরোয়ানা প্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ (মজলিসে শুরার সদস্য) ও আলবদর কমান্ডার ব্যারিস্টার মীর কাসেম আলীকে সোমবার গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। আইনী লড়াইয়ের সর্বশেষ ধাপে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালতের রায় ঘোষণার আগেই তাকে গাজীপুর থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হলো।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২এর সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক জানান, মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা আলবদর কমান্ডার ব্যারিস্টার মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্ধি ছিলেন। কারাগারের বন্দি স্থানান্তরের নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সোমবার সকাল সোয়া ৭ দিকে কাশিমপুরের এ কারাগার থেকে পুলিশের বিশেষ প্রহরা ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রিজন ভ্যানে করে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জামায়াতে ইসলামীর ও আলবদর কমান্ডার ব্যারিস্টার মীর কাসেম আলীকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি সুস্থ্য ও স্বাভাবিক আছেন।

এদিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, মীর কাশেম আলীকে বহনকারী প্রিজন ভ্যানটি দুপুরের আগেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে। তাকে এ কারাগারের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, মানবতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামি জামায়াত নেতা আলবদর কমান্ডার ব্যারিস্টার মীর কাসেম আলী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এর ৪০ নম্বর কনডেম সেলে বন্ধি রয়েছেন। একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০১২ সালের ১৭ জুন মতিঝিলের নয়া দিগন্ত কার্যালয় হতে মীর কাসেম আলী গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর থেকে তিনি কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২তে এ পর্যন্ত বন্দি ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালের আগে হাজতবাসকালে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দির মর্যাদায় ছিলেন। পরে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তির পর তাকে ফাঁসির (কনডেম) সেলে পাঠানো হয়।

২০১২ সালে গ্রেফতারের পরের বছর ৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালে তার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের রায় দেয়। একই বছরের ৩০ নবেম্বর ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন এই আলবদর কমান্ডার। চলতি বছরের (২০১৬) ৮ মার্চ দেওয়া রায়ে আপিল বিভাগও তার মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে। বিচারকরা সই করার পর ৬ জুন ২৪৪ পৃষ্ঠার ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। নিয়ম অনুযায়ী, আসামিপক্ষ পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য আবেদন করার সুযোগ পাবে। রিভিউ নিষ্পত্তি হওয়ার আগে দন্ড কার্যকর করা যাবে না। রায়ের সার্টিফায়েড কপি পাওয়ার পর থেকে সেই দিন গণনা শুরু হয়। সে অনুযায়ী আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) জন্য রবিবার (১৯ জুন) আসামিপক্ষ সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন। রিভিউ পিটিশনের রায়ের উপরই নির্ভর করবে দন্ড প্রক্রিয়ার পরবর্তী কার্যক্রম। আইনী লড়াইয়ের সর্বশেষ ধাপে ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আদালত খারিজ করে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারবেন মীর কাসেম আলী। সে আর্জিও নাকচ হলে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ তার ফাঁসির দন্ড কার্যকরের ব্যবস্থা নেবে। তার আগে আসামির সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা সাক্ষাতের সুযোগ পাবেন।